সোমবার তোলা হবে লাশ সব প্রমাণ মুছে রাউধাকে খুন করেছে সিরাত, দাবি বাবার

ক্রাইমবার্তা বিনোদন ডেস্ক:: কোনো ধরনের জটিলতা না হলে আগামী সোমবার মডেল কন্যা রাউধার লাশ কবর থেকে তোলা হবে। রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর মরদেহটি তোলা হবে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি পরিদর্শক আসমাউল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাউধার লাশ উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের চিকিৎসক সংকটের কারণে লাশ তোলা সম্ভব হয়নি।6
এদিকে মডেল রাউধা আফিথের বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ দাবি করেছেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এবং রাউধার গলায় এর চিহ্নও ছিল। রাউধার সহপাঠী ও ভারতের কাশ্মিরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। মোহাম্মদ আথিফ আরও দাবি করেছেন, হত্যার প্রমাণ মুছে ফেলতে রাউধার মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যে তার ইনস্ট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছে সিরাত। সেখানে দুজনের কথোপকথন মুছে ফেলা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজশাহী প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডা. মোহাম্মদ আথিফ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পোস্টমর্টেমের সময় রাউধার এক্সরে করা হয়নি। এক্সরে করা হলে হত্যার চিহ্নগুলো আরও পরিষ্কার হতো। কিন্তু তা করা হয়নি। কারণ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছে। কলেজকে সহযোগিতা করেছে পোস্টমর্টেম পরিচালনাকারী চিকিৎসকরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাউধার সহপাঠী সিরাত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কারণ রাউধার মৃত্যুর এক ঘণ্টা পর তার ইনস্টাগ্রাম (ফটো, ভিডিও ও টেক্সট শেয়ারিং অ্যাপ) হ্যাক করা হয়েছে। সেখানকার কললিস্ট থেকে সিরাতের কথোপকথন মুছে ফেলা হয়েছে। সিরাতের কাছে রাউধার ইনস্টাগ্রাম পাসওয়ার্ড ছিল। তা না হলে এটি সম্ভব নয়। সিরাত রাউধার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তাকে ঘুমের ওষুধও খাইয়েছিলো।’
তবে কেন রাউধাকে হত্যা করা হলো- এ প্রসঙ্গে রাউধার বাবা মোহাম্মদ আথিফ বলেন, ‘এটা বের করার দায়িত্ব পুলিশের। কে ও কারা হত্যা করেছে রাউধাকে এটি বের করার দায়িত্ব পুলিশের। আমি একজন বাবা নয়, চিকিৎসক হিসেবে বলছি, এটা আত্মহত্যা কখনও হতে পারে না।’
এর আগে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ বলেছিলেন, মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাউধাকে জুস খেতে দিয়েছিল তার সহপাঠী সিরাত।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা রাউধার ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে ফেলে। গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড ময়না তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
মৃত্যুর ১২ দিন পর গত ১০ এপ্রিল কাশ্মিরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ। তার মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও হয়েছিল। দুটি মামলারই তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা রাউধার লাশ উত্তোলন করে ফের ময়নাতদন্ত করবেন।
এদিকে রাউধার মৃত্যুর আগে ও পরের দিনের সিসিটিভির ফুটেজ কলেজ কর্তৃপক্ষ দেখালেও ওই রাতের ফুটেজ পাওয়া যায়নি। রাউধার লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ছিল এবং দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে লাশ নামানোর কোনও প্রমাণ কলেজ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাউধাকে ঝুলতে দেখে সিরাত পারভীন একাই লাশ নামিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। এছাড়া মৃত্যুর আগে রাত ১১টার দিকে রাউধা হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিল। তার সঙ্গে সিরাত পারভীনও ছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে রাউধা একাই চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিল।
কলেজের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করছে। আমরা সাধ্যমত তাদেরকে সহযোগিতা করছি। আমরাও চাই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাউধার বাবা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এক্ষেত্রে রাউধার বাবার বক্তব্য তেমন প্রভাব পড়বে না।’
রাউধা মৃত্যুর দুই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে চেষ্টা করছি। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এখন পর্যন্ত কোনও অসহযোগিতা পাইনি। এখানে তদন্ত প্রভাবিত করার কোনও সুযোগ নেই।’

Check Also

সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে দুবলার চরে গেলেন ৪০১জন পূণ্যার্থী

উপকূলীয় অঞ্চল (শ্যামনগর): পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে রাস মেলায় গেছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।