ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি করাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে। যারা খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত ও কাছের নেতা হিসেবে পরিচিত। অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্য দিয়েই তা তৈরি করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ একজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনকালীণ সরকারের রূপরেখা তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন দিক মাথায় রাখতে হচ্ছে। এমন রূপরেখা করা হবে যাতে করে এটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। আর আগে ভাগে জানাজানি না হয়। কারণ আগেভাগে রূপরেখা জানাজানি হয়ে গেলে সেটা আর আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া সম্ভব হবে না। সেই ক্ষেত্রে পুরো পরিশ্রমই ব্যর্থ হবে। এর পাশাপাশি আগেভাগে যদি রূপরেখা ফাঁস হয়ে যায় সেটা দলের জন্যও সমস্যা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা বলেন, এই কমিটি গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করছেন। সেখানে ঠিক কতজন সংখ্যায় আছেন এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ ওই কমিটিতে যে কয়জন আছেন তারাই জানেন। এছাড়া কমিটির নেতাদের মধ্যে কয়েকজন জানেন, দুই একজনের নাম সবাই জানেনও না।
ওই নেতার কাছে কয়েকজনের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী। তিনি এবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন। আর একজন আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, আগে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আর ও একজন আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করলেও সাবেক রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সাবেক আইনমন্ত্রীদের কেউ আছেন কিনা কিংবা স্পিকারদের কেউ আছেন কিনা জানতে চাইলে সূত্র জানায়, সেই রকম কেউ নেই। যারা আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিশেষজ্ঞ।
নির্বাচনকালীণ সহায়ক সরকারের রূপরেখার বিষয়ে কাজ করছেন, এমন একজন নেতার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনও বলার মতো কিছু হয়নি। তাছাড়া বিষয়টি বলবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তার আগে কেউ এনিয়ে কথা বলা যাবে না।
আপনারা কি সংবিধানে সংশোধনী আনার জন্য প্রস্তাব করে নির্বাচনকালীণ সরকারের রূপরেখা দিচ্ছেন নাকি সংবিধানের বিধান বহাল রেখেই নির্বাচনকালীণ সরকারের রূপরেখা দিবেন। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, এখনকার সংবিধানেতো এই সরকারের অধিনেই নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসাবে এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে আমরা যাবো না। আর নির্বাচনকালীণ সরকার এই সরকার রেখে হবেও না। এই জন্য আলাদা করে সরকার করতেই হবে। সেই হিসাবে আমরা যে নির্বাচনকালীণ সরকার দেব সেখানে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়েই সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হবে। কারা কারা সরকারে থাকতে পারেন ও সরকারের থাকার যোগ্যতা কি হবে, ওই সরকারের কর্মকান্ড কি হবে সেটা তুলে ধরা হবে।
নাম প্রস্তাব করা হবে কিনা জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, নাম প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে ওই নামই থাকতে হবে এমন নাও হতে পারে। কারণ নাম যাই হোক না কেন নিদর্লীয়ও নিরপেক্ষ সরকারের অধিনেই তা হতে হবে। এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই তা করা যেতে পারে। আসলে সংলাপ প্রয়োজন। সংলাপের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বিএনপিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে এটা ঠিক হচ্ছে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীণ সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, সেখানে সব কিছুই বলা থাকবে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। এবার নির্বাচনকালীণ সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে। আর আমরা এটা মনে করি সরকার ও আওয়ামী লীগ যেভাবে বলছে বিএনপি না আসলেও তারা নির্বাচন করবে। আসলে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা সরকারের জন্য এত সহজ হবে না। কারণ তারা এর আগে একটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছে। ওই নির্বাচন দেশে বিদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তারা এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা তারা পারেনি। এই অবস্থায় তারা নতুন করে আরও একটি ভুল করবে না। এখন তারা বিএনপিকে যত তুচছ তাচ্ছিল্যই করুক না কেন বিএনপিকে নিয়েই সরকারকে নির্বাচন করতে হবে। এর বিকল্প কিছু করতে চাইলে তা সফল হবে না। জনগন বার বার প্রহসন মেনে নিবে না।
Check Also
ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান
ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির …