ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক:লা লিগার শিরোপা লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে আজকের ম্যাচে রিয়ালের বিপক্ষে জয়ের কোন বিকল্প ছিল না বার্সেলোনার। হেরে গেলে বা ড্র করলে তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে রিয়ালের হোঁচট খাওয়ার অপেক্ষায়। বাঁচা মরার এ ম্যাচে মেসির দুর্দান্ত পারফরমেন্সে শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছেড়ে এনরিকে শিষ্যরা। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে রোববার রাতে রোমাঞ্চকর এক এল ক্লাসিকো ৩-২ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। প্রথমার্ধে কাসেমিরোর গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা ফেরাতে দেরি করেননি ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলা মেসি। দ্বিতীয়ার্ধে ইভান রাকিতিচের দর্শনীয় গোলে অতিথিরা এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা ফিরিয়েছিলেন হামেস রদ্রিগেস। যোগ করা সময়ে দুর্দান্ত শটে মূল্যবান ৩ পয়েন্ট এনে দেন মেসি। পৌঁছলেন বার্সেলোনার জার্সিকে ৫০০তম গোলের অনন্য মাইলফলকে।
সেই কবে এল ক্লাসিকোয় গোল করেছিলেন লিওনেল মেসি। ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে ৪-৩ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। পরে কেটে গেছে আরও ৫টি ক্লাসিকো, কিন্তু গোলের দেখা পাননি মেসি। অবশেষে অধরা গোলটির দেখা পেলেন তিনি। আর এল ক্লাসিকোয় প্রথমবার মেসির গোল উদযাপন দেখলেন বার্সা কোচ লুই এনরিকে।
এল ক্লাসিকোয় সর্বোচ্চ গোলের মালিক মেসি। রবিবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নামার আগে ২১টি এল ক্লাসিকো গোল ছিল তার ঝুলিতে। এদিন যুক্ত হলো আরও একটি। সব মিলিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে মেসির গোল দাঁড়াল ২২টি।
রিয়ালের বিপক্ষে তিন বছর আগে হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতানোর পর পাঁচ ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা। দুই দলই ২টি করে জয় পেয়েছে, আর বাকিটি ড্র। যে ম্যাচগুলোতে আর্জেন্টাইন তারকা ছিলেন ছায়া হয়ে। বর্তমান মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোতে নিজেকে খুঁজে পেলেন মেসি।
রক্ত ঝরছিল মেসির মুখ থেকেতবে তাকে থামানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে রিয়াল। এমনকি রক্তাক্ত হতে হয়েছে মেসিকে। ২২ মিনিটে মার্সেলোর কনুইয়ের ধাক্কায় মুখে আঘাত পান বার্সা ফরোয়ার্ড। রক্ত বন্ধ করতে মুখে টিস্যু নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন মেসি। আধ ঘণ্টা পার হতেই রিয়াল এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর খুদে জাদুকরের জাদু। ৩৩ মিনিটে বুসকেতসের পাসে ডানপ্রান্ত থেকে ইভান রাকিতিচ বল বাড়িয়ে দেন মেসিকে। আর্জেন্টাইন তারকা দ্রুততার সঙ্গে রিয়াল ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে কেইলর নাভাসের শেষ বাধা অতিক্রম করেন। মেসির বাঁপায়ের শট রিয়াল গোলরক্ষকের হাতের নিচ দিয়ে চলে যায় জালে।
এর পর প্রথমার্ধে আরও দুইবার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। প্রত্যেকবার গোলপোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায় বল।
ঘরের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে থাকে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই গোলের সুযোগ পায় রোনালদো। তবে শট নেওয়ার আগেই পড়ে গেলে গোলবঞ্চিত হয় রিয়াল। ম্যাচের ২১ মিনিটে রোনালদোর শট ধরে ফেলেন বার্সা গোলরক্ষক।
ম্যাচের ২৮ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান তারকা ক্যাসেমিরোর গোলে লিড পায় রিয়াল। টনি ক্রসের নেওয়া কর্নার থেকে বল পেয়ে সামনে বাড়ান মার্সেলো। আর তা থেকে রামোসের শট পোস্টে ফিরলেও ফিরতি বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান এই তারকা।
তবে খুব বেশি সময় লিড ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। এর পাঁচ মিনিট পরই মেসির দুর্দান্ত গোলের সমতায় ফেরে বার্সা। রাকিটিকের বাড়ানো বলে কারভাহালকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান আর্জেন্টাইন এই তারকা।
বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয় বার্সা। একের পর এক আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে রিয়াল রক্ষণকে। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে পিকে দুর্দান্ত হেড ফিরিয়ে বার্সাকে গোল বঞ্চিত করেন নাভাস। তবে ম্যাচের ৬৮ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করে রোনালদো। মার্কো আসেনসিওর ক্রসে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন পর্তুগিজ এই তারকা।
পরের মিনিটে ইনিয়েস্তার বাড়ানো বলে কাছ থেকে সুয়ারেসের হাফভলি দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে আবার রিয়ালকে বাঁচান নাভাস। এর চার মিনিট পর গোল করে বার্সাকে লিড এনে দেন ইভান রাকিটিক। তবে এর চার মিনিট পর আর বড় ধাক্কা খায় রিয়াল। মেসিকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে রামোস।
দশজনের রিয়ালকে চেপে ধরে বার্সা। ম্যাচের ৮০ মিনিটে পিকের শট অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে রিয়ালকে ম্যাচ রাখেন নাভাস। তবে ৮৬তম মিনিটে মার্সেলোর ক্রস থেকে বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগেজের গোলে সমতা ফেরায় রিয়াল।
কিন্তু কে জানতো বার্সার হয়ে ৫০০ তম গোলের মাইলফলক এ ম্যাচেই গড়বেন মেসি। ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে দুরপাল্লার শটে শেষ পর্যন্ত নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই তারকা।
এ জয়ে ৩৩ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে বার্সা। আর এক ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্টে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রিয়াল। লিগের বাকি আর পাঁচ ম্যাচ জিতলেই ২০১২ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন হবে রিয়াল।