রানা প্লাজায় নিখোঁজ মা ভিক্ষায় জীবন চলছে প্রতিবন্ধী সিফাতের

ক্রাইমবার্তা রিপোট:দেশ-বিদেশের আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত শ্রমিক ডালিয়ার প্রতিবন্ধী শিশুপুত্রের দিন চলে এখন দাদীর সঙ্গে ভিক্ষা করে। একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার জন্য রানা প্লাজার ষষ্ঠ তলায় ইথার টেক্স কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন ডালিয়া। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস রানা প্লাজা ধসে ভবনের নিচে চাপা পড়েন ডালিয়া। সেই সঙ্গে ডালিয়ার স্বপ্নটাও চাপা পড়ে যায়। ধসে পড়া রানা প্লাজার নিচ থেকে অনেকের লাশ উদ্ধার হলেও  নিখোঁজ ডালিয়ার লাশ খুঁজে পায়নি উদ্ধারকারী দল।

তিন বছর বয়সী শিশু সিফাতের দিন এখন দাদির সঙ্গে ভিক্ষা করেই চলছে। দাদি শিরিন জানান, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় অনেক লোকের প্রাণহানি হয়েছে। উদ্ধারকারীরা অনেকের লাশ উদ্ধার করতে পারলেও আমার ছেলের বউ ডালিয়াকে উদ্ধার করতে পারেনি। তাই আমি ক্ষতিপূরণও পাইনি। যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা অনেকেই ক্ষতিপূরণ পেয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু আমার ছেলের বউ ডালিয়ার লাশটি খুঁজে না পাওয়ায় আমি কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। ডিএনএ পরীক্ষা করিয়েও শেষ পর্যন্ত কবরটি সনাক্ত করা যায়নি। আমার ছেলে স্বপন গাড়ি চালাত। রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় বউ মারা যাওয়ার পর ছেলে আমার মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। একমাত্র নাতি সিফাত (৪) সেও প্রতিবন্ধী। রানা প্লাজা ধসের পর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে জানতে পারি ডালিয়ার মা-বাবা ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে গেছে। তাই আমাকে কেউ কোনো সহায়তা করেনি। ক্ষতিপূরণ নিয়ে আর নাতি সিফাতের কোন খোঁজখবর নেয়নি তারা। আমি নিজে অসুস্থ আর ভারসাম্যহীন ছেলে এবং প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে কোনোরকমে মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে খেয়ে-না-খেয়ে দিন কাটছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, আর কতদিনই বা বাঁচবো। সরকার যদি সিফাতের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতো তাহলে আমি মরেও শান্তি পেতাম বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদি শিরিন বেগম। সিফাত অবুঝ কোনো কিছুই বোঝে না। শুধু এমনভাবে তাকিয়ে থাকে মনে হয় তার অবুঝ দুই চোখ কাকে যেন খুঁজছে। দাঁড়াতে পারে না হাঁটতেও পারে না। তার ঠোঁট দিয়ে ঝরছে শুধু লালা। তার দাদির প্রশ্ন কী দোষ ছোট্ট সিফাতের। যেখানে তার লেখাপড়া করে মানুষের মতো বেঁচে থাকার কথা ছিল, সেখানে অবহেলায় অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকতে হচ্ছে সিফাতকে। রানা প্লাজা ভবন ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নাকি অনেক এতিম শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে। তারা কি সিফাতকে দেখেন না? সরকার অনেক লোককে সহায়তা দিচ্ছে একটি প্রতিবন্ধী শিশুর কি কোনো নাগরিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার নেই। তাহলে কেন সিফাতকে অন্যের দয়ায় বাঁচতে হবে। এটাই দাদির প্রশ্ন।

 

Check Also

সন্ধ্যায় আবারো সড়ক অবরোধ তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করায় আবারো সড়ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।