ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়ে চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে, যার কারণে এখন বকধার্মিক সাজছে।
আজ সোমবার সকালে সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, হেফাজতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরীহ ছাত্র ও আলেমদের ওপর পৈশাচিক রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, তা দেশব্যাপী মানুষ ভুলে যায়নি। বিশেষ নজরদারির নামে সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত করে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা পুলিশরা দমন-পীড়ন করে হয়রানি ও জুলুম করেছে, তা নজিরবিহীন। এখন আবার সরকার সেই হেফাজতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে চাচ্ছে শুধু ভোটের জন্য।
এটা বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ও সরকারপ্রধানের আপসকামী অনৈতিক রাজনীতির এক কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, অতীতেও বর্তমান সরকারপ্রধান ধর্মীয় লেবাস পরিধান করে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছেন। ভোট শেষ হওয়ার পরে লেবাস খুলে স্বমূর্তি ধারণ করেছেন। তাঁর এই দ্বিচারিমূলক রাজনীতি যাতে কেউ ধরতে না পারে, সে জন্য দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযান চলছে।
রিজভী জানান, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেসব সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি করেছেন, সেটি নিয়ে সারা দেশের মানুষ ক্ষোভে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে তাচ্ছিল্য করে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেওয়ার জন্য দেশবাসী এই ভোটারবিহীন সরকারকে ধিক্কার জানাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক চুক্তিতে গোটা জাতির নিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের কাছ থেকে একটি সরিষার দানাও আদায় করতে পারেননি বলেও দাবি করেছেন রিজভী। তিনি বলেন, তিস্তার এক বালতি পানি পাওয়ারও গ্যারান্টি পাননি। কূটনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শনের বদলে প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশ বেচা-বিক্রির খেলায় মেতে উঠেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারতে ব্যর্থ সফরে জনমনে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর জান্তব হিংস্রতায় সরকারি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকাগুলোতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে বয়ে আসা পানির ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা এখন হাহাকার করছে বলে জানান রিজভী।
রিজভী বলেন, ধানক্ষেতগুলো পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে। হাজার হাজার টন মাছ ও জলজ প্রাণী পচে গিয়ে সারা এলাকা এক বীভৎস পুঁতি দুর্গন্ধময় পরিবেশে মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। লাখ লাখ মানুষের ঘরে খাবার নেই। ধানক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসলের মৌসুমে কৃষকের গোলা ধানে ভরে উঠবে না।
রিজভী অভিযোগ করেন, হাওরের জনগণের দুর্দশা লাঘবে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, এই অকাল বন্যার পানির সঙ্গে উজানের ইউরেনিয়াম খনির বর্জ্য ভেসে আসার ফলে জলজ প্রাণীর মড়ক লেগেছে। এ বিষয়ে সরকার যে তদন্ত করছে, তাতে পানি পরীক্ষা ছাড়াই বলা হচ্ছে, পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয়তা নেই। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তই জনগণ বিশ্বাস করে না। পার্শ্ববর্তী দেশের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এতই অকৃত্রিম বন্ধু যে, এই দেশের প্রতি ভারতের কোনো অন্যায়কেই এরা অন্যায় বলে মনে করে না।
পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতেই দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিএনপিনেতা রিজভী।