ক্রাইমবার্তা রিপোট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আর বেশি সময় নেই। আগামী বছরের ১৭ অক্টোরের পর থেকে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির মধ্যে যে কোন দিন নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসাবে সরকার ও সরকারি দল হিসাব নিকাশ করছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছে। তারা নির্বাচনের জন্য প্রাক প্রস্তুতি শুরু করছে। তারা ডিজিটাল ভোটিংয়ের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করছে। অন্য দিকে কমিশন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে। পাশাপাশি সব দলকে নির্বাচনে আনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করবে।
এদিকে নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটও বসে নেই। তারাও তাদের মতো করে জোটের ঐক্য ধরে রেখে এগুচ্ছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে জোটের আকারও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আলাদা আলাদা করেও নির্বাচনের জন্য প্রাক প্রস্তুতি হিসাবে যেসব কাজগুলো করা দরকার তা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিটি জেলায় কর্মিসভা, বর্ধিত সভা ও সমাবেশ করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আমরা সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবো।
বিএনপির অভিযোগ, মাঠে সমাবেশ করতে না পারলেও তাদের দলের সাংগঠনিক ভীত মজবুত করতে শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে ও সরকার তাদেরকে সমাবেশ করার অনুমিত না দেওয়ার কারণে চেষ্টা করলেও এবং পরিকল্পনায় থাকলে তা করতে পারছেন না। বিএনপি এখনও নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতির মাঠে সরাসরি না নামতে পাড়ার কারণে তারা আস্তে আস্তে এগুচ্ছে।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নিয়ে কাজ করার জন্য। বৈঠকও চলছে। ঢাকায় এইসব বৈঠক হচ্ছে। এদিকে বিএনপির ৫১জন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিকভাবে দলকে দৃঢ় করার জন্য। তারা সাংগঠনিকভাবে আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে ৭৫টি বিএনপির সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন। সেখানে কর্মীসভা ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদারের উদ্যোগ নিবেন। মাঠের নেতাদেরও এই বিষয়ে দিক নির্দেশণা দিবেন। বিএনপির রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে দেশের সব জেলায় কর্মী সভা করা হবে। সেখানে দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী দিনের করনীয় ও জাতীয় রাজনীরি বিষয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ৭৫ সাংগঠনিক জেলা সফর শেষ হলে নেতাদের মধ্যে একটা চাঙ্গা ভাব তৈরি হবে। তাদেরকে দিক নির্দেশণাও দেওয়া হবে কি করতে হবে সেই জন্য। এরপর গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হবে। কারণ আমরা চাইছি শান্তিপূর্ণ ভাবেই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। বিএনপির পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের দলগুলোও এই ব্যাপারে কাজ করবে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিতে থাকবে এর পাশাপাশি তারা দলকে ও জোটকে আরও সুসংগঠিত করবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আর সেটা হবে বর্তমান সরকারের অধিনেই। তারা মুখে যাই বলুক না কেন, তারা যেতে নির্বাচনে যেতে চায় সেটা স্পষ্ট। বিএনপি নির্বাচনে আসবে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগ এগুচেছ।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীও দলের নেতাদের দায়িত্বশীল নেতাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই এগুতে হবে। আর সেই জন্য দলকে প্রস্তুত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে যাবে ধরে নিলেও শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে নাও যেতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। সেই হিসাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ও তৃণমূলের নেতাদের অনেকের মধ্যে এনিয়ে সংশয় রয়েছে। সেই কারণে তারা এখনও ঠিক করতে পারছেন না নির্বাচনকালীন সময়ে দলের প্রস্তুতিটা কেমন হবে। বিএনপি নির্বাচনে থাকলে এক রকম হবে আর না থাকলে, আরেক রকম হবে। তবে এটা নিয়ে আগে ভাবার চেয়ে সব দল নির্বাচন করবে সেই হিসাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সব দিক মাথায় রেখেই কাজ করছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হবে। নির্বাচনের চূড়ান্ত সময় ঠিক কখন হবে এটা ঠিক হতে সময় লাগবে। সময় আগামী বছরের শেষ ধরেই প্রস্তুতি রাখতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বেশ কয়েকটি জেলা সফর করেছেন। সেখানে নিজ দলের পক্ষে ভোটাও চেয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী অফিসও শুরু করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদকও সভা করছেন।
নির্বাচনে কবে নাগদ হতে পারে জানতে চাইলে সংসদে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্তমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়ে হবে। নির্বাচন আগাম করার মতো কোন পরিস্থিতি হয়নি। আবার প্রয়োজনও নেই। বর্তমান সংবিধানের আলোকে এই সরকারের অধিনেই নির্বাচন হবে। বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হলে সব জেনে শুনেই আসতে হবে। তারা নির্বাচনে না আসার জন্যতো আর সরকার দায়িত্ব নিবে না। তাদের কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন কোন বিধান করা হবে না।
আওয়ামী লীগের এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তাদের সবাই প্রার্থী হচেছন কিনা তা এখনও নিশ্চিত না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে আসলে সেই ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি আলাদা করে নির্বাচনে অংশ নিবে নাকি জোটের ব্যানারে যাবে তাও নিশ্চিত হয়নি।
জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিব। আগামী নির্বাচনে আমরা নিজস্ব ব্যানারে নির্বাচন করবো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটের ব্যানারে নয়। চেষ্টা চলছে আলাদা জোট করারও। সেই হিসাবে প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে ও সরকার গঠন করবে।
৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারে এমন নেতা কি তার দলে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, আছে। তিনি বলেন, দুই দলের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। এই কারণে জনগণ আগামী দিনে জাতীয় পার্টির উপরই ভরসা রাখবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের এখন যারা মন্ত্রী পরিষদে ও সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সবাই আগামী দিনে মনোনয়ন পাবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ বিএনপি নির্বাচনে এলে অনেক হিসাব নিকাশ করেই প্রার্থী দিতে হবে। এছাড়া যারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে নতুন যারা, তাদের আসনে বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী দিলে ওই সব আসনে তাদেরকে প্রার্থী করা হবে কিনা, নাকি অন্য প্রার্থী দেওয়া হবে, সেই হিসাবেও হিসাব নিকাশ করেই কাজ করা হবে।
সরকারের একটি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় যেতে পারবে না মনে করে নির্বাচনের বাইরে থাকে তাহলেতো আর হবে না। তাদেরকে এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে এসেই তাদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে হবে। তাদের যদি এতই জনপ্রিয়তা থাকে তাহলে এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে আসতে সমস্যা কোথায়? আসলে বিএনপি ভরসা পাচ্ছে না। কারণ তারা জানে যে দশ বছরে জনগণের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। চাইলেই ক্ষমতাসীন হতে পারবে না । সেই জন্য নিদর্লীয় সরকার চায়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান্য অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, আওয়ামী লীগই নিজেই ভয় পাচ্ছে। কারণ তারা জানে যে ফ্রি ফেয়ার ও ক্র্যাডিব্যল ইলেকশন দিলে কোনভাবেই আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট সরকারে আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির নিবাচন করে প্রমাণ করেছে, তাদের অধিনে আর কখনও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। প্রয়োজনেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতেই হবে। তা করতে না পারলে ৫ জানুয়ারি একতরফা ও বিনা ভোটের যে প্রহসন করেছে ওই বদনাম ঘুছাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের উচিত হবে না আবার ৫ জাুনয়ারির পুনরাবৃত্তি ঘটানো। তাই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক, জনগণ ভোটের ফল নির্ধারণ করে দিবে।
Check Also
আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …