ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাণীশংকৈল প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের লোকমান আলী বিশ্বাস, যুদ্ধকালিন প্রশিক্ষক কলিমদ্দীন ওরফে কালু কমান্ডার সহ স্বাধীনতা পক্ষের ৮ জন আজো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি। উপজেলার কাশিপুর ঝাড়বাড়ি গ্রামে বাঁশ বাগানে চিরনিদ্রায় শায়িত এই যোদ্ধারা। সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভুষিত করছেন এমন সময়ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না মিললেও পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসি ৮ যোদ্ধার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আল্লাহ পাকের দরবারে নিয়মিত দোয়া খায়ের করেন।
পাক সেনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুবকদের যুদ্ধকালিন প্রশিক্ষণ নিতে কেউ সহযোগিতা করেছেন , আবার কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যুবকদের। এমন খবর স্থাণীয় দালালদের মাধ্যমে জানতে পেরে চেকপোষ্ট থেকে ফজলু মন্ডলের ছেলে লোকমান বিশ্বাস, জগদল থেকে পয়চু সরকারের ছেলে কলিমদ্দীন সরকার ওরফে কালু কমান্ডার, রমেশের ছেলে খলিফউদ্দীন, আকালু ধনীর ছেলে দবিরউদ্দীন, হশরত মোহাম্মদের ছেলে আমির উদ্দীন, সমশের আলী, ছমরু মোহাম্মদ ও জাফর আলীর ছেলে নিজাম উদ্দীনকে ধরে আনে ঝাড়বাড়ি গ্রামে। পাক বাহিনী গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের চোখ বেঁধে গুলি করে মেরে ফেলে। দুই তিন জন বেঁচে থাকলেও সবাইকে কবর দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান আলী বলেন, যখন এই আটজনকে ধরে এনে গুলি করে মারে আমি পাশেই জঙ্গলে প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে ছিলাম। এদের একজনকে গুলি করার পরে বেঁচে ছিল। সে পানি খাওয়ার জন্য পানি পানি বলে ছটপট করছিল। তাকে পানি দেওয়া হলো কিন্তু তার আগেই খাদ্য নালিসহ পেট কেটে দেওয়া হয়েছিল। খাওয়ার সাথে সাথে পানি পেটে না গিয়ে বাইরে পড়ে গেল। এমন দৃশ্য দেখে আমি কিছুক্ষণ দিশেহারা হয়ে থাকি। সরেজমিনে গ্রামের মানুষগুলো ছুটে এসে হাউ মাউ করে এমন করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন।
জগদল গ্রামের কালু কমান্ডারের ছেলে আঃ রহিম (৬৮) জানান, লোকমান বিশ্বাস এলাকার যুবকদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিয়ে আসতেন আর আমার বাবা তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। সামগঞ্জ পুকুর পাড়ে পাক বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। স্থাণীয় দালালদের সহযোগিতায় ৮ জনকে এক সাথে ধরে ঝাড়বাড়ি গ্রামের এনে গুলি করে মেরে ফেলে। খবর পেয়ে কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা ছুটে আসি। ততক্ষণে হায়েনার দল পালিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান (লাল মুক্তিবার্তা ০৩১০০৪০০৩২)’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, লোকমান বিশ্বাস আমাকে কালু কমান্ডারের কাছে ট্রেনিং করার নিয়ে আসেন। জগদলে কালু কমান্ডার’র কাছে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। পাকিস্থানী সেনারা একদিন লোকমান বিশ্বাস, কালু কমান্ডার, খলিফ উদ্দীন, দবির উদ্দীন সহ আট জনকে ধরে এনে ঝাড়বাড়ি গ্রামে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় আমরা খবর পেয়ে আসার আগেই এদেরকে গুলি করে মেরে চলে গেছে। পরে সামগঞ্জ পুকুর পাড়ে তাদের ক্যাম্প আমরা দখল করে শত্রুদের হাত থেকে এলাকা মুক্ত করি।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও এই যোদ্ধারা আজো রাষ্ট্রীয় মর্যাদার স্বীকৃতি পাননি। পরিবারের লোকজন সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানদের সহযোগিতা চেয়ে তা পাননি নিষ্ফল হয়েছেন। প্রকৃত ইতিহাস তথ্যাদি সত্যতা যাচাই করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্তির জন্য সরকারের সুদৃষ্টির জোর দাবি পরিবারের লোকজনের।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন কমান্ডার
রাণীশংকৈল প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আফতাবউদ্দিন সঠিকতা বুঝতে পেরে বুধবার মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লাগামহীনভাবে নিয়ম বহির্ভূত কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তার সকল অপরাধমূলক কাজের যথেষ্ট প্রমান মিললেও অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে তার চক্রান্ত থেমে থাকছেনা। তার সকল অপকর্মের বিরোধীতা করায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার নামে তালিকা প্রকাশ করা, মুক্তিযোদ্ধা সনদ এনে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, জাল সনদ এনে দেওয়ায় কয়েকজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা, বিরঙ্গণাদের ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নিষ্ফল প্রচেষ্টা, অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের সংগঠিত সংগঠন রাহবার সভাপতি থাকা কালিন সময়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের কারণে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া অভিযুক্ত করে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা প্রকাশ করে। যাদের লাল মুক্তিবার্তা, বাংলাদেশ গেজেট ও সামরিক গেজেট নম্বর রয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী, মোঃ পসির উদ্দিন, মোঃ সোলেমান আলী, মোঃ মহসীন আলী, মোঃ বদরুল ইসলাম, এ.এ. নজরুল ইসলাম, মোঃ মজিবর রহমান’র নাম প্রত্যাহার করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩১০০৪০১৪৬, একেএম হায়দারুজ্জামান গেজেট ১৬০৯, হবিবর রহমান মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩১০০৪০১৪৯, শহীদ সালেহ মোহাম্মদ আনসার মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩১০০৪০১০৩ এমন ২০ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রকাশ করে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠায় সিরাজ কমান্ডার। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এমন হীনো কাজ করে।
তার প্রকাশিত তালিকায় স্বাক্ষরিত ধর্মগড় ইউনিয়ন ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার/আহবায়ক আফতাবউদ্দিন জানান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল সাহেব আমাকে ভুল বুঝিয়ে প্যাডে তারিখ বিহীন একটি নামের তালিকা যুক্ত কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে তালিকার ফটোকপি সংগ্রহ পূর্বক জানতে পারি উক্ত কাগজে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা ছিল। কিন্তু তালিকাভুক্তগণ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের পক্ষে যাদের বিশাল অবদান আছে। গত ১৯ এপ্রিল’১৭ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম সম্বলিত দাখিলী দরখাস্তখানা প্রত্যাহারের জন্য এবং প্রৃতারকের সুবিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দরখাস্ত দাখিল করেছি।
এছাড়াও নায়েক মোঃ আলিমউদ্দিন পিতা মৃত তাজুমদ্দিন ৩৯৩৯৬৮৩ সেনা গেজেট ১১৭৮৬ ও হাবিলদার মোঃ আসিরউদ্দিন পিতা মৃত সিরাজউদ্দিন ৩৯৪৫৯৬৯ সেনা গেজেট ১১৭৭৯ গণের মৃত্যুকালে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার জন্য সিরাজুল কমান্ডার মৃতের পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবির টাকা না দেওয়ায় রাষ্ট্রীয় তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ। ভুয়া সনদ এনে দেওয়ার জন্য কমান্ডারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে ৪টি মামলা চলমান রয়েছে।