ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আর মাত্র সাত দিন। ৭ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা। লড়াই করতে যাচ্ছেন চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের মেরি লি পেন আর মধ্যপন্থি এল মার্সি (এগিয়ে চলোর) ইমানুয়েল ম্যাক্রন।
প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৩ এপ্রিল। তাতে ২৪.০১ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন ম্যাক্রন। ২১. ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন লি পেন। ২০০২ সালে মেরি লি পেনের পিতা জ্যাঁ মেরি লি পেন দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে পরাজিত হন।
প্রথম দফায় লড়াই করা মোট ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে তারাই প্রথম ও দ্বিতীয়। ফ্রান্সের নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো একক প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ, ৫০ শতাংশের উপর ভোট না পেলে দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখি হতে হয়।
ফ্রান্স বিশ্বের প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয়তম শক্তিশালী দেশ। সেই বিবেচনায় তাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল সারা বিশ্ব। মিডিয়া ফ্রান্সের নির্বাচনের উপর কেমন প্রভাব ফেলছে তারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে এখন।
প্রথম দিকে স্বাভাবিকভাবেই লি পেন মিডিয়ার বেশি সমর্থন পেয়েছিলেন। তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে চেনাজানা প্রার্থী। তার পিতা জ্যাঁ মেরি লি পেন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা, ২০১১ সালে তিনি মেয়ের হাতে দলের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মুসলিম বিদ্বেষী কথাবার্তা বলে তিনি প্রথমে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সমর্থ হয়েছিলেন।
তার বাবাও এক সময় মুসলিম বিরোধী কথাবার্তা বলতেন। বিশেষ করে ইহুদি-বিদ্বেষী কথা বলার জন্য তিনি তো খুবই সমালোচিত ছিলেন। মেরি লি পেন ইহুদিদের এবার আক্রমণ না করলেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
ট্রাম্পের সুর নকল করে বলেছিলেন মুসলিম অভিবাসীদের ঠেকাতে তিনি প্রয়োজনে ইউরোপ ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেবেন। এইসব লোক দেখানো জনপ্রিয়তাবাদ অনেককে আকর্ষণও করেছিল। কিন্তু, আবার, ফ্রান্সের গণতন্ত্রমনা লোকজন তা ফ্যাসিবাদেরই নতুন রূপ দেখে ভীত হচ্ছিলেন। তারা আর যাই হোক, ট্রাম্পের মতো লোকরঞ্জনবাদ চাননি।
তখন প্রায় হঠাৎ করেই আবির্ভূত হলেন ম্যাক্রন। ঠান্ডা শান্ত সুরে তিনি বললেন, বামপন্থি ডানপন্থি করে দেশটাকে দুভাগ করার কোনো মানে হয় না। ধর্মীয় উগ্রতা না ছড়িয়ে আমাদের উচিৎ এক হওয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতিও তিনি ছিলেন না।
তরুণ-প্রজন্ম তার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং প্রথম সারির সংবাদমাধ্যগুলো তাকে সমর্থন দিতে থাকে। আর তাই, খুব দ্রুত প্রায় বহিরাগত হিসেবে রাজনৈতিক মাঠে আসা ম্যাক্রন লি পেনকে পাশ কাটিয়ে একটা গোল দিয়ে দিলেন।
ম্যাক্রনের আগে তেমন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। ফ্রাসোয়াঁ ওলাদের সরকারের সময় তিনি ছিলেন খন্ডকালীন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, আর তার আগে ছিলেন ব্যাংকের বিনোয়োগকারী। ২০১৪ সালে তিনি তার দল এল মার্সি (এগিয়ে চলো) গঠন করেন।
এখন তার উদারনৈতিক মনোভাবের জন্য ফ্রান্সের প্রধান সারির দৈনিকগুলো তাকে সমর্থন দিচ্ছে। ফ্রান্সের বিখ্যাত মিডিয়া বিশ্লেষক ড্যানিয়েল স্লাইডারম্যান বলেছেন, ফ্রান্স চায় এখন এক হতে আর তাদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে, আর দেখতে দেখতেই তারা ট্রাম্পের লোকরঞ্জনবাদকে ব্যর্থ হয়ে যেতে দেখেছে, তাই তারা দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ম্যাক্রনের পক্ষে। আশা করা যাচ্ছে দ্বিতীয় দফায় ম্যাক্রন আরো এগিয়ে যাবেন।
শুধু প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো নয় ফ্রান্সের প্রধান বিরোধীদলগুলোও এখন ম্যাক্রনের পক্ষে। বিশ্ববাসী অনেকটা এই প্রত্যাশা করেই বসে আছে যে ম্যাক্রনই হচ্ছেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
আর তাহলে এটা শুধু ম্যাক্রনে একার জয়ই থাকবে না, হঠাৎ করে জেগে উঠা লোকরঞ্জবাদের বিরুদ্ধেও এক প্রধান জয় হবে। ম্যাক্রন প্রেসিডেন্ট হলে প্রমাণ করবেন পৃথিবী থেকে এখনো সুষ্ঠ গণতন্ত্র হারিয়ে যায়নি । আর মিডিয়ার সমর্থনে অনেককিছুই রাতারাতি বদলে যেতে পারে। আল জাজিরা
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …