ক্রাইমবার্তা রিপোট:চট্টগ্রাম পুলিশের পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী (ডানে) ও তাঁর স্ত্রী।
নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি চট্টগ্রাম পুলিশের পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরীর গ্রেপ্তার দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী। শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী নাছরিন আক্তার রুমা।
স্ত্রীর মামলার পর রেফায়েত উল্লাহকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা রেফায়েত উল্লাহর দাবি, স্ত্রীকে তিনি গত জানুয়ারিতে তালাক দিয়েছেন। তবে স্ত্রী এ বিষয়ে কোনো কাগজ পাননি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
নাছরিন আক্তারের ভাষ্যমতে, তাঁর স্বামী চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বর্তমানে পুলিশের পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করার পর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য নিয়মিত চাপ দিচ্ছে পুলিশ।
লিখিত বক্তব্যে নাসরিন আক্তার বলেন, তাঁদের ১৮ বছরের সংসার জীবনে দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ পটিয়া থানার ওসি থাকার সময় মাদক ব্যবসা ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একই সঙ্গে হ্যাপী চৌধুরী নামের এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলে তাঁকে নির্যাতন করা হয়।
নাসরিন বলেন, পরকীয়ার ঘটনা শোনার পর তাঁর বৃদ্ধ বাবা চট্টগ্রামে যান। বাবার সামনেই স্বামী তাঁকে নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় হতবাক হয়ে তাঁর বাবা চট্টগ্রামে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে তিনি বাবার লাশ নিয়ে খুলনায় যান। তিনি খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন। অভিযোগ করেন পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছেও। তারপরও কোনো প্রতিকার পাননি। তাই নিরাপত্তার জন্য তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
নাসরিনের অভিযোগ, বিয়ের আগেও তাঁর স্বামীর নারী কেলেঙ্কারি ছিল। সাতক্ষীরা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকার সময় একাধিক নারীর সঙ্গে তাঁর পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। যশোর কোতোয়ালি থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) পদে দায়িত্ব পালনের সময় একজন নারীর সঙ্গে কেলেঙ্কারির ঘটনা তিনি নিজে উপস্থিত থেকে মিটিয়ে দেন। তবে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তখন ওই সব মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন। এখন তাঁর দুই মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাঁর নামে কুৎসা রটাচ্ছেন রেফায়েত।
পুলিশ কর্মকর্তার ওই স্ত্রী বলেন, তিনি চেয়েছিলেন, বিপথে যাওয়া তাঁর স্বামী ফিরে আসুক। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও সেটা সম্ভব হয়নি। বরং এখনো হ্যাপিকে নিয়ে তাঁর স্বামী ফুর্তি করে যাচ্ছেন। তাই কোনো উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত আদালতের আশ্রয় নেন। গত ১৮ জানুয়ারি খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। ওই মামলায় ট্রাইব্যুনাল গত ৭ মার্চ তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন জানিয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, রেফায়েত উল্লাহ খুলনায় গিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এমনকি ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে বলেছেন, ‘যদি আমাকে জেলে যেতে হয়, তাহলে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুর মতো কাহিনী বানিয়ে ছাড়ব।’
সংবাদ সম্মেলনে নাসরিন বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁকে হত্যার জন্য পাঁচ লাখ টাকায় সন্ত্রাসী ভাড়া করেছে। এ ঘটনা জানার পর তাঁর ভাইয়েরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার আরো বলেন, একজন সামান্য পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর চাকরি জীবনের অল্প সময়ের মধ্যে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, ফ্ল্যাটসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এর পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাঁর স্বামীর বৈধ সম্পত্তির উৎস খুঁজে বের করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি নারী নির্যাতনকারী রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পুলিশের পরিদর্শক রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্ত্রীকে তিনি তালাক দিয়েছেন গত জানুয়ারিতে। তাঁর স্ত্রী নিজেই পরকীয়ায় জড়িত, তিনি নন। স্ত্রীকে নির্যাতন করেননি বলেও দাবি করেন তিনি।