১৫ কোটি টাকার ইউরিয়া সার উধাও!

ক্রাইমবার্তা রিপোট:: দেড় হাজার কোটি টাকার ইউরিয়া সারের হদিস নেই বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থায় (বিসিআইসি)। এ নিয়ে অডিট আপত্তি তুলে চরম বিপাকে আছেন সংশ্লিষ্ট অডিট কর্মকর্তা। প্রথমে তাঁকে প্রধান কার্যালয় থেকে চট্টগ্রামে ডিএপি সার কারখানায় বদলি করা হয়। তার পরও ক্ষান্ত হয়নি কর্তৃপক্ষ। উত্থাপিত অডিট আপত্তি পরিবর্তন করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ওই কর্মকর্তার ওপর। অভিযোগ উঠেছে, তিন লাখ ২৫ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের হদিস না পাওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ।7
বিসিআইসির সহকারী প্রধান নিরীক্ষক এ এস এম আনোয়ার আল সাদাত গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি তোলেন। অডিটে ধরা পড়ে এক হাজার ৫১৫ কেটি ৮৩ লাখ টাকা মূল্যের তিন লাখ ২৫ হাজার ৩২১ টন ইউরিয়া সার ট্রানজিটের নামে স্টোরেজ হয়নি। এর সঠিক হিসাব বিসিআইসিতে সংরক্ষিত হয়নি উল্লেখ করে আপত্তি উপস্থাপন করা হয়।
অডিট আপত্তিতে বলা হয়, ওই সারের বিষয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি, যা গুরুতর অনিয়ম। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদানসহ জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
বিসিআইসির বিপণন বিভাগের নথিতে ‘স্টোর ইন ট্রানজিট’ উল্লেখ থাকলেও এর সঠিক কোনো বর্ণনা নেই। কোন পরিবহন ঠিকাদারের কাছে কী পরিমাণ সার ‘স্টোর ইন ট্রানজিট’ হিসেবে মজুদ আছে তার কোনো সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করা হয়নি। এ ছাড়া কোন বাফার গুদামের অধীনে কী পরিমাণ সার ‘স্টোর ইন ট্রানজিট’ হিসেবে আছে তারও কোনো সঠিক হিসাব নেই।

সার ট্রানজিটে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিআইসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) মো. আবদুল হাই মোবাইলে ফোনে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছি। পরে যোগাযোগ করুন। ’ পরে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ইউরিয়া সারের গড় আমদানি মূল্য প্রতি টন ৫৮২ দশমিক ৪৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ‘স্টোর ইন ট্রানজিট’ নামের হদিসবিহীন সারের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার ৫১৫ কোটি ৮৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসির ওয়েবসাইটের ডিজিটাল সার মনিটরিং পেজে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী ওই সময়ে আরো বেশি সার ট্রানজিটে ছিল।
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল বিসিআইসির ওয়েবসাইটের একই পেজে দেখা যায়, দেশজুড়ে সার ট্রানজিটে আছে দুই লাখ ৭১ হাজার ৬২৬ টন। এই সার কোন পরিবহন সংস্থার কাছে রয়েছে তার সঠিক হিসাব বিসিআইসিতে নেই।
জানা গেছে, বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন অডিট আপত্তিটি আটকে রেখে গত বছরের ১০ নভেম্বর বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের বিপণন বিভাগে পাঠালে ৩৪৬৫ নম্বর ডায়েরির মাধ্যমে তা গৃহীত হয়।
সার কেলেঙ্কারির বিষয়টি জানাজানি হলে বিসিআইসির চেয়ারম্যান গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান কার্যালয়ের অডিট বিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন কারখানায় স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) করেন।
বিসিআইসির নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোহাম্মদ ইকবাল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সার ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পর্যালোচনায় উঠে এসেছে বিগত ১০ বছরের সার ঘাটতির পরিমাণ। অভিযোগ উঠেছে, বিসিআইসির সম্প্রতি বদলি হওয়া চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল নিরীক্ষা তথ্য পরিবর্তনের জন্য এমনটি করছেন।

বিসিআইসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অডিট আপত্তি ওঠার প্রায় ৯ মাস পর বিসিআইসির বিপণন বিভাগে তা গৃহীত হয়। এর দুই মাস পর অর্থাৎ গত জানুয়ারি মাসে একযোগে বদলি করা হয় বিসিআইসির প্রধান কার্যালয়ের অডিট বিভাগের ছয় কর্মকর্তাকে। তাঁদের মধ্যে অডিট আপত্তি দেওয়া সহকারী প্রধান নিরীক্ষক এ এস এম আনোয়ার আল সাদাতও রয়েছেন।

কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, এই অডিট আপত্তি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে দীর্ঘদিন। শেষ পর্যন্ত তা করতে না পারায় গত ৩ এপ্রিল জারি করা এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ এস এম আনোয়ার আল সাদাতকে প্রধান কার্যালয়ে তলব করে তার উত্থাপিত অডিট আপত্তি পরিবর্তন করতে চাপ দেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।

গত ১০ এপ্রিল বিসিআইসির ১৬৬১তম বোর্ড সভায় ‘সার ঘাটতি বিষয়ে নিরীক্ষা আপত্তি প্রসঙ্গে’ বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উত্থাপিত অডিট আপত্তি কেন এত দিন আমলে নেওয়া হয়নি তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে বোর্ড। এ ছাড়া স্টোর ইন ট্রানজিট খাতের তিন লাখ ২৫ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের পরিবহন ঠিকাদার এবং বাফারভিত্তিক বিস্তারিত বিবরণ পরবর্তী বোর্ড সভায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অডিট আপত্তি বিষয়ে জানতে চাইলে এ এস এম আনোয়ার আল সাদাত বলেন, ‘সংস্থা ও রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করেছি। এমনটি হবে কল্পনাও করিনি। ’ সম্প্রতি তাঁকে বিসিআইসির প্রধান কার্যালয়ে তলব করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অডিট আপত্তির সপক্ষে নথিপত্র চেয়েছেন চেয়ারম্যান। আমি নথিপত্র জমা দিয়েছি।’ কা ক

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।