অনলাইন ডেস্ক : ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে আজ সোমবার রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালী ও সমাবেশে করেছে। এতে ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি লস্কর মো. তসলিম বলেছেন, ইসলামী শ্রমনীতি না থাকায় শ্রমিকরা তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। মূলত মানব রচিত কোন মতবাদই গণমানুষের কল্যাণ করতে পারে না। রাসুল (স.) শ্রমিকদের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই শ্রমিক-জনতা সহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ইসলামী আদর্শের দিকেই ফিরে আসতে হবে। তিনি মহান মে দিবসের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অধিকার আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালী পরবর্তী সমাবেশে তিনি একথা বলেন। ফেডারেশনের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র্যালীটি রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বর্ণাঢ্য ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে কুড়িল বিশ্বরোডে সমবেত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো কুড়িল রোড এলাকা লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়। পরে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য র্যালী শুরু হয়। র্যালীতে বিভিন্ন শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ শ্রমিক অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ জাতীয় রিক্সা শ্রমিক পরিষদ, লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন, সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, আদর্শ কন্সট্রাকসন নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগরী দোকান কর্মচারি শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন, রমনা থানা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগরী অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা মহানগরী হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে র্যালীতে অংশ নিতে দেখা যায়। র্যালীতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহ-সভাপতি সোলাইমান হোসেন ও আতিকুর রহমান, সেক্রেটারি মুহিব্বুল্লাহ, সহকারি সেক্রেটারি এইচ এম আতিকুর রহমান, শ্রমিক নেতা আব্দুল হাই, ইঞ্জিনিয়ার আতহার আলী, শাহেদুর রহমান মোল্লা, মঞ্জুরুল আলম, আবুল কাসেম, নূরুল আমীন, মহিউদ্দীন, মাহমুদুর রহমান ও আব্দুল মান্নান প্রমূখ।
লস্কর মো. তসলিম বলেন, আজ ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’। ১৮৮৬ সালের ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিক সমাজ তাদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সেদিন শ্রমিক অসন্তোষ ও ধর্মঘটে গুলীবর্ষণে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে একজন শ্রমিক নেতাকে প্রাণদন্ডেও দন্ডিত করা হয়েছিল। বিশ্বের শ্রমিক সমাজ সেই বেদনাবিদুর ঘটনার স্মরণে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কিন্তু ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক শ্রমনীতি না থাকায় শ্রমিকরা আজ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশের শ্রমিক সমাজও তা থেকে মোটেই আলাদা নয়। তাই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় শ্রমিকবান্ধব শ্রমনীতির কোন বিকল্প নেই। তিনি ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত শ্রম বিনিয়োগ করলেও তারা বরাবরই নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। শ্রমিকরা বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিদিন ৮ ঘন্টারও বেশী সময় শ্রম দিলেও তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তাদের জন্য এখন ন্যুনতম মজুরীর দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। শ্রমিকদের শ্রমেরই উপর ভিত্তি করে একশ্রেণির মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়লেও ভ্যাগ্যাহত শ্রমিকরা উপেক্ষিতই থাকছেন। কল-কারখানা ও উৎপাদন সেক্টরগুলোতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব এখন বেশ ভয়াবহ। মাঝে মাঝেই শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত তাদের ন্যায্য অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়নি। তাই ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে মালিক-শ্রমিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।