ক্রাইমবার্তা রিপোট:সরকারের মন্ত্রীরা বাংলাদেশকে বিনোদনের জায়গা মনে করেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আজ দেশে সবচেয়ে চালের দাম বেশি। হাওরাঞ্চলে অনেকদিন পর গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে তিনি আবার বিএনপিকে দোষারোপ করলেন। তাদের কাজেই হচ্ছে বিএনপিকে দোষরোপ করা। অথচ সে অঞ্চলের মানুষের আজও হাহাকার কমেনি। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে গতকাল পশুসম্পদ মন্ত্রনালায়ণের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অষ্ট্রেলিয়া গেছেন। এর আগে হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ডিজি বিদেশে ছিলেন। তারা এই দেশটাকে মনে করছেন এটা বিনোদনের জায়গা। এদেশে টাকা উপার্জন করবে আর বিদেশে ঘুরবে, বিনোদন করবেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বীকার করেছেন বলেও দিয়েছেন যে ক্ষমতা হারালে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। তাই দলকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ‘রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন এবং আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজার জেনারেল (অব: ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলা আলমগীর বলেন, আজকে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। এবং সেই নির্বাচন নাকি সংবিধান অনুয়ায়ী হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কোন সংবিধান? যে সংবিধান তো (আওয়ামী লীগ) আপনি ভেঙ্গে চুরে, কেটে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছেন। এটা সংবিধান নয়। এটা আপনাদের (আওয়ামী লীগ) মনগড়া কাগজ তৈরি করেছেন। সেখানে আমাদের নির্বাচন করতে বলছেন- নির্বাচন হলে কি করবেন? আপনারা সেখানে রেফারি ও লাইন্সম্যান। সুন্দর ভাবে খেলে যাবেন, অন্য কাউকে খেলতে দেবেন না। আপনারা এত তরফা গোল দিয়ে যাবেন, ওভাবে কী খেলা হবে।
সরকারকে নহুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, এক তরফা খেলা হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন হবে না। এবং আপনাদের অধীনে নির্বাচন হওয়া কঠিন এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। সে জন্য আমরা বলেছি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কীভাবে হবে? আসুন- আমরা সংলাপ করি, কথাবার্তা বলি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির প্রস্তাব গুলো নিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন। জানি তাও করবেন না। কারণ কথা বলতে গেলেই সত্যটা চলে আসবে। সত্য মেনে নিতে হবে সেই অনুয়ায়ী নির্বাচন দিতে হবে কিন্তু আপনারা সেটা করবেন না । সেটা করলে আপনাদের পরাজয় হবে।
মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। আমরা জেলা গুলোতে কর্মীসভা ও সম্মেলন করতে হল রুম পাইনা। কনফারেন্স রুমের জন্য অনুমতি দিতে হয় তা না হলে বলেন নাশকতা করছিল। এটা দেশ হতে পারে না, রাষ্ট্র হতে পারে না।
সরকারের কঠোর সমালোচনায় মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি মুখে বলবেন গণতন্ত্রের কথা। পৃথিবীতে দেখাচ্ছেন শক্ত প্রশাসক। জঙ্গিবাদ দমন করছেন। অথচ এখন পর্যন্ত একজন জঙ্গিকে ধরে সত্য উৎঘাটন করতে পারেননি। বরং যাদের কে জঙ্গি সন্দেহে আটক করেছেন তাদের প্রত্যেককে গুলি করে মেরে ফেলছেন। এই নিয়ে গোটা জাতি একটি রহস্য ও ধু¤্রজালের মধ্যে রয়েছি। সত্যিকার অর্থে স্পষ্ট করা উচিত।
যাদের হাতে গণতন্ত্র এসেছে তাদের হাতেই গণতন্ত্র বাবার নিহত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলো সত্য এই দলটি ৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তারা এই গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল করেছে, ভিন্নমত দমন করেছে। এখনও করছে। এই সমস্ত দীর্ঘ কথা বার্তা বারবার আলোচনা করতে ভালো লাগে না। এর সুরাহা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা তিস্তা নদীর পানির সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধান হয়নি। সম্ভাবনাও নেই। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ধরকষাকষি করতে পারতাম সেগুলো আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এ কথা গুলো বললেই আমরা ভারত বিরোধী? এই কথা গুলোর অর্থ হচ্ছে আমরা আমাদের স্বার্থ্রে কথা বলছি। আমরা স্পষ্ট করে বলছি আমি, আমার দল ও জোট ভারত বিরোধী নই। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু। যুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তার অর্থ এই নয় নতজানু হয়ে আমাদের সবকিছু বিলিয়ে দেবো। আমাদের অধিকার গুলো স্ষ্ট করে বলা দরকার। কৃষক শ্রমিক ব্যবসায়ী সবার ন্যায্য অধিকারগুলো স্পষ্ট হওয়া দরকার।
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, খবর বেরিয়েছে ১০ বছরে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমাদের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, দেশে আইনের কোনো শাসন নেই। প্রতি পদে পদে বিচার বিভাগের ওপর প্রশাসনিক প্রভাবের চেষ্টা করা হচ্ছে আপিল বিভাগ বিভাগকে অচল করে দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বড় একটা অভিযোগ। একটি গণতান্ত্রিক রাষে।ট্রর তিনটি প্রধান স্তম্ভ তারমধ্যে একটি যার ওপর আমরা নির্ভর করি সেটা হচ্ছে বিচার বিভাগ। আরেকটি হচ্ছে প্রশাসনিক বিভাগ অর্থ্যাৎ সরকার হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না।
সমন্বয় করে কাজ করতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার কী সমন্বয় করে হয়? বিচার কখনও সমন্বয় করে হতে পারে না। বিচারকের কাজ হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটন করে দোষীকে শাস্তি দেওয়া। যেটা চলছে সেটা একদলের শাসন, এক ব্যক্তির শাসন।
Check Also
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …