ক্রাইমবার্তা রিপোট: আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। শনিবার (৬ মে) সকালে খুলনা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি বড় সংগঠন বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়তো আছে, কিন্তু কোন্দল নেই।’
প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভীএকাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সরকার জাদুঘরে পাঠিয়েছে। দেশে এখন শেখ হাসিনা মার্কা গণতন্ত্র চলছে। তার পিতা একদলীয় বাকশালকে চূড়ান্ত রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ইতিহাসের বিবৃতি ঘটিয়েছেন এবং জনগণের ভোট ছাড়া একদলীয় বাকশাল কায়েমের পথে অগ্রসর হয়েছেন। এ কারণে শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেজন্যই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সব বিভেদ ও অনৈক্য ভুলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পতন নিশ্চিত করতে হবে।’
খুলনা বিএনপির কোন্দল-লবিং প্রসঙ্গে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি ইনুর জাসদ নয়। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। নানা সমালোচনা ও পক্ষ-বিপক্ষের মধ্য দিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শেখ হাসিনা তার ময়ূর সিংহাসনকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্ত মনে রাখতে হবে, এ দেশের মাটির গভীর থেকে জাতীয়তাবাদী চেতনার একেকজন সৈনিক জন্মায়। শেখ হাসিনার পুলিশের এত গুলি নেই যে, সব জাতীয়তাবাদের সৈনিকদের হত্যা করা যাবে। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে এ মাটি থেকে নিঃশেষ করা যাবে না।’
দেশে অঘোষিত সামরিক শাসন চলছে মন্তব্য করেন রিজভী। তার অভিযোগ— আবারও মামলা, গণগ্রেফতার ও নির্যাতন শুরু হয়েছে, সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার গদি রক্ষা করতে পুলিশ মৃত ব্যক্তির নামেও মামলা দিচ্ছে! আজকের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার সত্য ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। কারণ স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করলে শাস্তি হবে এই মর্মে সংসদে আইন প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। এ কারণে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লেখকরা সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে পারবে না। সত্যি লিখলে তাদের আদালতে দাঁড় করানো হবে। দেশে এখন গণমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু সাংবাদিকরা স্বাধীনচেতা। তারা অনেক কিছু লিখতে চাইলেও মালিকপক্ষ সরকারি হুমকির কারণে অনেক সত্য প্রকাশ করেন না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের মতে, সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীর তীরে নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলকে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে পরিণত করবে। কয়লা পোড়ানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে, বন্যপ্রাণী প্রজনন ক্ষমতা হারাবে, নদ-নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই, তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে সুন্দরবনের অক্সিজেন আর বাঁচানো যাবে না।’
মানুষের প্রতিবাদের মুখেও অগণতান্ত্রিক সরকার শুধু ভারতকে খুশি করতে এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অনড় রয়েছে বলেও অভিযোগ রিজভীর। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সামরিক চুক্তির অর্থ আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বন্ধক রাখা। যে ভারত আমাদের সীমান্তে প্রতিদিন মানুষ মারছে, সেই দেশের সঙ্গে গোপনে প্রতিরক্ষা চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এ কারণে আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মেঘালয়ের বিষাক্ত পানির ঢলে মাছসহ আমাদের জলজ প্রাণী মারা গেছে। সরকার এর প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। হাওর এলাকাকে দুর্গত ঘোষণা না করে তারা সমালোচিত হয়েছে। হাওরের দুর্গত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণও পৌঁছাতে পারেনি এ সরকার।’
দুঃশাসন এবং অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি থেকে দেশ এবং জাতিকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান রিজভী। দেশের বর্তমান রাজনীতি, দলীয় অবস্থান ও ঐক্য প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির এই প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগর বিএনপি সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে এখানে প্রধান বক্তা ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এম নুরুল ইসলাম দাদু। খুলনা মহানগর ও সব ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …