ক্রাইমবার্তা রিপোট:মিরসরাইয়ে জাতীয় গ্রিডের এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টেজের বিদুৎ লাইনের টাওয়ারের উপর থেকে অলৌকিকভাবে অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন নাছির উদ্দিন (২৬) নামের এক যুবক। রোববার উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। যুবকটিকে দেখতে এলাকার শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। নাছির নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার এয়ারপুর এলাকার সিরাজ উদ্দিনের পুত্র। সে দীর্ঘ ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগে ভুগছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মহিব বিল্লাহ জানান, রোববার দুপুরে বিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ারের উপরে এক যুবককে চিৎকার করতে শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তাকে ডাক দিয়ে নামানোর অনেক চেষ্টা করে এলাকাবাসী ব্যর্থ হয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে তারা ঘটনাস্থলে আসার পর ওই যুবক নেমে আসে। টাওয়ারের উপরে প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করে ওই যুবক। কিভাবে সে বেঁচে এলো ভাবতে অবাক লাগছে।
নিজামপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ জহির উদ্দিন জানান, দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের টাওয়ারের উঁচুতে এক যুবক বসে থাকার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। টাওয়ারের উচ্চতা ছিলো প্রায় ৯০ ফুট। এসময় সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে খবর দিলে তারাও দ্রুত ছুটে আসে। ওই যুবক টাওয়ারের একেবারে উচুঁতে বসে মা, মা বলে চিৎকার করছে। তাকে নামানোর জন্য হ্যান্ড মাইকে অনেকবার ঘোষনা দিয়ে চেষ্টা করার পরও নিচে নামাতে ব্যর্থ হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলেছি লাইন বন্ধ করতে। কিন্ত এটি জাতীয় গ্রিডের লাইন হওয়ায় তারা বন্ধ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তাকে নামানোর জন্য কৌশল অবলম্বন করি। সে যখন মা বলে চিৎকার করছে তখন উপস্থিত কয়েক মহিলার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে তাদের মধ্যে রোকেয়া বেগম, লায়লা বেগমসহ তিনজন মহিলাকে ঠিক করি। তাদের একজনকে মায়ের ভূমিকায় কথা বলতে অনুরোধ করি। যেভাবে বলেছি তিনি ঠিক সেভাবে ওই যুবক মা ডাকের পর মহিলা হ্যান্ডমাইকে উত্তর দেয়। সে যখন মা বলে ডাক দেয় তখন নিচ থেকে রোকেয়া বেগম হ্যান্ড মাইকে বলেন, নাছির এইতো আমি নিচে, তুই নেমে আয়। এরপর সে চারদিকে তাকিয়ে দেখে। রোকেয়া আবারো নিচ থেকে বলে নাছির আমি নিচে তুই নেমে আয়, দুপুর হয়ে গেছে। একসাথে ভাত খাবো। তখন সে ধীরে ধীরে নিচে নেমে এসে অজ্ঞান হয়ে যায়। এসময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাস যোগে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
নাছির উদ্দিনের পিতা সিরাজ উদ্দিন বলেন, নাছির ছোট থাকতে তার মা মারা যায়। দীর্ঘ ২২-২৩ বছর ধরে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। অনেক চিকিৎসা করেও তাকে সুস্থ করতে পারিনি। সে বাড়িতে থাকেনা। পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদুৎ সমিতি ৩-এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্টেজের জাতীয় গ্রিডের লাইন এটি। বিভিন্ন স্থানে উৎপাদন হওয়া বিদ্যুৎ এই লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়। এতো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইনের টাওয়ারের উচুঁ তো দুরের কথা ৪ ভাগের একভাগে গেলেও কেউ বেঁচে থাকার কথা না। মোমের মতো গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু একেবারে উচুঁ থেকে কিভাবে অক্ষত অবস্থায় ওই যুবক ফিরে আসছে বুঝতে পারছি না। আল্লাহর অশেষ রহমতে সে জীবিত ফিরে এসেছে।