ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :চীনের পর এবার সমুদ্রে কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির উপকূলসংলগ্ন পীত সাগরে এ দ্বীপ নির্মাণের কাজ চলছে। এখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপসহ কৌশলগত বিভিন্ন সামরিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। ওই এলাকার স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে এ খবর জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ সংক্রান্ত কাজে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব হচ্ছে না। কোরীয় উপদ্বীপে চলমান যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যে এ সামরিক ঘাঁটির খোঁজ পাওয়া গেল।
পিয়ংইয়ং থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পীত সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তর কোরীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু না বললেও বিশেষজ্ঞরা ওই দ্বীপের নাম দিয়েছেন ‘সোহে আইল্যান্ডস’। পীত সাগরের উত্তরের অংশটি কোরিয়া উপসাগর নামে পরিচিত। এখানে বিদ্যমান দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পীত সাগর বলতে পূর্ব চীন সাগরের উত্তর অংশটিকে বোঝায়। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি প্রান্তিক সাগর। সাগরটি চীনের মূল ভূখণ্ড এবং কোরীয় উপদ্বীপের মাঝখানে অবস্থিত। আর এ কারণে সাগরটির গুরুত্ব ব্যাপক। পীত সাগরসংলগ্ন অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার বেশ কিছু সামরিক স্থাপনা রয়েছে। সেখানেই নতুন করে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির খোঁজ পাওয়া গেছে। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্মাণাধীন কৃত্রিম দ্বীপে সামরিক স্থাপনা স্থাপনের লক্ষণ দেখা গেছে। সেখানে চওড়া রাস্তা ও ভবন নির্মাণ করতে দেখা যাচ্ছে। ওই এলাকার নিকটবর্তী স্থানে রয়েছে সোহাই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। এছাড়া সোহাই এলাকায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে রকেটের পরীক্ষা করে উত্তর কোরিয়া। চলতি বছরের শুরুতে সেখানে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালানো হয়।
স্ট্রাটেজিক সেনশিনেলের ভূ-রাজনীতিবিষয়ক একজন গবেষক দ্য ডিপ্লোম্যাটে লিখেছেন, যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা খুব সীমিত। এর ভিত্তিতে সঠিক উপসংহার টানা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কৃত্রিম দ্বীপাঞ্চলে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসানোর কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তার মতে, ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণের মতো অবকাঠামোর তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কৌশলগত স্থাপনা সম্পর্কে আঁচ করা যায়। এসব স্থাপনা সামরিক ও বেসামরিক দু’ধরনের ব্যবহারের উদ্দেশে হতে পারে।
স্ট্রাটেজিক সেনশিনেলের নির্বাহী প্রধান লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের পর্যবেক্ষণের জন্য ওই এলাকা ব্যবহার করা হতে পারে। দেশটি যখনই কোনো ক্ষেপণাস্ত্র বা পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে, কিম জং উন তা নিজে পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করেন। এর আগে দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করে সেখানে সামরিক ঘাঁটি গড়েছে বেইজিং।
এদিকে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে ৪১৯-১ ভোটে পাস হয়। কংগ্রেসের উভয়কক্ষে বিলটি পাসের পর এখন সেটিতে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য হোয়াইট হাউসে পাঠানো হবে। উত্তর কোরীয় জাহাজ শিল্প ও বিভিন্ন কোম্পানিকে নতুন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
মার্কিন অবরোধ আরোপের বিষয়ে উত্তর কোরিয়া খুব একটা চিন্তিত না হলেও কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের উদ্যোগে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পিয়ংইয়ং। বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ওয়াশিংটকে এ অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে বেইজিং। আর এ কারণে চীনের বিরুদ্ধে সীমা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ তোলে উত্তর কোরিয়া। তবে নরম সুরেই কথা বলছে চীন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চীন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর।