ক্রাইমবার্তা রিপোট: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে একাধিক জোটের আতœপ্রকাশ ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সব জোট প্রথমে সমমনা দলের সঙ্গে জোট করবে, এরপর ওই সব জোট আবার বড় দলের নেতৃত্বাধীন জোটেরও সদস্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চেষ্টা করতে পারে। এই বিষয়টি নির্ভর করছে আসলে তারা কোন দল ও জোটের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করতে পারে এর উপর। তবে নির্বাচনী জোট গড়ার ও জোটের আকার বড় করার জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দল চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগও চলছে। এরশাদ তার জোট ঘোষণা দিয়েছেন। সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর কথাও বলেছেন।
বিভিন্ন দলের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন একটি জোট করার উদ্যোগ নিয়েছেন অনেক আগেই। তিনি নাগরিক সমাজকে নিয়ে ঐক্য গড়তে চান। এই জন্য জাতীয় কনভেনশনও করতে চান। এটা তার ২০১৩ সালেই করার কথা ছিল। ওই সময়ে উদ্যোগও নিয়েছিলেন। অনেক দূর এগিয়েছিলেন পরে আর সেটা ওইভাবে করেননি।
এবার নির্বাচনের আগে তার নেতৃত্বাধীন জোটের আতœপ্রকাশ হতে পারে। যদিও ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তিনি নিজে জোটের নেতৃত্ব দিতে চান না। তিনি চান এমন করতে যে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে নিয়ে জাতীয় কনভেনশনের আয়োজন করবেন। আর সেখানেই জোটের নেতা ঠিক করা হবে। তার জোট আলাদা করে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে।
কোনভাবেই তিনি আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট কিংবা বিএনপির ২০ দলীয় জোটের কোনটার সঙ্গেই ঐক্য করতে চান না। তিনি দুই নেত্রীর কারো সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য জোট করবেন না। বরং তিনি চান নতুন কিছু। নতুন নেতৃত্ব। তিনি মনে করেন, দুই নেত্রীর ও দুই দলের যে আধিপত্য চলছে বছরের পর বছর এর অবসান হওয়া প্রয়োজন। নতুন নেতৃত্ব আসা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, তার জোট গড়ার কাজ থেমে যায়নি। চলছে সময় সুযোগ মতো তিনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন। সেই হিসাবে তিনি জোট গঠন করতে পারলে ওই জাতীয় ঐক্যের হয়ে নির্বাচনেও অংশ নিবে তার জোট।
এছাড়াও আ স আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন একটি জোটের আতœপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। তিনিও চাইছেন ব্যতিক্রম ধর্মী একটি জোট করতে। যাতে করে আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
এই দুই জোটের বাইরে ব্যারিস্টার নাজমূল হুদার নেতৃত্বে আরও একটি জোট হতে পারে। তার নেতৃত্বে একটি জোট হয়েছিল। সেই জোট নিয়ে তিনি এরশাদের জোটে যেতে রাজি হননি। তিনি না গেলেও ওই জোটের একটি অংশ এরশাদের নতুন জোটে সদস্য হয়েছে। এখন নাজমূল হুদা বিএনপি জোটে যেতে পারেন তার ভাঙ্গা জোটের ওই অংশ নিয়ে না হয় তার মতো করে সাজাতে পারেন। তবে তিনি চেষ্টা করবেন নিজের গুরুত্ব আরও বাড়াতে। সেই সঙ্গে আরও একটি জোট করতে।
বিএনপির সূত্র জানায়, তারা ২০ দলীয় জোট নিয়ে এখনও চলছে। তবে পরিকল্পনা রয়েছে এই জোটের পরিধি বাড়ানোর জন্য। সেই হিসাবে এই পরিধি বাড়াতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জোটের পরিধি বাড়ানোর জন্য ২০১৩ সাল থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে জোটের পরিধি আরও বাড়াবেন। তবে গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নবম সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই জোট থেকে জাতীয় পার্টি বের হয়ে যায়। তারা আলাদা করে নির্বাচনে অংশ নেয়। আর তারা এখন বিরোধি দল। আগামী নির্বাচনের জন্য এরশাদ তার দলসহ ৫৮ দল নিয়ে জোট করেছেন। যদিও এই জোটের ভষ্যিত নিয়ে শঙ্কিত। এরশাদ নিজেও ভীষন আশাবাদী করতে পারছেন না।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগও তাদের জোটের পরিধি নির্বাচনের আগে বাড়াতে পারে। তাদের সমমনা বিভিন্ন দলকে নিজেদের জোটে সম্পৃক্ত করতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। কিছু কিছু দলতো জোটে আসতেই চায়। কিন্তু তাহলেও কোন কোন দলকে নেওয়া হবে আর কোন দলকে নেওয়া হবে না সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এমন দল ও নেতাদের নেওয়া হবে যাতে করে যত সমস্যাই হোক না কেন এবং যে কোন বাঁধাই আসুক না কেন অবশ্যই জোটে থাকতে হবে। লোভে পড়ে তারা জোট ছাড়বে না। আবার সরকারি জোট থেকে বেশি আসন দেওয়ার প্রস্তাব পেলেই সেদিকে ছুটবে না।
এদিকে বিকল্প ধারা, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বেও জোট হতে পারে। তারা আলাদা করে জোট করে সেই জোট নিয়ে আবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একজোট হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এই পরিকল্পনার কথা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শোনা গেলেও পরে আর হয়নি। তবে তারা নির্বাচনের সময় বিবেচনা করেই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে।
Check Also
ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …