রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণ ফেঁসে যাচ্ছেন সরকার দলীয় এমপিপুত্র মাহির

ক্রাইমবার্তা রিপোট: বনানী হোটেল রেইনট্রি কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাচ্ছেন সরকারদলীয় এমপিপুত্র মাহির বিন হারুন। তিনি ঝালকাঠীর-১ আসনের সংসদ সদস্য বি এইচ হারুনের ছেলে। ওই হোটেলের একজন ডিরেক্টর তিনি। ধর্ষণে সহযোগিতার ব্যাপারে ইতোমধ্যে পুলিশ গোয়েন্দারা মাহিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন। ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এবং আলামত নষ্ট করতেও তার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিকে হোটেলটিতে গতকাল শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে বিপুল বিদেশী মদ উদ্ধার করেছে। এ মামলাতেও মালিক পক্ষের লোকজন আসামি হবেন বলে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন।

ঢাকা বনানীর হোটেলে দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের (বি এইচ হারুন) ছেলে মাহির হারুনের নাম উঠে এসেছে। দ্য রেইন ট্রি নামে যে হোটেলটিতে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার মালিক বি এইচ হারুন বলে জানা গেছে। যদিও তিনি গণমাধ্যমের কাছে এ হোটেলের মালিকানার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে তার এক ছেলে যে এটার পরিচালক ওই বিষয়টি তিনি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন।
হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, এ হোটেলের মূল মালিক সংসদ সদস্য বি এইচ হারুন। তার বড় ছেলে নাহিয়ান বিন হারুন হোটেলটির চেয়ারম্যান, মেজ ছেলে আদনান হারুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ছোট ছেলে মাহির হারুন এ হোটেলের একজন পরিচালক। এ মাহির হারুন দুই তরুণী ধর্ষণের মূল হোতা সাফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন হোটেল রেইন ট্রিতে সাফাতের জন্মদিনের যে সাজানো অনুষ্ঠানটি হয়েছিল তার আয়োজক ছিলেন মাহির হারুন। ধর্ষিতা তরুণীদের একজন অভিযোগ করেছেন, সাফাতের জন্য জন্মদিনের কেক নিয়ে এসেছিলেন এ মাহির হারুন। তবে তিনি সেখানে এসে বেশিক্ষণ থাকেননি।
এ দিকে গতকাল অভিযান চালিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে ১০ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করেছে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ। এর আগের দিন গত শনিবার হোটেলের এক্সিকিউটিভ ইন্টারনাল অপারেটর ফারজান আরা রিমি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হোটেলে মদ বিক্রির কোনো লাইসেন্স নেই। আগের দিন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সেখানে অভিযান চালালেও তারা কোনো মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে পারেনি। হোটেলে অভিযান চালানোর পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক ওবায়দুল কবির বলেন, হোটেলের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি ও বার পরিচালনার অভিযোগ ছিল। ওই কারণেই আমরা পরিদর্শনে এসেছি। তল্লাশি চালিয়ে আমরা হোটেলটিতে অ্যালকোহল জাতীয় কিছু পাইনি। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সে কারণে আমরা হোটেলটির ওপর নজরদারি রাখব। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তল্লাশির পর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই সেখান থেকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মদ উদ্ধারের ঘটনায় আগের দিনের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দিকে গতকাল মদ উদ্ধারের পর হোটেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ওগুলো মদ নয়, জুস। কিন্তু বোতলগুলোর গায়ে স্পষ্ট মদের লেবেল লাগানো আছে।
ধর্ষিতা তরুণীদের একজন বলেছেন, তাদের ওই হোটেলে নিয়ে যে ধর্ষণ করা হবে তা আগে থেকেই হয়তো প্লান করা ছিল। যে কারণে রাতে তারা রুমের মধ্যে আর্তনাদ করলেও হোটেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে যাননি। সকালে তাদের যখন বের করে দেয়া হয় তখনো তারা কাঁদতে কাঁদতে হোটেল থেকে নামছিলেন। কিন্তু তখনো হোটেলের কেউ জিজ্ঞেস করেননি কী হয়েছে। ধর্ষিতা ওই তরুণী বলেন, তখনোই মনে হয়েছিল তাদের ধর্ষণের বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষও জানে। যে কারণে তারা সবকিছুই এড়িয়ে যায়।
গত ২৮ মার্চ বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে দুই তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত এবং তার বন্ধু নাঈম আশরাফ মিলে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে। এতে সহায়তা করে সাফাতের অপর বন্ধু সাদমান সাকিব। ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তদন্তে মাহিরেরও নাম বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করেছে। নাঈম আশরাফকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেফতারকৃত দুইজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রেইনট্রি হোটেলের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হচ্ছে : এ দিকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত হোটেল রেইনট্রিতে অভিযান চালানোর পর তিনটি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। ভ্যাট ফাঁকি, শুল্ক ফাঁকি এবং মুদ্রা পাচার অভিযোগে মামলাগুলো হবে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা।
গত ৬ মে মামলা হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল রোববার সকালে ঘটনাস্থল রেইনট্রি হোটেলে অভিযান শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দারা। তারা হোটেল থেকে বেশ কয়েক বোতল বিদেশী মদ এবং নথিপত্র জব্দ করেন।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, হোটেলটি গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও কোনো অর্থ পরিশোধ না করে এই পর্যন্ত ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। মদ উদ্ধারের বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, লিকারগুলো কেনাবেচার জন্য শুল্ক দিতে হয়, কিন্তু এগুলো তারা কোথা থেকে কিভাবে কিনেছে, তার কোনো জবাব দিতে পারেনি। এ ছাড়া নথিপত্রে মুদ্রা পাচারের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

 

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।