ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে কন্যাসহ বাবা আত্মহত্যার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এরকম ঘটনা বাংলাদেশের বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যন্ত এলাকায় অহরহ ঘটছে। অগণতান্ত্রিক সরকারের কারণেই দেশের মানুষ আজ বিচার পাচ্ছে না। রাষ্ট্রের কাছ থেকে সাধারণ এবং দুর্বলেরা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের রাজনৈতিক অবস্থাটা স্বাভাবিক নেই, সুস্থ্য নেই, এতে গণতন্ত্র নেই, বর্তমানের রাজনীতি নষ্ট রাজনীতি। যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দুপুরে গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুরের সিটপাড়া গ্রামের হালিমার বাড়ীতে এসে বিশিষ্ট লেখক, কলামিষ্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকদের উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি কন্যাসহ বাবা হযরত আলীর আত্মহত্যার ঘটনায় ওই পরিবারের বেঁচে থাকা হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন ও তার খোঁজ খবর নেন। এসময় স্বামী-সন্তানহারা হালিমার পাশে থেকে সুবিচার প্রাপ্তিতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, বিচার বঞ্চিত হয়ে হযরত আলী মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় জাতির বিবেককে যতটা নাড়া দেয়ার কথা ছিল দারিদ্রতার কারণে ততটা নাড়া দেয়নি। জমি ও নারীর প্রতি লোভের কারণে হালিমার পরিবারের ওপর হামলা ও নিরব নির্যাতন হয়েছে। এটি নষ্ট সমাজের লক্ষ্মণ। আমাদের রাজনৈতিক দূর্বল জনগোষ্ঠী বিচারহীনতার জন্য দায়ী। সুষ্ঠ ও ন্যায় বিচার পেলে হযরত আলীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না। হযরত আলী নিরবে প্রতিবাদ করে গেছেন। এতেও যদি সমাজের বিবেক নাড়া দেয়। তিনি শান্তি পূর্ণ সমাজ গড়ার জন্য স্থানীয় সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার দাবী করেন। এসময় তিনি হালিমার খোঁজ খবর নিয়ে অবিলম্বে সকল অপরাধীদের আইনের মাধ্যমে বিচারের দাবী জানান।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা কাজ না করলে সমাজে দুর্বলের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। এ কারণেই দুটি মানুষ জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করে গেছেন। এটি বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিবাদ। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সকলকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের পাশে থাকব।
এসময় তার সঙ্গে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সি.পি.বি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী মোঃ জাকির হোসেন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল শ্রীপুর রেলস্টেশনের পশুহাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মেয়ে আয়েশা আক্তারসহ দিনমজুর বাবা হযরত আলী আত্মহত্যা করেন। মেয়েকে শ্লীলতাহানি, গরু চুরি যাওয়া, গবাদিপশু দিয়ে ফসলি জমির ক্ষতি করাসহ প্রতিবেশীদের হামলা ও হুমকির বিচার না পাওয়ায় মেয়েকে নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। ঘটনার একদিন পর হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম বাদী হয়ে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় আতœহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নং ১৮(৪)১৭ দায়ের করেন। এঘটনায় পুলিশ এক ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনার প্রায় ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ।
এব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াছিন ফারুক জানান, আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। আসামীদের ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেফতার অভিযান বিলম্বিত হচ্ছে।
###