স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার কাজ হবে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামানের আদালতে। এদিকে রাজধানীর দারুস সালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় নাশকতার (গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ) অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা আরো তিন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারক পরিবর্তন চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন মঞ্জুর করে নতুন করে বিচারক নির্ধারণ করে দেন উচ্চ আদালত। এর আগে মামলাটির বিচার কাজ চলছিল ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে।
ড. মো. আক্তারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদন্ড এবং ২৭৮ জনকে খালাসের রায় দিয়েছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি শওকত হোসেন ও বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ১৪ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দ্বিতীয় দফায় বিচারক পরিবর্তনের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। তবে ওইদিন কোন আদালতে এ মামলা শুনানি হবে তা আদেশ বলা হয়নি।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া ।
এর আগে এ বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের প্রতি অনাস্থা জানানোর পর হাইকোর্ট জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে মামলটি শুনানির জন্য পাঠান। কিন্তু বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা এই মামলার অভিযোগ দাখিলের সময় দুদকের মহাপরিচালক ছিলেন বিধায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। পরে তিনি এই বিচারকের ওপরও অনাস্থা প্রকাশ করেন। যা বিচারিক আদালতে খারিজ হয়ে যায়।
গত ২৬ এপ্রিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। তার আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন।
আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ মামলার বর্তমান বিচারক মামলার তদন্ত এবং অভিযোগ দাখিলের সময় দুদকের পরিচালক ছিলেন। এ কারণে তার কাছে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন না বলে মনে করেন। তাই অনাস্থা জানিয়েছেন। আজ হাইকোর্ট আবেদন গ্রহণ করে দ্বিতীয়বারের মতো বিচারক পরিবর্তনের আদেশ দেন।
গত ১৩ এপ্রিল এ মামলার শুনানিকালে অনাস্থার আবেদন করলে নাকচ করে দিয়েছিলেন বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা। ওই দিন আদালত বলেছিলেন, মামলার এ পর্যায়ে এসে অনাস্থার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়, তাই নাকচ করা হলো। আপনারা হাইকোর্ট থেকে আদেশ নিয়ে আসেন।
গত ৮ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার অনাস্থার আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি ওই আদালত থেকে স্থানান্তর করে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই আদালতকে ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা করা হয়। খালেদা জিয়া ছাড়াও এ মামলার অপর আসামিরা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সলিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের বোনের ছেলে মমিনুর রহমান।
আরো তিন মামলা স্থগিত
এদিকে রাজধানীর দারুস সালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় নাশকতার (গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ) অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা আরো তিন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব মামলা আমলে নেয়ার আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এ নিয়ে একটি রাষ্ট্রদ্রোহসহ তার মোট ১২টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করলেন হাইকোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।
ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, হয়রানির উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার এসব মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ও ৩ মার্চ তিনটি মামলা হয়। এসব মামলার এফআইআর-এ খালেদা জিয়ার নাম ছিল না। তবুও এসব মামলা বিচারিক আদালত আমলে নিয়েছেন। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন।