ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান দ্বন্দ্ব চরমে: হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে ব্যাংকটি-এর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কী সম্পর্ক?

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান দ্বন্দ্ব চরমে

 স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব চরমে। প্রভাব বিস্তারে চলছে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি আর হুমকি। এজিএমকে সামনে রেখে এ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হচ্ছে। ব্যাংকটির ভাইস-চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হলে তার সাথে আরও ১০ পরিচালন পদত্যাগ করবেন। বোর্ডের সিদ্ধান্তের পরও প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে টাকা দেবে না ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ দুই ব্যক্তি। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

এদিকে ব্যাংকটির এমন পরিস্তিতে আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ গ্রাহকরা। দেশের সর্ব বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংটির গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও গ্রাহকদের নিয়ে কোন কথা বলছেন না কেউ। এমনকি সাধারণ গ্রাহকের পক্ষে কথা বলারও কেউ নেই। সরকারের আর্শিবাদপুষ্ট এই পরিচালনা পর্ষদ আসার পরে শেয়ারে লভ্যাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান আরাস্তু খানের সঙ্গে রেষারেষির মধ্যে গতকাল শনিবার নয়জন পরিচালকের একটি যুক্ত বিবৃতি সরবরাহ করে একথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ব্যাংকটির ২১ জন পরিচালকের মধ্যে নয়জন বিবৃতিতে সই করেছেন। এছাড়াও তিনজন বিদেশে রয়েছেন, যারা এই বিবৃতিতে একমত পোষণ করেছেন।

বিশে^র এক নম্বর ইসলামী ব্যাংক হিসেবে পরিচিত দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংকটিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য।

গত জানুয়ারিতে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যান, অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান করার পাশাপাশি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন আসে।

আহসানুল আলমের অভিযোগ, ইসলামী ব্যাংকে জামায়াত সমর্থকদের শক্তি সংহত হচ্ছে এবং তাতে সরকারের অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে। কারন হিসেবে তিনি উল্ল্খ্যে করেন, যাকাত ফান্ডের টাকা প্রধানমন্ত্রী যাকাত ফান্ডে দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেও এখন চেয়ারম্যান এবং এমডি তা দিতে অস্বীকার করছেন। তারা বলছেন এধরনের কোন সিদ্ধান্তই মিটিংয়ে হয়নি। তারা কার স্বার্থে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অস্বীকার করছেন এ প্রশ্ন সামনে আসছে।

তাকে ফের ‘খুব ঝুঁকিপূর্ণ’ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, তার উপর চাপ ও হুমকি বাড়ছে। নিরাপত্তার অভাবে বুধবার ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির (ইসি) সভায় যোগ দিতে পারেননি তিনি।

গত ১১ মে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের সভায় যোগ দেন তিনি।

ওই সভা শেষে পারভেজ ও শহীদুল আলম জানান, পরিচালনা পর্ষদের সভায় মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান (ইভিপি) মাহবুব আলমকে ওএসডি এবং জনসংযোগ এবং সিএসআর বিভাগের প্রধানকে বদলির সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া এবার জাকাতের ৪৫০ কোটি টাকা ব্যাংকের উদ্যোগে সরাসরি বিতরণের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর জাকাত তহবিলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি ইফতারের ১৩ কোটি টাকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারা দেশে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়।

অন্যদিকে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে আহসানুল হকের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের যাকাত ফান্ড নিয়ে যে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে তা ভিক্তিহীন এবং অসত্য। তিনি বলেন, বিগত ৩৪ বছরে ইসলামী ব্যাংকের মোট যাকাত ৩৪৭ কোটি টাকা। যা থেকে ১৭৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং ট্যাক্সের জন্য কিছু টাকা রাখা আছে। এই টাকা বাদ দিলে যে টাকা আছে তা মাত্র ২৮ কোটি। তবে কিছু সংবাদ মাধ্যমে এসেছে ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর যাকাত ফান্ডে প্রদান করা হবে। আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে এ ধরণের কোনো কথাই হয়নি।

তিনি বলেন, পত্রিকায় এটা প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ৪০ মিনিট কথা হয়েছে। আমাদের যাকাত ফান্ডে যেখানে মাত্র ২৮ কোটি টাকা আছে সেখানে আমরা কীভাবে ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর যাকাত ফান্ডে দিবো?

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীন পরিচালক হিসেবে যদি ওনি (ভাইস চেয়ারম্যান) নিজে পদত্যাগ করেন সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। এটা আমার ব্যাপার না। তার থাকা বা পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোনো চাপ নেই।

এদিকে গতকালের বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট যে ব্যাংকের ভিতর থেকে পদত্যাগের চাপ রয়েছে। যদি পদত্যাগের চাপ না ই থাকতো তাহলে কেন তিনি আরও দশ জনকে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এতে আরও স্পষ্ট যে, চেয়ারম্যান আর ভাইস-চেয়ারম্যানের এই দ্বন্দ্ব মূলত অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই।

আহসানুল আলম গতকাল শনিবার বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে আরাস্তু খান ‘মিথ্যাচার’ করেছেন, তার পক্ষে বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সৈয়দ আহসানুল হকসহ অন্য পরিচালকদের পদত্যাগ করতে চাপ দেয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়।

তারা (সদস্যরা) এই হীন বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের নেপথ্য শক্তিকে বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এর আগে যাকাত ফান্ড, শিক্ষাভিত্তি এবং রমজানের ইফতারের বিষয়ে চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের পরিচালকদের সরাতে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো পরিচালককে হুমকির মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলে বহু সম্মানিত পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করবেন।

আরাস্তু খান গত বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান তার নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ইসলামী ব্যাংক ফের স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে যে অভিযোগ করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। তাকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তিনি করেছেন তাও ভিত্তিহীন। আহসানুল আলম পারভেজ চাইলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন। তার থাকা বা পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোনো চাপ নেই।

এর আগে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ জানিয়েছিলেন, এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকের যাকাতের অর্থ সরাসরি বণ্টন না করে তা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডের মাধ্যমে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পরিষদ মনে করছে ব্যাংকটির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), যাকাত এবং ইফতার খাতে ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের লালনে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ।

সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের ফেসবুক স্টাটাস সম্পর্কে তিনি বলেন, এই স্ট্যাটাস দেয়ার পরে আমি তাকে ফোন করেছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি একটু ওয়েট করতে পারতেন। আমি ৫ ঘন্টা পরে দেশে ফিরবো। পরে যখন তাকে বোর্ড মিটিংয়ে ডাকা হলো, তখন তিনি বলেছেন, তাকে পদত্যাগ করতে ফোর্স করা হচ্ছে। কে বলেছে, সেটা আমাকে বলেননি। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি। তবে ব্যাংকের ভিতর থেকে তাকে কোন ফোর্স করা হয়নি এটি নিশ্চিত। বাহির থেকে কোন এজেন্সি তাকে সাদা কাগজে সই করে পদত্যাগ করতে বলেছিল বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন।

আরাস্তু খান বলেন, আমরা এখানে ভালো কিছু করতে এসেছি। সবাই কিন্তু অনেক সৎ। এমনটি তিনিও (ভাইস চেয়ারম্যান)। কিšন্তুআমি জানি না। সে কেন এগুলো করেছে। সরকার, ব্যাংক, বোর্ড এবং এই ম্যানেজমেন্টের ভাবমূর্তি নষ্ঠ করার কোনো অধিকার তার নাই। ইচ্ছাপ্রনোদিতভাবেই এটা করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে শিক্ষাভিত্তি প্রাপ্তদের তালিকা দেয়ার যে প্রস্তাব বোর্ডে দেয়া হয়েছে তা চেয়ারম্যান অস্বীকার করছেন। আরাস্তু খান বলেন, যারা অতীতে শিক্ষা ভিত্তি পেয়েছে তাদের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চেয়ে এটিও সঠিক নয়। আমাদের শিক্ষা ভিত্তি নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। তারা দেশের সম্পদ তাদের তালিকা আমরা কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনায়লে দেবে। যিনি এ তথ্য মিডিয়াকে দিয়েছেন তিনি ভুল করেছেন। এটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য হতে পারে।

তবে বিভক্তির কথা স্বীকার করতে না চাইলেও এটি এখন সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারন বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনিসহ(আহসানুল পারভেজ) অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক স্ট্যাটাসে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ লিখেন, অশুভ শক্তি ইশারায় আমার শত চেষ্টার পরেও রাষ্ট্র বিরোধী শক্তি পূনর্বাসিত হয়েছে এবং জাতির পিতার খুনীদের সাথে সংশ্লিষ্টরা ফিরে আসছেন নেতৃত্বে। আগামী বৎসর এই ব্যাংকটিকে রাষ্ট্র বিরোধী কাজে ব্যবহার করার নীল নকশা সম্পাদন হচ্ছে।

একটি অনলাইন পোর্টালে তিনি আরও স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক আবারও স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে চলে গেছে।

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কী সম্পর্ক?

  • ৬ জানুয়ারি ২০১৭
ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর বিরাট প্রভাব আছে বলে অভিযোগ করা হয়ছবির কপিরাইটISLAMI BANK LTD
Image captionইসলামী ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর বিরাট প্রভাব আছে বলে অভিযোগ করা হয়

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শীর্ষ পদগুলোতে যে রদবদল ঘটানো হয়েছে, তার ফলে ইসলামী ব্যাংকের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার ব্যাংকটির বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সভায় আরাস্তু খানকে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয়। তার জায়গায় নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে আবদুল হামিদ মিয়ার নাম প্রস্তাব করা হয়।

ইসলামী ব্যাংকে বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর একটা বিরাট প্রভাব ছিল বলে মনে করা হয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকটির দিক থেকে এসব অভিযোগ জোর গলায় অস্বীকার করা হয়েছে।

রদবদল নিয়ে প্রশ্ন

ইসলামী ব্যাংকে হঠাৎ করে যেসব রদবদল ঘটানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যাংকটি সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নান। তিনি বলেন, যেভাবে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, তার পেছনে কোন সৎ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না।

“এসব পরিবর্তনের কোন যুক্তি আমি পাচ্ছি না। হঠাৎ করে চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়ে গেলেন, তিনি পদত্যাগ করলেন। ভাইস চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেন, তিনিও পদত্যাগ করলেন। এমডিও পদত্যাগ করলেন। এবং সম্পূর্ণ নতুন এক ব্যক্তি, যিনি মাত্র কদিন আগে বোর্ডে যোগ দিয়েছেন, তিনি চেয়ারম্যান হলেন…. এগুলো কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না। এর পেছনে সৎ উদ্দেশ্য আছে বলা যায় না। অবশ্যই এর পেছনে কোন না কোন রাজনীতি আছে।”

শাহ আবদুল হান্নান বলেন, এসব পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হয়তো ইসলামী ব্যাংকে কোন দলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা। তবে তিনি দলটির নাম বলতে অস্বীকৃতি জানান।

তবে ইসলামী ব্যাংকে সর্বশেষ এসব পরিবর্তনের পেছনে সরকারের কোন ভূমিকা থাকার কথা । অস্বীকার করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের বোর্ড পরিবর্তন করা হয়েছে। সুতরাং এখানে কোন গোষ্ঠী বা দল বা ব্যক্তির সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে, এমন বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। আমি বিশ্বাস করি সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এটা করা হয়েছে।”

বাংলাদেশে সরকারী-বেসরকারী সব ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকই এখন সবচেয়ে বড় ব্যাংক। মুনাফার দিক থেকেও ব্যাংকটির অবস্থান শীর্ষে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এটিকে বাংলাদেশের সেরা ব্যাংকের পুরস্কার দেয় লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমসের ব্যাংকার ম্যাগাজিন।

ইসলামী ব্যাংক 'দ্য ব্যাংকার' ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বাংলাদেশের সেরা ব্যাংকছবির কপিরাইটTHE BANKER
Image captionইসলামী ব্যাংক ‘দ্য ব্যাংকার’ ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বাংলাদেশের সেরা ব্যাংক

সেই পুরস্কার নিতে বিদায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান লন্ডনে এসেছিলেন। সেসময় বিবিসির স্টুডিওতে এসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্কের কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেন।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক কী? এ প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, “শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ইসলামী ব্যাংকের কোন ধরণের আইনি বা অন্য কোন ধরণের সম্পর্ক নেই।”

ইসলামী ব্যাংক যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সেখানে বিদেশি বিনিয়োগই ছিল সবচেয়ে বেশি, মোট বিনিয়োগের ৭০ শতাংশই এসেছিল ১১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে। সেখানে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, দুবাই ইসলামী ব্যাংক এদের বিনিয়োগ ছিল।

অন্যদিকে বাংলাদেশের যে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ, তার মধ্যে দশ শতাংশ এসেছে শেয়ার বাজারে ছাড়া আইপিও(ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) থেকে। বাকী যে বিশ শতাংশ বিনিয়োগ, তার পঁচিশ শতাংশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন সেখান থেকে সরকারী বিনিয়োগ তুলে নেয়ার আগে পর্যন্ত।

কিন্তু ইসলামী ব্যাংক যেভাবে পরিচালিত হতো, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর একটা বিরাট প্রভাব ছিল, তাদের ইচ্ছেমতই সবসময় ব্যাংকটি পরিচালিত হয়েছে, এমন অভিযোগ বহুবার ব্যাংকটির বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল মান্নানছবির কপিরাইটSYED ZAKIR HOSSAIN
Image captionইসলামী ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল মান্নান

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের মূলধনে যেমন কোন বিশেষ দলের বা মতের সম্পর্ক ছিল না, আমাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম বা ডিপোজিট যারা করছেন, সেখানেও কোন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা কখনো প্রমাণিত হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “আমার গত ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমরা সম্পূর্ণ পেশাদারীত্বের ভিত্তিতে এই ব্যাংকটি পরিচালনা করেছি। এবং শুধু পেশাদারীত্বের কারণেই ইসলামী ব্যাংক সারা বিশ্বে এত সুনাম অর্জন করেছে।”

ইসলামী ব্যাংক তাদের নিয়োগ, ব্যবসা, বিনিয়োগ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে কেবল একটি দলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ, সে অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ অসত্য।”

তবে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল মতিন স্বীকার করছেন, ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে যে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা আছে, সেরকম একটা ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে।

ব্যাংকের সাম্প্রতিক বড় রদবদলগুলো কি তাহলে এটিকে একটি দলের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই করা হচ্ছে?

এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “অনেকটা তাই, সেটা বলতে পারেন। এই পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে আমরা করার চেষ্টা করছি। এই ব্যাংকে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতিতে এমন কিছু ছিল, যে কারণে একটা পার্টিকুলার দলের লোক ছাড়া এখানে অন্য কারও ঢোকাটা বলতে গেলে শূন্যই ছিল। সেখানে এখন আমরা নজর দিচ্ছি।”

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল মতিন আরও বলেন, তাদের আনা পরিবর্তনগুলোতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাইতে ব্যাংকের গ্রাহকের স্বার্থকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন।

“ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যা কিন্তু এক কোটি সতের লাখের উপরে। জামানত আছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। কর্মচারীর সংখ্যা সাড়ে তের হাজার। এখন এই সাড়ে তের হাজার কর্মচারী যদি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের অনুসারী হয়েও থাকে, এক কোটি সতের লক্ষ গ্রাহক কিন্তু ঐ দলের পক্ষে না, ঐ মতাদর্শের পক্ষে না। এখন আমাদের দেখতে হবে, আমরা কি এক কোটি সতের লাখ গ্রাহকের স্বার্থ দেখবো, নাকি সাড়ে তের হাজার কর্মচারী, যারা হয়তো একটি পার্টিকুলার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের স্বার্থ দেখবো?”বিবিসি

Check Also

‌‘আ.লীগ-বিএনপি বা যে কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।