কৌশলগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক : হর্ষ বর্ধন

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন কৌশলগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। পারষ্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে আমরা টেকসই সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্ক থেকে দুই দেশের জনগনই উপকৃত হবে।

 

 

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে হাইকমিশনার এ সব কথা বলেন। ডিকাব টক নামে পরিচিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস। স্বাগত বক্তব্য দেন ডিকাব সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।

তিস্তার পানি বন্টন ইস্যু-সংক্রান্ত এ প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, সম্প্রতি দিল্লি সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, দুই দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সই করবে। এটাই ভারতের অবস্থান।

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই চুক্তি সই হবে কিনা – জানতে চাওয়া হলে শ্রিংলা বলেন, চুক্তিটি যত শিগগির সম্ভব সই হবে। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। ভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু থেকে ভারত দূরত্ব বজায় রাখে। তবে বাংলাদেশ যদি চায় ভারত আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা দিতে পারে। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি সই না হলেও ভারত থেকে নদীর পানি প্রবাহ কিন্তু বন্ধ থাকছে না। চলতি শুষ্ক মৌশুমেও এক হাজার ৮০০ কিউসেক পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। এটা অবশ্যই সন্তোষজনক।

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছিল। এই এমওইউ’র বাস্তবায়ন অগ্রগতি কতটুকু- প্রশ্ন করা হলে হাইকমিশনার বলেন, এমওইউটি বাস্তবায়নের জন্য স্ট্যার্ন্ডাড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) সই করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটির সাথে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় জড়িত এবং বিষয়টি বেশ জটিল। তবে আমরা যত শিগগির সম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভেইক্যাল এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) অনুসমর্থন করতে অনীহা প্রকাশ করেছে ভুটানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কী- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভুটান চুক্তি অনুসমর্থন করতে অপারগতা প্রকাশ করলেও বিবিআইএনের অন্যান্য দেশকে এমভিএ বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে বলেছে। পরে ইস্যুটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য সম্ভব হলে ভুটান তাতে যোগ দেবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তিটিতে সংশোধনী আনতে হবে।

বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোরের অগ্রগতি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নে জবাবে হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে থাইল্যান্ডের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। তাই আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় ভারত পিছিয়ে নেই।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসন প্রচেষ্টা থেকে ভারত নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে- একজন সাংবাদিকের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন শ্রিংলা।

অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে বাংলাদেশকে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, গত বছর দেড় লাখ বাংলাদেশী ভারত ভ্রমণ করেছেন। এর একটি অংশ যদি অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা ব্যবহার করতে চায়- ভারতের বিমান বন্দরগুলো তা সামাল দিতে পারবে না। তবে ভারতের ভিসাব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে শিথিল করা হচ্ছে। এখন দীর্ঘমেয়াদি ‘মাল্টিপাল এন্টি’ ভিসাও দেয়া হচ্ছে।

শ্রিংলা বলেন, পৃথিবীর কোনো অঞ্চল সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিমুক্ত নয়। আজ (মঙ্গলবার) ম্যানচেস্টারে বোমা হামলার ২০ জনের বেশী মানুষ নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে গত জুলাইয়ে রাজধানীর গুলশানে হোলে আর্টিজানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এর পর থেকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে ৩০টি উগ্রবাদবিরোধী অভিযান চালিয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ, ইমাম সম্প্রদায়সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে উগ্রবাদবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হোলে আর্টিজানে হামলার পর বাংলাদেশকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সহায়তা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে।

সীমান্তে ফেলানী হত্যাকে অযৌক্তিক হিসাবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে সীমান্ত হত্যা ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। এখন তা বছরে ২০ এর কোঠায় রয়েছে। আক্রান্ত হওয়া ছাড়া বিএসএফকে গুলি না চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তবে এর ফলে বিএসএফের ওপর আক্রমণও বেড়ে গেছে।

ভারতের সহায়তায় রামপাল কায়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে হাইকমিনার বলেন, জমি স্বল্পতার কথা বিবেচনা করে এখন ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশে রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভারতের বেসরকারি কোম্পানিগুলো এ খাতে ব্যাপকভিত্তিক বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

হাইকমিশনার বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, হতে পারে তা অর্থনেতিক বা রাজনৈতিক। তবে যখন যে ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবেলা করা হবে। ইতোমধ্যে দীর্ঘদিনের অনিষ্পন্ন ইস্যু স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন, সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি, ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ-প্রক্রিয়া থমকে গেছে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প হাতে নেয়া হলে তা বাংলাদেশকে জানিয়েই করা হবে।

 

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।