ঠিকানা হারাচ্ছে পাঁচ হাজার উদ্বাস্তু গত ৮ বছরেও আইলায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী

ঠিকানা হারাচ্ছে পাঁচ হাজার উদ্বাস্তু

গত ৮ বছরেও আইলায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী

বৃহস্পতিবার ২৫ মে ২০১৭ |

গত ৮ বছরেও আইলায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী

আইলায় সব হারিয়ে দীর্ঘ ৮টি বছর পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর এখন এভাবেই বসবাস করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা –

আব্দুর রাজ্জাক রানা : আট বছর ধরে দাকোপের ৩২ নং পোল্ডারের বাঁধের ওপর বসবাস করছেন দীপংকর দাস। দুই সন্তানের জনক তিনি। ঋষি সম্প্রদায় হওয়ায় সব স্থানে বসতি গড়ার সামাজিক অনমুতি নেই তার। কয়েক পুরুষ তারা নদীর তীর, খালের পাড় বা ওয়াপদা বাঁধের গায়ে বসতি তৈরি করে বসবাস করছে। কিন্তু এখন আর বাঁধের ওপর বসবাস করার সুযোগ নেই। দীপংকর মতো উচ্ছেদ হওয়া দাকোপ, রামপাল, মোরেলগঞ্জ এবং শরণখোলার বাঁধ ও বানভাসি প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখন উদ্বাস্ত। আজ ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ৮ বছর পূর্তি। ২০০৯ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে লণ্ড ভণ্ড হয়ে যায় দক্ষিণ জনপদের উপকূলীয় অঞ্চল। সহায় সম্বলহীন মানুষগুলো মানুষ এখন উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে।
খুলনাঞ্চলে বেড়িবাঁধের উপর বসবাসকারি প্রায় ৫ হাজার উদ্বাস্ত ঠিকানা হারাচ্ছে। বেড়িবাঁধ মেরামতে বিশ্ব ব্যাংকের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রাপ্ত অর্থে এসব ভূক্তভোগীরা রিসেটেলমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ সংকটের কারণে এরা অন্যত্র জমি কিনে বসাবাসের ঘরও বানাতে পারছে না। ফলে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব হারানো মানুষগুলোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াপদা বাঁধ উন্নয়ন, সংস্কার, নতুন করে সংযোগ স্থাপনের লক্ষে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় তিন হাজার ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে গ্রহণ করা এ প্রকল্পটি বিদেশী ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ (সিইআইপি)। এর আওতায় বাঁধ উন্নয়নের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ, নিষ্কাশন খাল খনন/পুনর্খনন, পানি নিষ্কাশন, অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত, নদী তীর সংরক্ষণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও বাঁধের ওপর জীবন কাটিয়ে দেয়া জলবায়ু উদ্বাস্তদের সরিয়ে দিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন (রিসেটেলমেন্ট) করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের পুরো কাজকে তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। যার প্রথম প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। এ প্যাকেজের উন্নয়ন পরিকল্পনায় খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডার, বাগেরহাটের সদর ও রামপাল উপজেলার ৩৫/৩ এবং শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৩৫/১ নম্বর পোল্ডার বেছে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিইআইপির নির্বাহী প্রকৌশলী আ. হান্নান। তিনি বলেন, চারটি পোল্ডারে চলমান উন্নয়ন কাজের লক্ষ্যে এরই মধ্যে বাঁধের ওপর ও দুই পাশে বসবাসরত এক হাজার ৫০০ লোককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর পুরো প্রজেক্টের মধ্যে এ কাজের নাম দেয়া হয়েছে রিসেটেলমেন্ট কর্মসূচি।
এদিকে বাস্তবতা হচ্ছে, কোথাও রি-সেটেলমেন্ট হয়নি। শুধু তাদের বসবাস ও ব্যবহারের ঘর উচ্ছেদ করে তার একটি মূল্য নির্ধারণ করে টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। সে টাকায় হয়তো আরেকটি ঘর বাঁধা যায়, কিন্তু তা দিয়ে জমি কিনে বসত গড়া সম্ভব নয়।
দীপংকর দাস জানান, বিশ্ব ব্যাংকের এ প্রকল্প থেকে তিনি এক লাখ টাকা পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত তিনি অন্যেও বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। জায়গা কিনে বাড়ি করতে পারেননি। তিনি বলেন, ৭ বছর ধরে সে সেখানেই বসবাস করছে। এর আগে দাকোপ খেয়াঘাট সংলগ্ন ঢাকী, চুনকুড়ি ও ভদ্রা-এ তিন নদীর মোহনায় বাঁধের গায়ে তাদের সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষের ৪৫ বছর কেটেছে। দুর্যোগ সিডর, আইলার পর প্রায় ৭ বছর আগে তাদের পরিবারগুলো ৩২ নম্বর পোল্ডারে এসে নতুন আশায় বসতি গড়ে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের বেশ কয়েকটি পরিবারকে এরই মধ্যে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দীপংকরের বসতঘরের বিনিময়ে তাকে এক লাখ ২৭ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ টাকায় অন্য কোথাও সে ঘর তুলতে পারবে। কিন্তু জায়গা কিনতে পারবে না বলে দাবি করেছেন তিনি।
ক্লাইমেট উদ্বাস্তুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, এ প্রকল্পে ছিন্নমূল মানুষগুলো তাদের শেষ ঠিকানা হারাচ্ছে। তার ভাষায়, ‘একজন জেলেকে তার বসতঘরের মূল্য দিয়ে কোনো উপজেলা সদরে পাঠিয়ে দিলে সে তার পেশা হারাবে। একে পুনর্বাসন বলা যায় না। ঐতিহ্য, জীবিকা ও সম্মান-এ তিনটি মানদ- রক্ষা করা না হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না। সেক্ষেত্রে শুধু কিছু অর্থ ধরিয়ে দিয়ে ওয়াপদা বাঁধের ওপর থেকে যাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে তারা আবারও উদ্বাস্তবা ছিন্নমূল হয়ে গেল।’
দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘নদী শাসন না করে শুধু বাঁধ উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না। এজন্য স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। তবে এ বিষয়ে কেউ তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি’।
এদিকে এ অঞ্চলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা। দেখতে দেখতে আইলার ৮ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কয়রার অনেক পরিবার এখনও সরকারি তহবিলের সহায়তা না পেয়ে বাঁধের ওপর বসবাস করছে। অভিশপ্ত এই দিনটির কথা মনে হলে আজও ভয়ে শিউরে ওঠেন উপকূলবাসী। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে এ অঞ্চলের অসহায় মানুষ। আইলার কারণে কয়রা উপজেলার অনেক এলাকায় দির্ঘ দিন কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে পারেনি। তবে দুই বছর হলো কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করতে পেরেছে। তবে এ জনপদের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অভাব অনটন বেড়েই চলেছে। শুধু ঘর-বাড়ি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসা সেবাসহ নানা সমস্যায় এখনও জর্জরিত।
পাউবোর আমাদীর উপ-বিভাগীয় শাখার কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম বলেন, সম্প্রতি পাউবোর চারটি পয়েন্টের বড়িবাধ সংস্কারের টে-ার হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটি দেয়ার কাজ চলছে। তাছাড়া ভাঙন কবলিত বাঁধে ডাম্পিং ব্লক ফেলা হয়েছে। এছাড়া, ভাঙনের কবলে থাকা বাঁধগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর মানুষ এখনও সেই ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে কষ্টের মধ্যে বেড়িবাঁধ আকড়ে আছেন তারা। আইলার পর ভেঙে যাওয়া পবনা বাঁধ, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, শিকারিবাড়ি, পাথরখালি মেরামত হয়েছে। কিন্তু কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় মাটি দেয়ার উদ্যোগ না নেয়ায় বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকার বেড়িবাঁধগুলো অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ সকল বাঁধ সংস্কার করা হয়নি। ফলে এসব বাঁধ ভেঙে আবারো গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইলার জলোচ্ছ্াসে খাবার পানির উৎস নষ্ট হয়ে যায়। গত ৮ বছরেও বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠী দারুণ কষ্টে রয়েছেন। তারা ১০/১২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। পরিকল্পনা মাফিক গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুকুর সংস্কার করে পিএসএফ স্থাপন করা যায়নি এখনও। আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আজও সংস্কার হয়নি। প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষকে দুর্যোগকালীন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নেই। উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো এখনও পুরোপুরি সংস্কার সম্ভব হয়নি।
কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যাপক আব্দুল আ. মালেক বলেন, ৮ বছর কেটে গেলেও এখনও কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, কয়রা সদর ও মহারাজপুর এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের অনেক মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন। আইলায় তাদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সব বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। নিজস্ব কোনও জমি না থাকায় তারা সরকারের গৃহনির্মাণ তহবিলের সহায়তা পাননি। এমনকি আজ পর্যন্ত তাদের কোনও খাস জমিও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আইলার পর জরুরী ভিত্তিতে যেসব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো জোয়ারের চাপ বা ভারী বর্ষণে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতেও আবার কাজ করা প্রয়োজন।
কয়রার পরিবেশবিদ সানা মিজানুর রহমান বলেন, পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আর দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে দক্ষিণ উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবন কোলঘেষা কয়রা।
কয়রা উপেজলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের কয়রার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। যে জন্য দুর্যোগে হাইরিক্স জোন হিসেবে কয়রা এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রাবাসী প্রাকৃৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো গোলখালী, জোড়শিং, আংটিহারা, ৪নং কয়রা, ৬নং কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, কাটকাটা, নয়ানী, তেতুলতলার চর, পাথরখালী, হরিহরপুর, ঘড়িলাল, লোকা, গীলাবাড়ি ও হড্ডা। এসব এলাকার মানুষ দুর্যোগকালে শিক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তিনি সরকারি প্রাথমিক ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী অধিদফতরের প্রকৌশলী নিরাপদ পাল জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদী ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, কয়রা, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালী ইউনিয়নে যে সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে তা যথেষ্ট। কিন্তু দক্ষিণ ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে আরও সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়াজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম মিজান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতিক দুর্যোগে ও নদী ভাঙনের কারণে জমির পরিমাণ কমছে। আইলার আগে ৭ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হতো। আইলায় পর তার একটু কম চাষাবাদ হয় বলে তিািন জানান। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাবাসি আইলার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা কামনা করছেন।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বদিউজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলবাসীর আশ্রয়ের জন্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলাবাসীর জন্য দুই শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ জরুরী। তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে আইলা ক্ষতিগ্রস্ত কয়রার উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। আইলা বিধবস্ত কয়রা এলাকার মানুষের পুনর্বাসনে সরকারিভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। কয়রাকে আইলার পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা মাফিক বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভা

শাহ জাহান আলী মিটন , সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরা   জেলা  জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সাতক্ষীরা জেলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।