ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকা: অবশেষে অপসারণ করা হলো সুপ্রিমকোর্টের সামনের গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এর অপসারণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় শুক্রবার ভোরে।
এ সময় ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বামপন্থি রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। তারা সুপ্রিমকোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে ওইসব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো।
ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভাস্কর্যটির স্থপতি মৃনাল হক।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গণপূর্ত অধিদফতর ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার কাজে সহায়তা করছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এ কাজ হচ্ছে।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষই সরাচ্ছেন।
রাত ১২টার পর কয়েকজন শ্রমিক ভাস্কর্য সরানোর কাজ শুরু করেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে সুপ্রিমকোর্টের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
এ সময় আদালতের গেটের বাইরে সংবাদকর্মীসহ উৎসুক দর্শকের ভিড় জমে। তবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা কাউকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়নি। আদালতের বাইরের সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এদিকে রাত দেড়টার দিকে ওই ভাস্কর্যটির ভাস্কর মৃণাল হক সুপ্রিমকোর্টের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সাংবাদিকদের বলেন, কর্তৃপক্ষ তাকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নিতে বলেছে। আগামীতে এনএক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি বসানো হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
কেন সরিয়ে নেয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের ও জনগণের শান্তির জন্য অনেক সময় অনেক কিছু করতে হয়। এ ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়াও তেমনি একটি কাজ।
তিনি বলেন, অনেকে এটিকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য বলে মনে করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এটি শাড়ি-ব্লাউজ পরা একটি বাঙালি নারীর ভাস্কর্য।
মৃণাল হকের শিল্পকর্মটি মাটির নিচ থেকে তুলে আনা হবে। মতিঝিলের পূর্বাণী হোটেলের সামনে বলাকা ভাস্কর্য, বিমানবন্দরের সামনে লালন ভাস্কর্য, শেরাটনের সামনে ঘোড়ারগাড়ি নিজ খরচে তৈরি করেছেন তিনি। এর মধ্যে লালন ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মৃণাল হক বলেন, আমেরিকায় আমি রাজকীয়ভাবে ছিলাম। নিউইয়র্ক সিটির বিউটিফিকেশনের দায়িত্বে ছিলাম। আমি সব ফেলে দিয়ে নিজের দেশে এসেছি। আমরা খালি দেশকে মুখে ভালোবাসি। আর আমি প্র্যাক্টিক্যালি ভালোবাসি। অনেকেই আমার বিরুদ্ধে গেছে, তবু আমি দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাই।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমীর শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন। এ মূর্তি অপসারনের বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়। রোজা শুরুর আগে এ ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল ইসলামী সংগঠনগুলো।
ওলামা লীগও তা অপসারণের দাবি জানায়।
সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিক থেকে অপসারণের কাজ শুরু হয়। এর আগে এই ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম দাবি জানিয়ে আসছিল।
অপসারণের সময় ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক নিজে উপস্তিত ছিলেন। তিনি বাইরে থাকা সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর তার সাথে আলোচনা হয়। এবং চাপের মুখেই এই ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ভাস্কর্য সরিয়ে কোথায় নেয়া হবে সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য তিনি দিতে পারেননি।
রাতে সেখানে তার উপস্তিত হওয়ার কারণ ব্যাখা করে তিনি বলছিলেন ভাস্কর্যটা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা তত্বাবধান করার জন্য সেখানে তিনি উপস্তিত হয়েছেন।
সাধারণ কয়েকজন শ্রমিক এই ভাস্কর্য সরানোর কাজটি করেছেন।
ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা ঢাকায় বিক্ষোভ করেন। সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সবার প্রতিষ্ঠান। কাজেই সেখানে এরকম মূর্তি স্থাপন করা যাবে না।