ক্রাইমবার্তা ডটকম:আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসটি মুসলমানদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ, যা মাসটির নামকরণ থেকেই বোঝা যায়। এ মাসটির বাংলা উচ্চারণ আসলে রামাজানুন, যা রামাজুন মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত। আর রামাজুন আরবি শব্দটির বাংলা অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে ফেলা, ভষ্ম করা, খাঁটি করা ইত্যাদি। তেমনি রোজা মুমিন বান্দাকে পুড়িয়ে (শারীরিক কষ্ট দিয়ে) তার গুনাহকে ভষ্ম করে ইমানকে খাঁটি করে তোলে।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেসালাতপ্রাপ্তি
এই রমজান মাসেই হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে রেসালাত প্রদান করা হয়েছিল। তিনি পেয়েছিলেন শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবীর অভিধা। আর আমরা তাঁর উম্মত হতে পেরে পেয়েছি সর্বকালীন মানবতার শ্রেষ্ঠ উম্মতের সম্মান। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানব কল্যাণের উদ্দেশে নির্বাচিত করা হয়েছে। (সূরা আল-ইমরান : ১১০)
পবিত্র কোরআন নাজিল
এই রমজানে বিশ্বমানবতার মুক্তি সনদ ‘আল-কোরআন’ নাজিল হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান হলো সে মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। মানবজাতির হেদায়েতের জন্য এবং হেদায়েত ও ভ্রষ্টতার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রচনার জন্য। (সূরা আল-বাক্বারা : ১৮৫)
লাইলাতুল ক্বদর
মাহে রমজানের গুরুত্বের অন্যতম দিকটি হলো লাইলাতুল ক্বদর। লাইলাতুল ক্বদর একটি মাত্র রাতের নাম হলেও তা গোটা মাসকেই মহিমান্বিত করে তুলেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কোরআন) নাজিল করেছি ক্বদরের রাতে। আপনি জানেন কি, কদরের রাত কী? কদরের রাত এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরাইল আ.) প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের পালনকর্তার নির্দেশসহ অবতীর্ণ হন। রাতটি ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত কল্যাণময়।’ শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদিস হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একবার রমজান মাসের আগমন হলে রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, হে লোক সকল, তোমাদের নিকট রমজান মাস আগমন করেছে। এটি অত্যন্ত বরকতময় একটি মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটা রাত আছে, যা এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে সত্যিকারের কপাল পোড়া। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ২১০৬, সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস : ১৬৪৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭১৪৮)
সীমাহীন সওয়াব
ইবাদত-বন্দেগির মৌসুম হলো মাহে রমজান। রমজান মাসে ইবাদত করে সীমাহীন পুণ্য অর্জন করা সম্ভব, যা বারো মাসের অন্য কোনো সময়ে সম্ভব নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, প্রত্যেক নেক কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়, শুধু রোজা ছাড়া। রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর পুরস্কার দেবো। আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকে আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে, তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫১, মোআত্তা ইমাম মালেক : ১১০০, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৮৮৯৪, মুসনাদে আহমাদ : ১০১৭৫, সুনানে ইবনে মাযা : ৩৮২৩) হজরত সালমান (রা.) বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেউ এ মাসে একটি নফল আমল করলে অন্য সময়ের একটি ফরজের সমান সওয়াব পাবে। আর এ মাসে কেউ একটি ফরজ আদায় করলে অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব লাভ করবে। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১৮৮৭, বায়হাকি, শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩৩৩৬)