সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর আপিলে দশম দিনের শুনানির একপর্যায়ে মঙ্গলবার এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
জবাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপনি পরাধীন নন, প্রতিদিন কাগজ খুললে আপনার অনেক বক্তব্য পাওয়া যায়।’
পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি তো প্রেস কনফারেন্স করে কথা বলি না। আমি আমার প্রসিডিংসের (প্রক্রিয়া) মধ্যে থেকে কথা বলি।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট দেশের জনগণের স্বার্থে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সব সময় পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা করুণ অবস্থায় আছি। সরকার প্রাইমারি স্কুলে, ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার দেন। কিন্তু আমার বিচারকদের একটা কম্পিউটার দিতে পারেন না! আমার বিচারকদের থাকার জায়গা নেই। এই সুপ্রিমকোর্টের একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং (প্রশাসনিক ভবন) নেই। সুপ্রিমকোর্টের অনেক অফিসারের বসার রুম নেই। অথচ দেশের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের অবদান কোনো অংশে কম নয়।’
শুনানির একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টান্তমূলক কাজের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি হাজারটা উদাহরণ দিতে পারি যে, দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে আমাদের সুপ্রিমকোর্ট। ওই যে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা, সারা পৃথিবীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল। সারাদেশের মানুষ একটা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করল। এই সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারফেয়ারেই (হস্তক্ষেপ) ওই মামলার জট খুলে গেল।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি হাজারীবাগের ট্যানারির কথা বলি, তাহলে বলব, এই সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারফেয়ারেই ট্যানারি স্থানান্তরিত হলো। এই শহর দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেল। আমি যদি বলি, গুলশান, বারিধারা লেক আর শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারফেয়ারেই রক্ষা পেল। এই সুপ্রিম কোর্ট দেশের জনগণের স্বার্থে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সব সময় পদক্ষেপ নিয়েছে।’
বক্তব্য শেষে আদালত আগামী ১ জুন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন। এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে মঙ্গলবার অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও এ জে মোহাম্মদ আলী তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
এর আগে আদালতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ড. কামাল হোসেন, এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ, এজে মোহাম্মদ আলীসহ নয়জন তাঁদের বক্তব্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত দেন। শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মতামত দেন।