রোজার মাসে প্রেক্ষাগৃহে অশ্লীল সিনেমার দাপট!

ক্রাইমবার্তা বিনোদন ডেস্ক: পবিত্র রোজার শুদ্ধতা রক্ষা করতে সিনেমা প্রযোজকরা কোনও ছবি মুক্তি দেন না এ মাসে। ফলে সারাদেশের বেশিরভাগ সিনেমা হলই বন্ধ থাকার কথা। তবে এ মাসেও দেশের বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহের মালিক বেশি মুনাফার আশায় সিনেমা প্রদর্শন অব্যাহত রাখেন। এবং বিস্ময়কর বিষয় হলো যার বেশিরভাগ সিনেমাই মূলত ‌অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত। সরেজমিন এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহেই চলছে অশ্লীল ছবির দাপট। তথ্য ও ছবিতে সেই চিত্রই তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।14
মিরপুর বাংলা কলেজের পাশেই এশিয়া সিনেমা হল। বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী, গাবতলী, থেকে কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দারাই এ সিনেমা হলের মূল দর্শক। রাজধানীর অন্য সিনেমা হলগুলোর চেয়ে এখানকার টিকেটের দামও কম। মাত্র ৩৫ টাকায় ডিসিতে বসে সিনেমা দেখতে পারেন দর্শকরা। সারা বছরেরর মতো রমজান মাসেও এ সিনেমা হলে নিয়মিত সিনেমা দেখানো হয়। বছরের অন্য সময় নতুন ও ভালো মানের ছবিগুলো এ হলে দেখানো হলেও ৩১ মে দুপুরের দিকে দেখা যায় ভিন্নচিত্র।
হলটিতে প্রদর্শন করা হচ্ছে এক সময়ের অশ্লীল ছবির তকমা পাওয়া ‘ডাকুরানী’। হলের ম্যানেজারকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও কথা হয় টিকেট কাউন্টারে টুপি মাথায় দিয়ে বসে থাকা ফয়সাল নামের এক টিকেট বিক্রেতার সঙ্গে। রমজান মাসেও কেন অশ্লীল ছবি চলছে জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, ‘নতুন ছবি নেই তো। তাই এসব ছবি চালানো হচ্ছে। এই সময়ে যারা রোজা রাখে না তারা সিনেমা দেখতে আসে। এ ছাড়া হিন্দু, খ্রিস্টানরাও তো আছে। তারাও সিনেমা দেখে।’
তিনি আরও জানালেন রমজান মাসেও প্রতিদিন তিনটি করে শো চলছে সেখানে। এশিয়া সিনেমা হল থেকে ১০ মিনিট দূরত্বে রয়েছে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হল। এখানেও চলছে অশ্লীল ছবি। ‘লাকী সেভেন’ নামের এ সিনেমাটি এখানে গত সপ্তাহ থেকে প্রদর্শন করা হচ্ছে। হলের কর্মকর্তা আজম বলেন, ‌‘দর্শক ভালো-মন্দ সবকিছুই দেখে। আর রমজান মাস বা অন্য মাস বলে কোনও কথা নেই, সারাবছর এসব ছবিই বেশি চলে।’
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রখ্যাত ফার্মগেটের মোড়েই পাশাপাশি রয়েছে দুটি সিনেমা হল। একটি আনন্দ অন্যটি ছন্দ। হল দুটির মালিক এক হলেও দুটি হলের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আনন্দ সিনেমা হলে ভালো ভালো ছবি প্রদর্শন করা হলেও ছন্দ সিনেমা হলে সারা বছরই চলে অশ্লীল ছবি। বাদ যায়নি রমজান মাসও। এ মাসেও হলটিতে চলছে ‘নয়া কসাই’ নামের একটি অশ্লীল ছবি। পরের সপ্তাহে চলবে এম এ রহিম পরিচালিত আরেক অশ্লীল ছবি ‌‘অর্ডার’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল কর্মকর্তাদের কেউই কথা বলতে রাজি হননি। কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‌‘এ ছবি (নয়া কসাই) ভালো না মন্দ তা আমি জানি না। আমি ছবি দেখি না।’
এদিকে কাকরাইলে অবস্থিত রাজমনি সিনেমা হলের ভবনেই রয়েছে ‌রাজিয়া সিনেমা হল। এখানেও চলছে ‌‘কাটা লাশ’ নামের একটি অশ্লীল ছবি। অপরদিকে মতিঝিলের টিকাটুলিতে অবস্থিত অভিসার সিনেমা হলে চলছে অশ্লীল ছবি ‌‘ডাকু রানী’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার নামে এক হলকর্মকর্তা বলেন, ‘রমজান মাসে নতুন কোনও ছবি মুক্তি পায় না তাই এসব পুরাতন ছবি চালাই। আর পুরনো ভালো ছবির চেয়ে এসব ছবিই দর্শক বেশি খায়।’
এদিকে পুরান ঢাকার জজ কোর্ট সংলগ্ন প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ আজাদ ম্যানসনে সারা বছরের মতো এই রোজার মাসেও আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে চলছে ‌‘জাদরেল’ নামের অশ্লীল ছবিটি!
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, প্রায় প্রতি রমজানে এমন অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শন এবং বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো অশ্লীল পোস্টারগুলোর মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অধুনালুপ্ত ‘অশ্লীল যুগ’ যেন বার বার ফিরে আসে।
রমজান মাসেও সিনেমা হলগুলোতে প্রকাশ্যে এমন অশ্লীল সিনেমা চালানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‌‘রমজান মাসেও যারা অশ্লীল ছবি চালাচ্ছে, তারা কাজটি মোটেও ঠিক করছে না। আমরা যদিও সারা দেশের সিনেমা হলগুলোতে অশ্লীল ছবি যেন না চালায় সেজন্য তথ্যমন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন পাঠিয়েছি। এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আর ডিসিরা চাইলে সিনেমাহলে অশ্লীল ছবি প্রদর্শন বন্ধ করতে পারবেন। আশা করি আপনারা ব্যাপারটি ডিসিকে জানাবেন।’
এদিকে এই বিষয়ে ঢাকা জেলার ডিসি মোহাম্মদ সালহউদ্দীনের সঙ্গে মুঠোফোনে অসংখ্যবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের প্রেক্ষাগৃহ গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও বেশিরভাগ হলে চলছে অশ্লীলতার একই চিত্র।

Check Also

অন্তর্বর্তী সরকারকে ডি-স্ট্যাবিলাইজ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ফারুকী

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নানান ইস্যুতে প্রতিবাদের সুরে কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্র-জনতাকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।