দুই দফা দাবিতে সাতক্ষীরায় (তাবিনাজ) এর মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান।

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নাজমুল আলম মুন্না, সাতক্ষীরা। বুধবার সকাল ১০ টায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ধোয়াঁবিহীন তামাকের কার্যকর কর বৃদ্ধি না করার প্রতিবাদে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক চত্তরে তামাক বিরোধী নারী জোট তাবিনাজ এর পক্ষে শতাধিক নারী মিলিত হয়ে দুই দফা দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিনের কাছে স্বারক লিপি প্রদান করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, বরসা’র সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুৃল আলম মুন্না, জিডিএফ সভানেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, চুপড়িয়া মহিলা সংস্থা, অনন্যা মহিলা সমিতি,বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, খেয়া, সিবিও, হেড এর নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, সিরাজুন সঞ্জু, আফরোজা বেগমসহ সাতক্ষীরা নারীনেত্রীবৃন্দ।14
বাংলাদেশে বেশি তামাক দ্রব্যের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশে অর্ধেকেরও বেশি তামাক ব্যবহারকারী ধোয়াঁবিহীন তামাক যেমন জর্দা,গুল সেবন করেন। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এগুলোর উপর কর বাড়ানো হয়নি। আমাদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষতঃ নারীদের মাঝে এই পণ্য ব্যবহারের প্রবনতা সবচেয়ে বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুকি থেকে রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ বর্তমান বাজেটে নেই, যা অত্যান্ত হতাশাজনক। প্রস্তাবিত বাজেটে ( ২০১৭-১৮) ধোয়াঁবিহীন (গুল, জর্দা) তামাকপণ্যে কর না বাড়ানোর প্রস্তাব চরম জনস্বাস্থ্য বিরোধী এবং নারী বিরোধী বাজেট।15
বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩%(২ কোটি ১৯ লক্ষ) ধুমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭.২% (২ কোটি ৫৯ লক্ষ) ধোয়াঁবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ধোয়াঁবিহীন তামাক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর, বিশেষ করে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব নেতিবাচক। ধোয়াযুক্ত এবং ধোয়াঁবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পদ্ধতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে করারোপ করে তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু তামাক দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও উচ্চ হারে করারোপ এর মতো কার্যকর পদক্ষেপ এবারের বাজেটে নেই। এ পর্যন্ত করারোপের যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে তার ফলে পণ্যের মূল্য ক্রেতার ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে যেতে পারেনি। বিশেষ করে ধোয়াঁবিহীন তামাকদ্রব্য সংক্রান্ত করের কৌশল উল্লেখযোগ্যভাবে নেয়া হয়নি এবং জর্দা-গুল, সাদাপাতা অত্যান্ত কম দামে এবং যত্রতত্র খুচরাভাবে পাওয়ার কারনে ক্রেতা এর প্রতি আকৃষ্ট থাকে। ধোয়াঁবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যে ধরনের স্বাস্থ্য হুমকি সৃষ্টি করে সে দিক বিবেচনা করে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের জন্যে কার্যকর হারে কর/সুল্ক আরোপ করার জন্যে তাবিনাজসহ তামাক বিরোধী উন্নয়ন সংগঠন স্বদেশ, বরসা, জিডিএফ, হেডসহ কয়েকটি সংগঠন প্রস্তাব করেছে। ২০১৬-১৭ বাজেটে জর্দা ও গুলের উপর সম্পুরক শুল্কের হার ৬০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করা হয়েছে। এছাড়া পণ্য ২ টির আমদানি শুল্ক ১০০% থেকে বৃস্ধি করে ১৫০% নির্ধারন করা হয়েছে। সম্পুরক শুল্ক যতইবাড়ানো হোক না কেন ভিত্তিমূল্য এতা কম যে বাজারে এসব পণ্যের রাজস্ব আদায় খুবই দুর্বল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনবল সংকেেটর কথা বলা হয়। দেশে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জর্দা ও গুল কারাখানা থাকায় ঐসব কারাখানা থেকে কর সংগ্রহ করা কঠিন। সুতরাং জর্দা ও গুলের উপর প্রযোজ্য কর আহরণের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি।
বাংরাদেশে তামাকের উপর শুল্ক-কাঠামো অথ্যন্ত জটিল যেমন, সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর প্রথা, বিড়ির ক্ষেত্রে অতি স্বল্পমাত্রার ট্যারিফ ভ্যালু, গুল-জর্দার ক্ষেত্রে এক্স-ফ্যাক্টিরি প্রাইজ ইত্যাদি প্রথা চালু থাকায় দেশে তামাকের ব্যবহার ও ক্রয় ক্ষমতার হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে পৃথিবীর যেসব দেশে তামাকপণ্যের দাম অথ্যান্ত সস্তা বাংরাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তামাক উৎপাদনে অগ্রসর ভৌগলিক অঞ্চল সমূহ পর্যবেক্ষন করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জর্দা এবং গুলের প্যাকেট রাজস্ব আদায় নির্ধারনী কোন চিহ্নই নেই যা রাজস্ব ফাকির প্রত্যক্ষ প্রমান। এছাড়া জর্দা ও গুলের প্যাকেটের ধরণ ও মাপের ভিন্নতা কর ফাঁকির পথ সুগম করে। তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষকির একটি পন্য। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি উলদ্ধি করে এসডিজি এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ৩য় লক্ষমাত্রা অর্ঝনে ডব্লিউ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কনট্রোল বাস্তবায়নে অণ্যতম কৌশল হিসাবে নির্ধারন করা হয়েছে। এসডিজি এর আলোকে প্রনীত দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমকে সম্পৃক্ত হয়েছে। তামকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে ২ টি সুপারিশ নামা পেশ করেছেন তাবিনাজ সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর ভিত্তিক কর-প্রথা বিড়ির ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বাতিল করে কার্যকর ভাবে নিদ্রিষ্ট পরিমান স্পেসিফিক এক্সাইজ ভ্যাট নির্ধারণ করা এবং গুল-জর্দার ক্ষেত্রে এক্স-ফ্যাক্টরি প্রথা প্রভৃতি বাতিল করে প্যাকেট/কৌটা ওজন ও সাইজ অনুযাযী কার্যকরভাবে নিদ্রিষ্ট পরিমাণ কর আরোপ করার দবি জানিয়েছে।

 

Check Also

আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।