নিজস্ব প্রতিবেদক | জুন ৭, ২০১৭ –
শিক্ষক হতে চান যদি
সারাদেশে আছে প্রায় ৩৬ হাজার বেসরকারি নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হচ্ছে না। অনলাইনে আবেদন করতে হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বরাবর।
নতুন নিয়মে নিবন্ধন পরীক্ষা নিচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণদের দ্বিতীয় ধাপে নেওয়া হবে লিখিত পরীক্ষা। পরবর্তী ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নেওয়া হবে মৌখিক পরীক্ষা। দেশের কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা) নিবন্ধন ছাড়া চাকরির সুযোগ নেই। নিবন্ধন সনদই এখন যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি। সম্প্রতি নিবন্ধন পরীক্ষার সার্কুলার দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। আবেদনের শেষ তারিখ ১০ জুলাই। আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যাবে www.ntrca.gov.bd ওয়েবসাইট ও http://bit.ly/2rrqWgY লিংকে। পরীক্ষার সিলেবাস পাওয়া যাবে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে।
পরীক্ষা পদ্ধতি
বিসিএসের আদলে হচ্ছে নিবন্ধন পরীক্ষা। এনটিআরসিএর সদস্য (যুগ্ম সচিব) হুমায়ূন কবীর জানান, প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে, সময় এক ঘণ্টা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ২৫টি করে প্রশ্ন থাকবে প্রিলিমিনারিতে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য বরাদ্দ ১ নম্বর, প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.৫০ নম্বর। পাস করতে হলে কমপক্ষে ৪০ নম্বর পেতে হবে। প্রার্থীর ঐচ্ছিক বিষয়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। সময় ৩ ঘণ্টা। লিখিত পরীক্ষায়ও পাস নম্বর ৪০।
দেশের ২০টি জেলাশহরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেওয়া যাবে। পরীক্ষা হবে ২৫ আগস্ট। স্কুলপর্যায়ের প্রিলিমিনারি শুরু হবে সকাল ১০টায় ও কলেজপর্যায়ের পরীক্ষা হবে বিকাল ৩টায়। স্কুলপর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা হবে ৮ ডিসেম্বর এবং কলেজপর্যায়ের পরীক্ষা হবে ৯ ডিসেম্বর। দুটোর বেলায়ই পরীক্ষার সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। উত্তীর্ণ হলে মিলবে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ।
নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রিলিমিনারি পাস করলে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই শুধু মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় মেধাতালিকা।
প্রথমে উপজেলার প্রার্থীরা বিবেচনায় আসবে। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে জেলার মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ করা হবে। তাতেও প্রার্থী না পাওয়া গেলে বিভাগীয় তালিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বাংলা
স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাগধারা ও বাগবিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, অনুবাদ, সন্ধিবিচ্ছেদ, কারক বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ,
সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন ও লিঙ্গ পরিবর্তন থেকে প্রশ্ন আসে। ব্যাকরণের প্রায় প্রতিটি অংশ থেকে এক থেকে দুটি করে প্রশ্ন আসে।
প্রশ্ন আসে বাংলা সাহিত্য থেকে। স্কুলপর্যায়ের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক, বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ ও বাংলা প্রথমপত্র বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। কলেজপর্যায়ের জন্য নবম-দশমের সঙ্গে দেখতে হবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড বই। প্রথমপত্র বইয়ের প্রতিটি গদ্য ও পদ্যের লেখক পরিচিতির অংশটি ভালোভাবে পড়তে হবে।
ইংরেজি
বিগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবদুল কাদির জানান, ইংরেজির সব প্রশ্নই থাকবে গ্রামারের ব্যবহার থেকে। Completing sentences, Translation from Bengali to English, Parts of speech, Right forms of verb, Fill in the blanks with appropriate word or appropriate preposition, Transformation of sentences, Synonyms, Antonyms, Idioms and Phrases
থেকে প্রশ্ন থাকবে স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়ের প্রশ্নেই। পাশাপাশি কলেজের জন্য Identify appropriate title from story or article, Errors in composition, Uses of article-এর প্রস্তুতি নিতে হবে।
গ্রামার বই থেকে উদাহরণগুলো বারবার চর্চা করলে কাজে আসবে। বিগত বছরগুলোর নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ও বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্ন সমাধান করলেও বেশ কাজে দেবে।
গণিত
পাটিগণিতে গড়, লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত থেকে প্রশ্ন আসে উভয় পর্যায়ে। বীজগণিতে বর্গ ও ঘনসম্বলিত সূত্র ও প্রয়োগ, গসাগু, বাস্তব সমস্যা সমাধানে বীজগাণিতিক সূত্র গঠন ও প্রয়োগ, সূচক ও লগারিদমের সূত্র ও প্রয়োগ পড়তে হবে স্কুল পর্যায়ে। পাশাপাশি উৎপাদক সম্বলিত সূত্র ও প্রয়োগ ও অনুপাত-সমানুপাত পড়তে হবে কলেজ পর্যায়ে।
জ্যামিতির ক্ষেত্রে রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা, নিয়ম ও প্রয়োগ থেকে প্রশ্ন আসে স্কুল পর্যায়ে। কলেজ পর্যায়ে পরিমিতি ও ত্রিকোনমিতির সাধারণ ধারনা, নিয়ম ও প্রয়োগ পড়তে হবে।
বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতির সাধারণ ধারণা, বিভিন্ন সূত্র, নিয়মাবলি ও এর প্রয়োগ থেকে প্রশ্ন করা হয়।
বোর্ড প্রণীত অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের সব নিয়মের অঙ্ক সমাধান করলে কাজে দেবে। কলেজপর্যায়ের জন্য দেখতে হবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বই। জানতে হবে সংক্ষেপে সমাধানের টেকনিক।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, চলতি ঘটনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ, রোগব্যাধি ও চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, ইতিহাস ও সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ থেকে প্রশ্ন থাকে। আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশ পরিচিতি, মুদ্রা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা থেকে প্রশ্ন থাকে। প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, রোগব্যাধি, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য ও পরিবেশসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন আসতে পারে।
প্রিলিমিনারিতে টেকার পর
প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে ঢাকা জিপিও বক্স নম্বর-১০৩, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায়। লাগবে সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, স্নাতকপর্যায়ের নম্বরপত্র, নাগরিকত্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণ সনদ, সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদের অনলাইনে আবেদনের সময় উল্লিখিত ঐচ্ছিক বিষয়ের স্নাতক পর্যায়ের প্রবেশপত্র। খামের ওপর ‘চতুর্দশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার আবেদনপত্র’ লিখতে হবে।
লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষা হবে অনার্স পর্যায়ে নিজের পড়া বিষয়ে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। সময় তিন ঘণ্টা। আগের পড়া বিষয়গুলো বারবার চর্চা করতে হবে। নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শওকত ওসমান জানান, শুরুতেই দেখে নিতে হবে সিলেবাস। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। একটি সাজেশন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি প্রয়োজনে স্নাতকপর্যায়ের বই থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বেশি বেশি লেখার চর্চা করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নেরই বিকল্প প্রশ্ন থাকে, ফলে একটি না পারলেও অপরটির উত্তর করা যাবে।
মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সাধারণত ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ২০ নম্বরের মধ্যে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১২ নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর জ্ঞান ও প্রকাশ ক্ষমতা ইত্যাদির ওপর বরাদ্দ থাকে ৮ নম্বর।
সাধারণত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য, অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন ভাইভা বোর্ডে। তবে মৌখিক পরীক্ষায় কত নম্বর থাকবে, কারা ভাইভা বোর্ডে থাকবেন, তা নির্ধারণ করা হয় নির্ধারিত বোর্ড সভার পর। সাধারণত পাঠ্য বিষয়, নিজ জেলা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় ভাইবা বোর্ডে।
যোগাযোগ
পরীক্ষাসংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য যোগাযোগ করা যাবে ০২-৫৮৩১৫৮১৪, এবং ০২-৫৮৩১৫৮১৮ নম্বরে। প্রবেশপত্র ডাউনলোড ও দরকারি তথ্য জানার জন্য যেতে হবে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে (www.ntrca.gov.bd)|
–