পরে খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহতরা হলো- বড় মেয়ে শান্তা (১৩), ছোট মেয়ে শেফা (৮) এবং ৮ মাসের ছেলে সাদ এবং মা রেহেনা (৩৮)।
নিহত রেহেনার স্বামী মো. মোস্তফা কামাল জানান, আমি সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার করে বাসা থেকে বের হয়েছি। বাহিরে কাজ থাকায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় এসে দেখি দরজা বন্ধ। রুমের ভেতরে অন্ধকার। পরে লাইট জ্বালিয়ে দেখি, আমার স্ত্রী লাশ ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলছে। তিন সন্তানের লাশ বিছানার উপরে শোয়ানো রয়েছে। বড় মেয়ের দুই পায় রশি দিয়ে বাঁধা আছে।
পুলিশের ধারণা, তিন সন্তানের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা রয়েছে। যার মধ্যে বড় মেয়ে শান্তার গলায় হলুদ রঙের ওড়না দিয়ে পেঁচানো এবং দুই পা গোলাপি রঙের জরজেট ওড়না দিয়ে বাঁধা রয়েছে।
অপর দিকে পরনে গোলাপি রঙের ওড়না ও সেলোয়ার পরিহিত রয়েছে। ছোট মেয়ে শেফার গলায় হলুদের মধ্যে সাদা ওড়না রয়েছে। এছাড়াও গায়ে লাল-কালো রঙের ছেলোয়ার কামিজ পরিহিত ছিল। অপর দিকে ৮ মাসের ছেলে সাদের গলায় নীল ও সাদা রঙ্গের গ্রামীণ ওড়না পেঁচানো তার পরনে সাদা রঙের প্যান্ট ও জামা পরিহিত আছে। এছাড়াও ছোট মেয়ের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঘটনাস্থলে তুরাগ থানা পুলিশসহ উত্তরা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
রেহেনার বড় ভাই মাহবুব আলম সাগর জানান, কামালের মা, ভাই-বোন তার সম্পত্তি দখলের জন্য দীর্ঘদিন যাবত ধরে অত্যাচার করে আসছিল রেহানাকে। অবশেষে আমার বোন তা সইতে না পেরে তার সন্তানদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার তিন দিন আগে আমি আমার বোন এবং ভাগনী এবং ভাগিনাদের দেখতে আসি। তখন দেখি আমার বোন শুধু লাউ পাতা রান্না করেছিলো। তখন আমি বাজার সদাই করে দিয়েছি। ১০টা মুরগীও দিয়েছিলাম। পরে আমার বোন বললো ভাই তুই আর এখানে আসিস না, তোকে মেরে ফেলবে।
রেহেনার বড় ভাই মাহবুব আলম সাগর আরো জানান, আমরা মিরপুর থাকি আমাকে কামালের ছোট বোনের জামাই আমার বোন এবং ভাগিনাদের মৃত্যুর খবর জানায়। আমি খবর পেয়ে চলে আসি।
তিনি জানান, এই বাড়িটি আমার বোনের জামাই কামাল করেছে। কামালের মা, বোন ও মেঝো ভাই ওই জায়গা দখল করে রেখেছে বহুদিন ধরে। আমার বোন, বোন জামাই এবং ভাগিনাদের এই বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল বহুদিন ধরে। এছাড়াও কামালের মা ও ভাই-বোন ১২ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছে কিছুদিন পূর্বে। কিন্তু তাদের কোনও টাকা দেয়নি। অপরদিকে ভাগনি টাকার জন্য স্কুলের রেজিস্ট্রেশনও করতে পারেনি। এত কষ্টের মধ্যে থেকেও বোন আমাদের কিছুই বুঝতে দেয়নি। কখনো কিছুই আমাদের বলেওনি। কামালের বাসা ভাড়ার টাকা তার মা ভাই বোনরা খেয়ে ফেলতো, প্রতিমাসে এই বাড়ি থেকে ৪০ হাজার টাকার উপরে ভাড়া আসতো।
তুরাগ থানার ওসি মাহবুবে খোদা জানান, ঘটনাস্থল ওই বাসার ঘরে ভেতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল বলে বাড়ির মালিক কামালের কাছ থেকে জানতে পারি। তবে লাশের গলায় দাগ দেখে মনে হচ্ছে সন্তানদের হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছে।
তিনি আরও জানান, সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের লাশগুলো ময়নাতন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমরা দুটি কারণ পেয়েছি। একটি হল সংসারের অভাব অনটন এবং অপরটি জমি এবং বাড়ি সংক্রান্ত বিরোধ।
ওসি মাহবুবে খোদা আরো বলেন, নিহতের স্বজনরা কী মামলা বা অভিযোগ দেয় তা দেখেই বলা যাবে।
এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেও জানান তিনি।
উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, আমরা হত্যার কোনা আলামত পাইনি। প্রাথমিকভাবে দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, তিন সন্তানকে হত্যার পর মা নিজেও আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
, ঢাকা: রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে তিন সন্তানসহ মায়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে তুরাগের রানাভোলা বটতলা এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতেরা হলেন- রেহেনা পারভিন (৩৫), বড় মেয়ে শান্তা (১৩), ছোট মেয়ে আরিফা (৯) ও ১১ মাসের ছেলে সাদ। তাদের বাবার নাম মোস্তফা কামাল।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা বলেন, মোস্তফা কামাল রাতে বাড়িতে ফিরে দেখতে পান স্ত্রী ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে এবং সন্তানদের লাশ খাটে শোয়া অবস্থায় আছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।