প্রকাশ : ০৯ জুন ২০১৭,
তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি কী হয় তা নিয়ে বিস্তর জল্পনাই ছিল।
কিন্তু এক বিশেষ অপেরা শো’তে মোদি-নওয়াজ ধরা দিলেন কিন্তু একেবারেই অন্য মেজাজে। দেখা হতেই করমর্দন করেন তারা। হাসিমুখে শুরু করেন কুশল বিনিময়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় এ ঘটনা ঘটে।
সেখানে সাংহাই সহযোগী সম্মেলনে (এসসিও) যোগ দিতে গিয়েছিলেন তারা।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রনেতাদের জন্য বিশেষ অপেরার আয়োজন করেন কাজাখ প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নজরবায়েভ।
ভারত-পাকিস্তানের মাঝে দীর্ঘ বৈরিতা সাম্প্রতিক সময়ে আরও তিক্ততায় পর্যবসিত হয়। তবে মোদি-নওয়াজের মধ্যে এর ছাপ দেখা যায় না তেমন।
গত মে মাসে লন্ডনে গিয়ে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করান শরীফ। ওই সময় টুইটারে তার জন্য শুভকামনা জানান মোদি।
এর একমাস পর আস্তানায় দেখা হয় দুজনের। শুরুতেই শরীফের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন মোদি।
শরীফের মা ও পরিবারের বাকি সদস্যরা কেমন আছেন তাও জানতে চান তিনি।
বেশ কয়েক মিনিট ধরে কথা বলার পর নিজেদের আসনে বসে অপেরা উপভোগ করেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে জোর দেন মোদি।
২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর কাবুল থেকে দেশের ফেরার পথে হঠাৎ করেই লাহোরে হাজির হন তিনি।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের বাড়িতে গিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান মোদি।
দুই দেশের সরকার প্রধানের এমন হৃদ্যতা দেখে ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন অনেকে।
কিন্তু সাত দিন পার না হতেই আশাবাদের ছন্দপতন ঘটে। পাঞ্জাবের পাঠানকোট ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটলে পাকিস্তানকে এর জন্য দায়ী করে দেশটি।
এরপর গত বছরের জুনে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী তরুণ কমান্ডার বোরহান ওয়ানি ভারতীয় বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়।
এঘটনাকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে তুমুল গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যা দমনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টানা কারফিউ জারিসহ সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদপত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।
এক পর্যায়ে কাশ্মীরের উড়িতে ভারতীয় সেনা ঘাটিতে হামলা চালায় কাশ্মীরি বিচ্ছন্নতাবাদীরা। এতে পাকিস্তান জড়িত বলেও অভিযোগ করে ভারত।
পরে বদলা নিতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল হামলা চালানোর দাবি করে ভারত। যদিও পাকিস্তান এ দাবি নাকচ করে দেয়।
কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে দুই দেশের সেনারা বারবার অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে।
গুলির লড়াইকে কেন্দ্র করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও চরম অবনতি হয়। উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল হয়। ভারতের নেতৃত্বে বর্জনের মুখে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক সম্মেলনও বাতিল হয়ে যায়।
সর্বশেষ পাকিস্তানে বন্দী ভারতের সাবেক নৌ কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েন চলছে।
এরমধ্যেই মোদি-নওয়াজের দেখা হলো। দুই নেতার হৃদ্যতা ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব প্রশমনে ভূমিকা রাখে কি না তা এখন দেখার ব্যাপার।