শ্যামনগর থানার ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা : পুলিশ সোর্সের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনঃ মামলা প্রত্যহারের হুমকী

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরা শ্যামনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আব্দুল মান্নান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিয়াকতের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী। অন্যদিকে আশাশুনির বড়দল গ্রামের আফছার আলীর ছেলে আইয়ুব আলীর চাঁদাবাজি, অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের যেন অন্ত নেই। 10
সূত্রমতে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে শ্যামনগরের বিড়ালক্ষ্মী গ্রামের ভাটা সর্দার কবীর হোসেন সবুজ বাদী হয়ে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শ্যামনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আব্দুল মান্নান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিয়াকতের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদীর অভিযোগ শুক্রুবার বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকী দেয়া হচ্ছে। মামলা না তুলে নিলে জীবণ ন্যাশের হুমকী ও দেয়া হচ্ছে বলে এ সংবাদ মাধ্যকে জানায় মামলার বাদী।
মামলার এজহার মতে গত ৩ জুন সকাল ১০টার দিকে শ্যামনগর থানার এসআই লিয়াকত নওয়াবেকী থেকে কোন অভিযোগ ছাড়াই বিড়ালক্ষ্মী গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন মোল্লার ছেলে কবীর হোসেন সবুজকে নওয়াবেকী এলাকা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর তাকে থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষের জানালার সাথে বেধে বেদম পেটান এসআই লিয়াকত। পরে তাকে ওসির কক্ষে নেওয়া হলে সেখানে হয় দেনদরবার। সবুজের কাছে চাওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। সেসময় সবুজের কাছে থাকা ভাটার শ্রমিকদের ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নেন ওসি মান্নান ও এসআই লিয়াকত। পরে সবুজের স্ত্রী বাড়ি থেকে আরও ১৮ হাজার টাকা এনে দিলে রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাড়া পেয়ে কোন মতে রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন সবুজ।

সবুজ সুস্থ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে ১০৯/৩২৩/৩২৭/৩৪২/৩৮৫/৩৮৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার প্রমাণ হিসেবে আদালতে ৫০ হাজার টাকার দেনদরবার সংক্রান্ত একটি অডিও ফোন রেকর্ড দাখিল করেছেন বাদী।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার গোপাল জানান, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম জাহিদ হাসান মামলাটি গ্রহণ পূর্বক ভিকটিমকে পরীক্ষা করে আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি সবুজকে চেনেনও না। মামলা হয়েছে কি না তাও জানেন না।এ ছাড়া মামলা প্রত্যহার ও হুমকীর প্রশ্নই আসে না।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরায় পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানির এমন অভিযোগ অহরহ।
এদিকে সাতক্ষীরায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের আফছার আলীর ছেলে আইয়ুব আলীর চাঁদাবাজি, অত্যাচার ও নির্যাতনে এলাকার দীনমজুরসহ সাধারণ নিরীহ মানুষ অতিষ্টি হয়ে উঠেছে। তার অত্যাচারে অনেক সংখ্যালঘু পরিবার দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বড়দল গ্রামের মোনতাজ উদ্দিন গাজির ছেলে বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল হাকিম গাজি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চাকরি শেষে বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি সাধারণভাবে জীবন যাপন করছেন। কিন্তু স্থানীয় হিজবুল্লাহ যুব সংঘের সভাপতি এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত আইয়ুব আলী তার জঙ্গি সংগঠনের জন্য আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে পুলিশকে দিয়ে হয়রানি ও মিথ্যে নাশকতা মামলার আসামী বানিয়ে জেলে পাঠাবার হুমকি দেয়। চাঁদার টাকা না দেয়ায় গত ৭ এপ্রিল রাতে আইয়ুব আলী আমাকে ডেকে নিয়ে আশাশুনি থানার পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। এরপর স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে থানার ওসির জন্য ৩০ হাজার ও আইয়ুব আলীর নিজের জন্য ১০ হাজার মোট ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, গত ৬ জুন আবারও পুলিশ আমাকে ধরতে আসে। এবার দাবি ৫০ হাজার টাকা চাঁদা। এই চাঁদা দিতে না পারলে আমাকে ও আমার ভাইকে জামায়াত শিবিরের মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিজিবিতে কর্মরত তার ছেলে জিএম মোস্তাফিজুর রহমান ও ভাতিজা জিএম জাহিদুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেয় সে। আমি ও আমার ভাই এখন পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আইয়ুব সরদার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের লীডার। সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তিকে ধর্ম ভাই বানিয়ে তার কাছ থেকে আইয়ুব হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এই টাকা আইয়ুব ব্যবহার করছে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে। তিনি বলেন আইয়ুব স্থানীয় ইদ্রিস গাজি, মান্নান গাজি, সুমন সানাসহ অনেককে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করে তাদেরকে চাঁদাবাজির কাজে নামিয়েছে। পুলিশের কাছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিতে গেলে তা নেওয়া হয়না। উল্টো যারা এ অভিযোগ করেন তাদেরকে জামায়াত শিবিরের সদস্য বানানো হয়। পুলিশকে সামনে রেখে আইয়ুবের চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন এলাকার বহু মানুষ। তার অত্যাচারে বড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরঞ্জন ঢালি দেশ ত্যাগ করেছেন। তিনি জানান সম্প্রতি আইয়ুব সরদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন কালিগঞ্জ সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মির্জা সালাহউদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি পুলিশের দালাল আইয়ুবের বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহবান জানিয়ে বলেন তার সাথে জঙ্গিবাদের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। সে সৌদি থেকে পাওয়া টাকা জঙ্গিবাদ লালনে ব্যবহার করছে। তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। তিনি নিজে ও পরিবারের সদস্যদেরকে আইয়ুবের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন

Check Also

আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।