ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজশাহী: রাজশাহীতে পুলিশের হাতে কলেজ শিক্ষক, ছাত্রলীগ নেতা ও কোর্টের মহুরী লাঞ্চিত হবার ঘটনার পর এবার গোদাগাড়ীতে পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল ৪ টার দিকে গোদাগাড়ী মডেল থানায় এসআই আহসান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেককে (৪৮) শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। তার বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার সারেংপুর কলেজপাড়া এলাকায় ।
ঘটনা জানাজানি হলে রাত ৮টার দিকে পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গোদাগাড়ী থানার ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ও শাস্তির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। এসময় মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে গাড়ী আটকা পড়ে দীর্ঘ জানজটেরও সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনা¯’লে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে স্থানীয় নেতা কর্মীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাত ৯টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ঘটনা¯’লে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
জানা গেছে, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক সংস্কারের কাজ নি¤œমানের হওয়ার কারণে ¯’ানীয়রা অভিযোগ তোলেন। এ ব্যাপারে পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মালেক ঠিকাদারের লোকজনদের সাথে কথা বলতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় ঠিকাদারের লোকজন থানায় ফোন করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ ঘটনা¯’ল থেকে সারেংপুর এলাকার শহিদুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ নেতাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। আবদুল মালেক স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সুলতানুল বাবুকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুল আলম মুন্সি শহিদুলকে ছেড়ে দেন। এসময় তারা থানা থেকে বের হবার পথে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহসানুল হক ছাত্রলীগ নেতা সুলতানুল বাবুকে ঠিকাদারদের সাথে বাকবিতন্ডা করার জন্য আটক করেন। এসময় আবদুল মালেক তাকে আটকে বাধা দিলে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কাথা কাটাকাটি শুরু হয়।
আবদুল মালেক জানান, আমি পরিস্থিতি বুঝার আগেই এসআই আহসানুল হক হঠাৎ তেড়ে গিয়ে তার বাম গালে জোরে একটি চড় বসিয়ে দেন। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যাই। এরপরই এএসআই শাহিন আলীসহ আরো কয়েকজন দারোগা-কন্সটেবল তাকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন।। ওসির সামনেই এমন ঘটনা ঘটে। অথচ ওসি আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এঘটনায় রাতেই বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা লাঠিশোটা নিয়ে ডাইংপাড়া মোড়ে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে পুলিশের একটি পিকআপ ওসিকে নিয়ে সেখানে যায়। এরপর গাড়ি থেকে ওসি নামলেই বিক্ষুব্ধরা পিকআপকে ধাওয়া করলে এ সময় ওসিকে ফেলে রেখেই পিকআপটি থানার দিকে টান দেয়।
ওসি এসময় শামসুর হক নামে এক ব্যক্তির জুতার দোকানে গিয়ে অবস্থান নেন।। এরপর বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ওসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ঘটনা¯’লে গিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত করে অবরুদ্ধ ওসিকে মুক্ত করেন। এরপর অভিযুক্তদের শাস্তির আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধও তুলে নেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে আবদুল মালেককে মারধরের ঘটনায় গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ওসিসহ জড়িত সব পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বাসিন্দা এসআই আহসান শিবিরের আর সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা এএসআই শাহিন ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। এ জন্যই তারা আওয়ামী লীগ নেতার গায়ে হাত তুলেছেন।
এ বিষয়ে ওসি হিপজুর মুন্সির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানাতে মারধরের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। ধাক্কাধাক্কির মতো ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছিল। তিনি ওই দুই দারোগাকে আবদুল মালেকের কাছ থেকে মাফ চাইয়ে নিয়েছেন।
তবে এসআই আহসানুল হক দাবি করেছেন, ধাক্কাধাক্কিও হয়নি। শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এদিকে মোবাইল বন্ধ থাকায় এএসআই শাহিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।