সাতক্ষীরায় ছেলের হাতে বাবা ও স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যাঃ যৌতুকের দাবীতে গৃহবধুকে হত্যার চেষ্টা

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরায় পৃথক ঘটনায় দুই জন খুন হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামে ছেলের হাতে বাবা খুন,এই উপজেলার ভারুয়াখালিতে দাবিকৃত ১ লাখ টাকা না পেয়ে গৃহবধূকে খুনের চেষ্টা ও আশাশুনির গোয়াল ডাঙ্গা গ্রামে এক গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। 22
পুলিশ ও এলাকাবাসি জানায় সাতক্ষীরায় ছেলের কাছে পাওনা টাকা চাওয়ায় পিতা আকবর মিস্ত্রি (৬০) কে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছেলে সালাম মিস্ত্রি। শনিবার রাতে পিতাকে পিটিয়ে আহত করার পর রোববার ভোরে তিনি মারা যান। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুরের নামাজের পর পিতা আকবর আলি মিস্ত্রি ছেলে সালাম মিস্ত্রীর কাছে পাওনা টাকা চায়। এ সময় বাপ বেটার মধ্যে কথাকাটি হয়। কথাকাটা কাটির এক পর্যায়ে ছেলে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিতা আকবর মিস্ত্রীকে বেদম মারপিট করে আহত করে। রক্তাক্ত পিতাকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা করানোর পর রোববার ভোর ৬ টার দিকে তিনি মারা যান।
এদিকে, রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মারুফ আহমেদ জানান, পাওনা টাকা নিয়ে মূলত ভাই-বোনের মধ্যে বিরোধ। ভাই সালাম মিস্ত্রির কাছে তার বিবাহিত বোন ( বাপের বাড়িতে থাকে ) রাফিজা বেগম টাকা পায়। ওই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করেই শনিবার দুপুরে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। এক পর্যায় তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে তাদের বৃদ্ধ বাবা আকবর আলী মিস্ত্রি এসে থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় ছেলের লাঠির আঘাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন পিতা আকবর আলী । রোববার ভোরে আকবর আলী মারা যায়। ওসি জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ছেলে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে আশাশুনির গোয়াল ডাঙ্গা গ্রামের কংকাবতী (৩৮) নামের এক গৃহবধুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী বিজন মোন্ডল (৪৪) বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার ভোর রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। বিজন মোন্ডল পেশায় একজন জেলে। নিহত গৃহবধু কংকাবতী আশাশুনির বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের অনিলকৃষ্ণ মোন্ডল এর মেয়ে। স্থানীয় জানায়, পার্র্শ্বতী গ্রামে বিজন মোন্ডলের (৪৪) সাথে কংকাবতীর (৩৮) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী বিজন মোন্ডল যৌতুকের দাবীতে মারধর করতো। সম্প্রতি সময়ে বিজন মোন্ডলের পাশের গ্রামের এক মেয়ের সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে যায়। এরই জের ধরে রোববার ভোর রাতে বিজন মোন্ডল তার স্ত্রী কংকাবতীকে বেদম মারপিট করে। এক পর্যয়ে বিজন মোন্ডল স্ত্রী কংকাবতীকে গলায় রশিদিয়ে ঝুলিয়ে রেখে স্ত্রীর আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা চালাই। পরে স্থানীয়রা জানতে পেরে কংকাবতীকে উদ্ধর করে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে, কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে। এদিকে স্থানীয় জনতা বিজন মোন্ডলকে পুলিশে সোপর্দ করে। আশাশুনির থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিদুল ইসলাম শাহিন বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভারুয়াখালিতে দাবিকৃত ১ লাখ টাকা না পেয়ে গৃহবধূ মর্জিনা খাতুন (২৬)কে মাছকাটার বটি দিয়ে হত্যার চেষ্টায় নৃশংসভাবে কুপিয়েছে পাষন্ড স্বামী মোঃ শিমুল গাজী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। শনিবার বিকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভারুয়াখালি গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। আহত গৃহধূকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আহত গৃহবধূর বড় ভাই আক্তারুল ইসলাম জানান, বিগত আট বছর পূর্বে তার বোন মর্জিনাকে ভারুয়াখালি গ্রামের আব্দুস সামদ উরফে মন্টু গাজীর বড় ছেলে শিমুলের
সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়। বিয়ের সময় শিমুলকে যৌতুক দেয় তার পরিবার। এর কিছুদিন না যেতেই গৃহবধূ মর্জিনার পরিবারের কাছে নিয়মিত যৌতুক দাবি করে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় শনিবার বিকালে শিমুল, শিমুলের পিতা সামাদ ও তার মা জোহরা খাতুন সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা
যৌতুকের জন্য চাপ দিলে মর্জিনা তার দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাষন্ড যৌতুক লোভী স্বামী শিমুল গাজী হত্যার চেষ্টায় গৃহবধূ মর্জিনার মাথায় মাছ কাটার বটি দিয়ে কোপায়। কোপাঘাতে জখম হওয়া মর্জিনা চিৎকার করলে আশ পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে গৃহবধূকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Check Also

আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।