ক্রাইমবার্তা রিপোট:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। এই দলটি কেবল হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিল। জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে কোনো কিছুই করে নাই। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা শুধু নিজেদের পকেট ভারি করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও বিএনপি দাবি করে তারা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন ছিলো, কিন্তু এটা সত্যি যে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে তারা কিছুই করে নাই। তারা সন্ত্রাস ও ভয়-ভীতির রাজত্ব কায়েম করে কেবল নিজেদের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘যারা নিজেদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের ওপর এদেশের জনগণের আস্থা নেই। বিগত দিনের মতো আগামী নির্বাচনেও জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
উন্নয়নের সুফল ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনেও জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে বলেও এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।
তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে যে উন্নয়নটা পাচ্ছে সেটা প্রত্যেকটা মানুষ উপলব্ধি করে। একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যে একান্তভাবে প্রয়োজন সেটাও আজকে প্রমাণিত।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবনে নিজের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে। জনগণই বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। দলটির তৃণমূল কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। জনগণ কিছু পায়। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসে শুধু নিজেদের আখের গোছাতে।’
উল্লেখ্য, ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ধানমন্ডির সুধা সদন থেকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ ১১ মাস বিনা কারণে কারাভোগের পর জনগণের দাবি এবং দেশী-বিদেশী চাপের মুখে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এর পর থেকেই দিনটিকে ‘কারামুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করছে আওয়ামী লীগ।
১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
সেই দু:সময়ের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলের বউয়ের অপারেশন, মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিলো সেজন্য আমি দেশের বাইরে যাই। অথচ এরপর আমাকে দেশে আসতে দেবে না। মামলা দিবে, ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে। এই খেলাই তারা খেলতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, সবাই মামলার ভয়ে পালায়। আমি সেখানে যাচ্ছি মামলা মোকাবেলার করার জন্য। নির্দেশ ছিলো কেউ যেন বিমানবন্দরে না যায়। এবং তারা সংখ্যা বেধে দিয়েছিলো। ১০/২০ জন তার বেশি যেতে পারবে না।
সব বাধা উপেক্ষা করে কৌশলে বিমানবন্দরে হাজার হাজার দলীয় নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলো।
তাদের যেটা উদ্দেশ্য ছিলো হাজার হাজার মানুষ থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী কারান্তরীণ থাকাকালীন কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে আমাকে রাখা হয়েছে ১১টি মাস। দোতলার নিচে পর্যন্ত নামতে দিতো না। এমনকি অসুস্থ হলে ডাক্তারও দেখায়নি। কিন্তু আমি কখনো মনের জোর হারাইনি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করেন।
জন্মলগ্ন থেকেই এ ধরনের নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যানতন। কারণ আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকারের কথা বলতো, বঞ্চনার কথা বলতো।
এ সময় বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের সেই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা রুখে দিতেই খুনি মোস্তাক, জিয়াদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশকে যে উন্নত করা যায় আমরা তা প্রমাণ করতে শুরু করি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আসলে একটা সরকার যদি ধারাবাহিকভাবে না চলে তাহলে উন্নয়নটা দেখা যায় না।
আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তার কারণ আমি দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চাইনি।
তিনি বিএনপির সাথে বিদেশী গোষ্ঠীর সে সময় দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি হয় মর্মে অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে আর তার বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে। এই রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে করে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারাই এদেশে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস, বাংলা ভাই, দূর্নীতি, মানিলন্ডারিং, অত্যাচার নির্যাতন, মানুষ হত্যা, বিএনপি জামায়াতের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি কেউ।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপি-জামায়াত জেটের আমলে দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সহ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন বানচালের নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা এবং তাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি এ সময় তার রাজনৈতিক অঙ্গিকার পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর এজন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিতে ব্রতী হবারও আহবান জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নিয়ে চলবে যে দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম।’
‘রাজনৈতিকবিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে কোন ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত আছি।