ক্রাইমবার্তা রিপোট:অপকর্মগুলো ঢাকতেই আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচন, জনগণ ইত্যাদি কথার জিকির তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কেবল জনগণকেই শত্রু মনে করে বলে নির্বাচনকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকারের কথা শুনলেই আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারে না। সুতরাং জনগণ, নির্বাচন ইত্যাদি কথা বলে আওয়ামী লীগ একটা ধুলিঝড়ের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, যে ঝড়ের আড়ালে কোনো অশুভ চক্রান্ত থাকতে পারে।
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
‘বিএনপি’র ওপর জনগণের আস্থা নেই’ প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, অথচ গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জোটের এমপিরা বলেছেন শতকরা ৯০ ভাগ লোক আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। জনগণ কোনটা বিশ্বাস করবে? প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের বাকশালী শাসনে ফ্যাসিবাদের নব্য সংস্করণ এখন যে বিভৎস রূপ ধারণ করেছে তাতে নির্বাচন, ভোটসহ সারাদেশের সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড। জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে এক নারকীয় দু:শাসনের তীব্র যন্ত্রণা। প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের শক্তিকে কী বিশ্বাস করেন? তিনি জনগণকে তো অনেক আগেই ত্যাজ্য করেছেন, যদি তিনি জনগণের শক্তিকেই বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে একবার দয়া করে সাধের সিংহাসন ত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, তখনই বোঝা যাবে জনগণের আস্থা কার ওপর আছে?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হাতে পেলেই জনগণের অধিকারকে আর সুনজরে দেখে না। এরা জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশবাসীকে হতভাগাতে পরিণত করতেই উঠেপড়ে লাগে। আওয়ামী লীগের চিরসত্য ঐতিহ্য হচ্ছে তারা জলাতঙ্কের মতো গণতন্ত্রের আতঙ্কে ভোগে। এরা অন্যায় ও বেআইনীভাবে ক্ষমতার চাহিদা মেটাতে জনগণকে পরাধীনতার সুদৃঢ় বন্ধনে বন্দী করে রাখতে চায়। আর সেজন্য অব্যাহত গুম, খুন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে বাড়ি থেকে ধরে এনে অদৃশ্য করে দেয়া এখন এতোই ভয়াবহ ও চাঞ্চল্যকর মাত্রায় পৌঁছেছে যে, জাতি হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তি একটা লজ্জাজনক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আর এ অপকর্মগুলো ঢাকতেই প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন, জনগণ ইত্যাদি কথার জিকির তুলছেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জিয়া পরিবার ও বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার সময় হিতাহিত কাণ্ডজ্ঞানশূন্য ও বিবেচনাহীনভাবে যা ইচ্ছা তাই বলেন। কারণ তিনি এখন মধ্যযুগীয় সম্রাজ্ঞীর ক্ষমতা হাতে পেয়েছেন, তাই চোখ রাঙ্গানীই তার টিকে থাকার ভরসা। এর সাথে তো গুম-খুনের অনুষঙ্গ আছেই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীনরা আদিম জীবন-চেতনার অন্ধকার ঘূর্ণিতে দেশকে ঠেলে দিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, সরকার প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা সারাক্ষণই বলে থাকেন আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে। এসব অবান্তর ও বাকোয়াস কথা কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই বলতে পারে। কেননা তারা নির্জলা মিথ্যা কথা বলতে কখনোই বিন্দুমাত্র দ্বিধা ও লজ্জা করে না। তারা মনে করে-উদ্ভট মিথ্যাচারের মাধ্যমে ফাঁকা আওয়াজ করলে জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবে। কিন্তু এ কৌশল যে একেবারেই ব্যর্থ কৌশল তা ক্ষমতার মোহে আওয়ামী নেতারা টের পাচ্ছে না। জনগণের চোখ ফাঁকি দিতে আওয়ামী নেতারা মরিয়া হলেও জনগণ ঠিকই দেশে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান তা অবলোকন করছে।
সরকারের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, উন্নয়নের একটি নমুনা হচ্ছে- রাজধানীর বেহাল রাস্তাঘাট। সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা ঢাকা শহর যান চলাচলে নিশ্চল ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এই পবিত্র রমজান মাসে এক অমানবিক দু:সহ পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছে ঢাকাবাসী। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাশ ছোঁয়া মূল্য অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রোশনাইয়ে ঢাকা শহর এখন প্রকৃতপক্ষেই ‘আরবান ডিজস্ট্যার’। মশার ব্যাপক বিস্তার এখন ঢাকা শহরে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। দেশ-বিদেশের নানা নামের ভাইরাস জ্বরে এখন আক্রান্ত ঢাকাসহ দেশবাসী। জ্বরের প্রকোপ এতো বেশি হয়েছে যে ঢাকা মহানগরীতে তা মহামারীরূপ ধারণ করেছে। মহাদুর্ভোগের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঢাকা এখন সত্যিকার অর্থেই ‘আনফিট ফর হিউম্যান হ্যাবিটেশন’।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থ হয়েছেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের সীমাহীন উর্দ্ধগতির কারণে মানুষের আহারের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, রমজান মাস ও ঈদের প্রাক্কালে চাঁদাবাজি, ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, অসহায় মানুষকে বিপদে ফেলে ঈদ মওসুমে পুলিশের অবাধ চাঁদাবাজি আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন, সীমাহীন লুটপাটের কারণে প্রকৃত উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার অনর্গল লাগামহীন একতরফা অসত্য, কুৎসামূলক ও অশালীন বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হননি। এ বিষয়ে তিনি চ্যাম্পিয়ন।
এছাড়া গত শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরাম বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সকল ইউনিয়নের ইফতার মাহফিল পুলিশ কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে রিজভী অভিযোগ করেন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান তথা ইফতার মাহফিলে বাধা ও তা পণ্ড করে দেয়ার মতো আওয়ামী হিংসাশ্রয়ী আচরণে আমরা ধিক্কার জানাই, নিন্দা জানাই, বলেন রিজভী।