প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনার আমতলী উপজেলা থেকে নিখোঁজ হওয়া এক তরুণ প্রায় ১০ বছর পর গত রোববার বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাঁর নাম মো. সোহেল (২৬)। বাড়ি উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামে।
ফিরে আসা সোহেল অস্বাভাবিক আচরণ করছেন, তেমন কথা বলছেন না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। আবার কিছু সময় পর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোহেল ঘটখালী গ্রামের এনসান আলীর ছেলে।
উপজেলার পূর্ব ঘটখালী গ্রামের ১২ জন দিনমজুর ধানসী গাছ কাটার জন্য ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীর মোহনায় মাঝের চরে যাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে নিখোঁজ হন।
সোহেলের পরিবার জানায়, সিডরের আগের দিন তাঁরা বঙ্গোপসাগরে নৌকা ভাসিয়েছিলেন। ঝড়ের তাণ্ডবে ও তীব্র ঢেউয়ে গভীর রাতে তাঁদের বহনকারী ট্রলারটি ডুবে যায়। এরপর তাঁরা ১২ জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ঝড়ের চার দিন পর দুজন বাড়ি ফিরে এলেও খলিল, সোবাহান, ইউসুফ, জব্বার আলী, হোসেন আলী, মনিরুল, দেলোয়ার, আলতাফ হোসেন, রতন মিয়া ও সোহেল নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার রাতে উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারের জেসমিন আক্তার নামে এক নারী নিখোঁজ হওয়া সোহেলকে বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখে চিনতে পারেন। জেসমিন আক্তার বাড়িতে ফিরে বিষয়টি সোহেলের পরিবারের সদস্যদের জানালে পরিবারের লোকজন রোববার সকালে আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে ছুটে যান।
এরপর সোহেলকে তাঁরা বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় সোহেলের শরীরে থাকা শনাক্তকরণ চিহ্ন দেখে তাঁর মা হাজেরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘মোর হারাইন্না বুকের মানিকের জন্য কত্ত কানছি। মোর মোন কইছে ও বাঁইচ্চা আছে। ঠিকই আল্লায় মোর পোলারে মোর বুকে ফিরাইয়্যা দেছে।’
সোহেলের ফিরে আসার খবর শুনে এলাকার উৎসুক লোকজন তাঁদের বাড়িতে ভিড় করছে। তবে সোহেল এত দিন কোথায় ছিলেন, কী অবস্থায় ছিলেন, তা কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। পরিচিতদের দেখলে নীরবে চোখের পানি ফেলেন।
আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শনিবার রাত আটটার দিকে একটি ট্রাক থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন লোককে বাজারে নামিয়ে দিয়ে ট্রাকটি দ্রুত চলে যায়। ট্রাক থেকে নামানো ওই লোকদের মধ্যে সোহেল ছিলেন। তবে বাকি লোকজনের পরিচয় জানা যায়নি।