যুগান্তর চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার ভোর ৪টায় চন্দনাইশের দুর্গম এলাকা দোপাছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড় ধসে ১ শিশু এবং ছনবনিয়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- শামুকছড়ির শিশু মাহিয়া(৩), ছনবনিয়ার ২নং ওয়ার্ডের উপজাতি এলাকার সিনসাও কেয়াংয়ের স্ত্রী মোকা ইয়ং কিয়াং (৫০), কেলাও অং কেয়াংয়ের কিশোরী কন্যা মেমো কেয়াং (১৩) ও ফেলাও কেয়াংয়ের শিশু কন্যা কেওচা কেয়াং (১০)।
এসময় আহত হয়েছেন ২ জন। তাদের বান্দরবান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- সানু কেয়াং (২১), শেলাও কেয়াং (২৭)।
জানা গেছে, রোববার থেকে ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সোমবার রাত ২টার পর প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টি ও সঙ্গে বজ্রপাতসহ ঝড়ো হাওয়া হয়। এরপরই এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
প্রায় ২০/৩০টি উপজাতি পরিবার ওই এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করে আসছে।
বাকি পরিবারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তারা আতংকে বাড়ি-ঘরে ছেড়ে অন্যত্র সরে গেছে। স্থানীয় লোকজন স্বউদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বেলা পৌনে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো লোক বা উদ্ধারকারী দল পৌঁছেনি।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে রাজানগরে ৪ জন ও ইসলামপুরে ইউনিয়েনে ২ জন মারা যান।
রাজানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুল আলম তালুকদার জানান, মঙ্গলবার ভোরে পাহাড়ের পাদদেশে মাটির ঘরে বাস করা মোহাম্মদ হোসেন (৪৭) ও তার কিশেরা সন্তান এবং নজরুল ইসলাম (৫২) ও স্ত্রী পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মারা গেছেন।
তবে ইসলামপুর ইউনিয়নে নিহতদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
রাঙ্গানিয়া ইউএনও মো. কামাল হোসেন বেলা ১২টার দিকে যুগান্তরকে জানান, তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন।
আমাদের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানায়, রাঙ্গামাটি শহরে ও কাপ্তাই উপজেলায় টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে ও গাছচাপায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে উদ্ধার অভিযানে গিয়ে পাহাড়ের মাটিচাপা পড়ে ২ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।
মঙ্গলবার সকালে জেলা শহর থেকে ১১ জন ও কাপ্তাই উপজেলা থেকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- শহরের ভেদভেদি এলাকার রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস, ইকবাল হোসেন। কাপ্তাই উপজেলার কারিগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা অনুচিং মারমা ও নিকি মারমা।
এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে পড়ে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
অপরদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মানিকছড়িতে সড়ক থেকে মাটি অপসারণের সময় পাহাড়ের মাটিচাপায় মেজর মাহফুজ ও ক্যাপ্টেন শামীম নামে দুই সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তারা রাঙ্গমাটি সেনা রিজিয়নে কর্মরত ছিলেন।
মৃতদেহগুলো রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মংখ্য সিং চৌধুরী মারমা।
কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা জানান, উপজেলার কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে দুইজন নিহত হয়েছেন। তাদের মৃতদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
এদিকে সোমবার রাত থেকে রাঙ্গামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
যুগান্তর বান্দরবান প্রতিনিধি জানায়, বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে পাঁচজন।
মঙ্গলবার ভোররাত পৌনের ৪টার দিকে জেলার পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কালাঘাটা এলাকার ত্রিপুরা পাড়াসহ দুর্গম কয়েকটি এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে চার জনের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলো- শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫) ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা (১৮)।