পাহাড়ি দুর্যোগে নিহত দেড়শ ছাড়িয়েছে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

  ক্রাইমবার্তা রিপোট:কয়েকদিনের টানা বর্ষণের পর পাহাড়ি দুর্যোগে নিহত বেড়ে ১৫৫ জন হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। নিখোঁজ রয়েছেন এখনও বেশ কজন।

চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় ধস, গাছচাপা, দেয়ালচাপা ও বজ্রপাতে গত দুদিনে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে সড়কের ওপর ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরাতে গিয়ে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন দুই কর্মকর্তাসহ ৪ সেনা সদস্য।

বুধবার বিকেলে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পাহাড় ধসের ঘটনায় ১৫৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ১০১ জন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে ৩১ জন, বান্দরবানে ১০, কক্সবাজারের টেকনাফে ২ জন এবং খাগড়াছড়িতে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাদ দিয়ে প্রতিনিধিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সেই সাথে লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

রাঙামাটি:  ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটিচাপায় রাঙ্গামাটি শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় বুধবার সকাল পর্যন্ত ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে ১৪ জনের মরদেহ নেয়া হয় এবং বিকালে ওই দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় পাহাড় ধসে মাটিচাপায় ২ জনের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার।

এছাড়া কাপ্তাইয়ের রাইখালীর কারিগরপাড়ায় ৪ জন এবং কাউখালী উপজেলায় সর্বশেষ ২১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থানীয় সূত্র। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে মানিকছড়িতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণের সময় ৪ সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়।

তারা হলেন- মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও সৈনিক মো. শাহীন আলম।

এদিকে আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে জেলার মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে যায়। এতে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। বেলা ১১টার দিকে ওই স্থানে পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়ে। এতে উদ্ধারকর্মীরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফিট নিচে পড়ে যান। এ ঘটনায় নিহত ওই চারজনসহ ১০ জন সেনা সদস্য আহত হন।

কাপ্তাই রাইখালীর কারিগরপাড়ায় নিহত ৪ জনের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে নাম পাওয়া যায়নি।

এছাড়া সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার বিলাইছড়িতে ২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও তাদের নাম জানাতে পারেননি।

আগের দিন সোমবার রাঙ্গামাটি শহরের পুলিশ লাইন এলাকায় এক শিশু এবং কাপ্তাইয়ের নতুন বাজারে এক শিশু পাহাড়ের মাটিচাপায় মারা যায়।

জেলা প্রশাসন থেকে শহরসহ জেলায় মোট ৩৫ জনের নিহতের তালিকা পাওয়া গেছে বলে জানান নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তাপস দাশ।

চট্টগ্রাম: , চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দু’টি ইউনিয়নে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপা পড়ে চার পরিবারের ২৭ জন নিহত হয়েছে।

রাজানগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেন পাহাড় ধসে ২৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ঘুমন্ত অবস্থায় সোমবার মধ্যরাতে রাজানগর ইউনিয়নের ঠাকুরঘোনা মইন্যার টেক এলাকায় পাহাড় ধসে কাঁচাঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন নজরুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী আসমা আকতার (৩৫), তাদের ছেলে ননাইয়া (১৫) ও মেয়ে সাথী আকতার (১৯)।

একই উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে মাটিচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন সুজন (২৪) তার স্ত্রী মুন্নি (১৯), মুন্নির অপর তিন বোন জ্যোৎস্না (১৮), শাহনূর আকতার (১৫) ও পালু (১২)। তাদের পিতার নাম মোহাম্মদ সেলিম।

এছাড়াও একই ইউনিয়নের বালুখালী এলাকায় মারা গেছেন ইসমাইল (৪২), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩৭), তাদের দুই মেয়ে ইছামিন (৮) ও ইভামনি (৪)।

চন্দনাইশ: মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ধোপাছড়ি ইউনিয়নের শামুকছড়ি ও ছনবনিয়া এলাকায় পৃথক ঘটনায় দুই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছনবনিয়া এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত একটি আদিবাসী পরিবারের কাঁচা ঘরের ওপর মাটি চাপা পড়ে। এতে মেকো ইয়াং খেয়াং (৫০) তার মেয়ে মেমো  ইয়াং খেয়াং (১৩), কেউছা ইয়াং খেয়াং (১০) নিহত হয়। আহত হয় সানুউ ইয়াং খেয়াং ও সোউ খেয়াং। প্রায় একই সময়ে শামুকছড়ি এলাকায় মাটিচাপা পড়ে নিহত হয় আজগর আলীর মেয়ে মাহিয়া (৩)।

চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ধোপাছড়ির শামুক ছড়ি ও ছনবনিয়া এলাকায় পাহাড় ধসে দুই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী মঙ্গলবার বিকালে জানান, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাহাড় ধসে আহতদের চিকিৎসা দিতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

বান্দরবান:  টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১১ জন।

মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ।

নিহতদের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলো- লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪), আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তাঁর মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং কালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)। অন্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন।

এছাড়া জাইল্লাপাড়ায় কামরুন্নাহার ও তার মেয়ে সুফিয়া (২০) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছে। আর গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- পসান ত্রিপুরা ও বীর বাহাদুর ত্রিপুরা।

সদর থানার ওসি মো. রফিক উল্লাহ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে বুধবার বিকেলে আবারও পাহাড়ি অঞ্চলে ভারি বর্ষণ হয়েছে। এতে নতুন করে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় রয়েছেন পর্বত্যাঞ্চলের মানুষ।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ে পাহাড়ের মাটি ও গাছ চাপায় বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।

তারা হলেন- উপজেলার খারাংখালী পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া গ্রামের বাবা মোহাম্মদ সেলিম (৪০) ও তার মেয়ে টিসু মনির (৩)।

হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, রাতে ভারি বর্ষণে হঠাৎ একটি গাছসহ পাহাড়ের অংশবিশেষ ধসে পড়ে। এতে চাপা পড়ে  বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন খান জানান, লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়েছ।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলায় পাহাড় ধসে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

FB_IMG_14974056153988341
FB_IMG_14974055974796550FB_IMG_14974055803914822

 

Check Also

আ.লীগের পুনর্বাসন রুখে দিতে তৈরি হাসনাত-সারজিসরা

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন রুখে দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্যে। জুলাই শহীদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।