ক্রাইমবার্তা রিপোট:আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ চাইবে বিএনপির নেতাকর্মীদের এরকম মামলা-হামলা ও হয়রানি করে একতরফা নির্বাচন করবে। আমি বলতে চাই- আওয়ামী লীগকে এবার একতরফা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। একতরফা নির্বাচন এদেশে আর হবে না। সেটা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আজ বুধবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন ভোট প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা সিটিতে আপনারা আরো ঐক্যবদ্ধ হোন। আমি বলব- আসুন সামনে আসছে শুভ দিন। ধানের শীষেরই ইনশাল্লাহ বিজয় বছর হবে। ধানের শীষকে আমরা ভোট দিয়ে বিজয় করি। এদেশের মানুষকে আবার শান্তি-উন্নতি-গণতন্ত্র-উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবো। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন জেলা সফরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেও বিএনপি প্রধান এই প্রথম নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট পক্ষে কথা বললেন।
আগামী নির্বাচন একতরফা হতে দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। তারা ভাবছে, আগামী নির্বাচনেও তারা চুরি করে ক্ষমতায় বসবে। না, তাদেরকে এবার আর চুরি করে ক্ষমতায় বসতে জনগণ দেবে না।
রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেশন সেন্টারের ‘পুস্পগুচ্ছ’ ও ‘রাজদর্শন’ হলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এই ইফতার হয়। দুই হলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর ব্যাপক উপস্থিতিতে হলে প্রবেশ নিয়ে বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়।
ইফতার মাহফিলের মূল মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, উত্তরের সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, সহসভাপতি আব্দুল আলী নকি, মো. সাহাবুদ্দিনসহ উত্তরের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতারে আরো ছিলেন, বিএনপির সিনিয়র নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আতাউর রহমান ঢালী, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, নুরী আরা সাফা, আমিনুল হক, হাফেজ এম এ মালেক, শাহ নেসারুল হক, উত্তরের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আতিকুল ইসলাম মতিন, মাসুদ খান, নবী সোলায়মান, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, আবুল হোসেন, আবুল হাশেম, শাহিনুর আলম মারফত, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, এজিএম শামসুল হক, কফিলউদ্দিন আহমেদ, শামীম পারভেজ, দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, উত্তরা পশ্চিম থানার হাজী দুলাল, বাড্ডার মোস্তফা মেম্বার, দেলোয়ার হোসেন দুলু, হাজী আবদুল মতিন, এ্যাড. খন্দকার জিল্লুর রহমান, গোলাম সাবের চৌধুরী কিরণ, আলী আকবর আলী, আবদুস সালাম সরকার, পল্লবীর কাউন্সিলার সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এবারকার নির্বাচন হবে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। হাসিনা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিন্তু ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করাতে পারবে না। হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। মানুষ বুঝে গেছে, হাসিনা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করলে ফলাফল কী হয়? নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। ইনশাল্লাহ এই লুটেরা, খুনি, চোর, জনগণের হত্যাকারী, মা-বোনদের নির্যাতনকারী, ছাত্র-ছাত্রীদের অত্যাচারকারী এই সরকারকে জনগণ নির্বাচনে কেমনভাবে প্রত্যাখান করে, তাদের পরিণতি কি হয়, সেদিন তারা নিজেরা দেখে নিতে পারবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা নির্বাচনকে ভয় পাই না, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে নির্বাচনের মতো নির্বাচন। সেই নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ও সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগরে নতুন কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠন শক্তিশালী করার তাগিদও দেন তিনি।
পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে সেনা বাহিনীর সদস্যবৃন্দসহ ব্যাপক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আহতদের সুচিকিৎসা দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুরাবস্থার জন্য সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার কারো কথা, গরীব মানুষের সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে তারা বুঝে গেছে। সেজন্য এখন তারা লুটপাট করে সেগুলো পাচার করাতে ব্যস্ত। তাদের যে সেক্রেটারি জেনারেল সে বলে দিয়েছে, যত পারো লুটে পুটে নিয়ে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। সেজন্য তারা লুটপাট করছে।
নরসিংদী ছাত্রদলের নেতা সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের ছবি দেখিয়ে তাকে গুম করার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকার পবিত্র রমজান মাসেও বিএনপির নেতাকর্মী গুম করছে।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, তারা মনে করছে, পুলিশ দিয়ে জনগণকে দমন করে রাখবে। পুলিশ বাহিনীকে খারাপ কাজে সরকার ব্যবহার করছে। আমি পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই- আপনারা জনগণের সেবক, আপনাদের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। আপনারা ঠিক থাকেন, তাদের পাশে থাকেন। আওয়ামী লীগের এই গুন্ডা-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করবেন, জেল খানায় নিন। ভবিষ্যতে আপনারা ভালো থাকবেন। আপনার জন্য আমাদের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। বিদেশে থাকা ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন সভাপতি এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিও জানান খালেদা জিয়া।