‘নির্বাচন নিয়ে সুর পাল্টেছে ভারতও’। বড় নেতারা তাদের ব্যবস্থা করেছে, পকেটে টিকিট নিয়ে ঘুরছে। অবস্থা দেখলেই তারা উড়াল দেবে,

‘নির্বাচন নিয়ে সুর পাল্টেছে ভারতও’
ঢাকা

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৭, ২১:২৫:৩৬

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের বিরাজমান অবস্থায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
তিনি বলেন, দেশে অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। ২০১৪ সালে নির্বাচন হয় নাই। কেউ ওই নির্বাচনে স্বীকৃতি দেয় নাই, একমাত্র আমাদের প্রতিবেশী (ভারত) দিয়েছে। কিন্তু এবার তাদের সুরও বদল হয়েছে। তারা বুঝেছে, তারা ভুল করেছে, ঠিক করেনি। সেজন্য এবার বিএনপি যদি না যায়, ২০ দল যদি না যায়, এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ একা নির্বাচন করতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন।
ইফতার মাহফিলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়। অনুষ্ঠানস্থলের ভেতরে-বাইরে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি শোভা পায়।
একাদশ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা ও ২০ দল নির্বাচনে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জিতবো। সেজন্য আমরা বলতে চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচনটা তখনই সম্ভব- শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার যেটা আওয়ামী লীগ দাবি করেছিল আমাদের সময়ে (১৯৯৫ সালে), আমরা দিয়েছিলাম। তখন তত্ত্বাবধায়ক নাম ছিল, এখন যে কোনো নাম দিতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবে না, হতে পারে না।
খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দেশের মানুষ আরেকবারের মতো ক্ষমতাসীনদের শিক্ষা দেবে। তারা দেশে যত অপরাধ করেছে, কত মা-বোন তাদের ভাই হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে- তাদের কান্না, তাদের আহজারি। কত লোক পঙ্গু হয়েছে, বহু লোক জেলে আছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এখন বিরোধী দলের যেসব লোক জেলে আছে, তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিন।
আওয়ামী লীগের ছোট ছোট নেতারা বুঝছেন সময়টা সামনে ভালো নয়- এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আপনাদের সময় ভালো আসছে না। গণনাকারীরাও এটা বলেছে। কাজেই ছোটখাটো নেতারা যারা আছেন, যা কিছু বানিয়েছেন, ওগুলো নিয়ে কেটে পড়ার ব্যবস্থা করেন। বড় নেতারা তাদের ব্যবস্থা করেছে, পকেটে টিকিট নিয়ে ঘুরছে। অবস্থা দেখলেই তারা উড়াল দেবে, আপনাদের দিকে ফিরে চাইবে না।
পাহাড়ে ধস প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা দেখেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১৫৫ জন লোক মারা গেছে, আর্মির লোকজনও সেখানে মারা গেছে, এখনো অনেক নিখোঁজ রয়েছে। আর আওয়ামী লীগের নেত্রী এখন প্লেজার ট্রিপে আছেন, আনন্দ ভ্রমণে আছেন। তার দেশের মানুষের প্রতি কোনো মমতা নেই। সে (শেখ হাসিনা) বলে তিনি নাকি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। দেশের মানুষ জীবন দিচ্ছে, তিনি ভ্রমণ করছেন। তাহলে এটায় কী প্রমাণ হয়? তিনি কী দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত?

ওয়ান-ইলেভেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মইনউদ্দিন-ফখরউদ্দিন বলল, তারপরই তো তিনি (শেখ হাসিনা) দেশ ছেড়ে গেলেন। তারপর তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক নাটক করে আবার আসল। আসার পরে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সব কিছু করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাকেও দেশের বাইরে চলে যেতে ওরা বলেছিল। আজকে যদি আমরা চলে যেতাম দেশের বাইরে, সবই আল্লাহর ইচ্ছা, তাহলে আমরা বড় ছেলেটাও (তারেক রহমান) ভালো থাকতো, আমার ছোট ছেলেটাকেও আমি হারাতাম না। আমি কিন্তু দেশ ছেড়ে যাইনি, দেশের মানুষকে ছেড়ে যাইনি। আমি বলেছি, এই দেশ আমার, এই দেশের মাটি ছেড়ে আমি যাব না। আল্লাহর ইচ্ছা দেখেন, আমি দেশ ছেড়ে যাইনি কিন্তু মঈন-ফখরুদ্দিন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আজকে বুঝতে হবে দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করে, দেশের সঙ্গে বেঈমানি করে কোনোদিনও কিন্তু আল্লাহর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।
বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই আওয়ামী লীগ বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। এখন দরিদ্র মানুষের সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা। সাধারণ মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। পত্রিকায় দেখলাম বিনা টেন্ডারে চাল আমদানি করা হচ্ছে। সেই চাল আমদানি করে কি গরীব মানুষকে কম মূল্যে দেয়া হবে নাকি চালের অর্ধেক টাকা পকেটে যাবে। বাকি টাকা যাবে আওয়ামী লীগওয়ালাদের পেটে কিংবা তারা সেই টাকা পাচার করবে।
অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিন সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ দক্ষিনের নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদীর লুনা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এম এ মালেক, মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, সুলতানা সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজিএম শামসুল হক, খন্দকার জিল্লুর রহমান দক্ষিনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে শামসুল হুদা, ইউনুস মৃধা, মীর হোসেন মীরু, নাসিমা আখতার কল্পনা, সাজ্জাদ জহির, মোশাররফ হোসেন খোকন, মো. মোহন, জয়নাল আবেদীন রতন, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি, সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইদুর রহমান মিন্টু, আবদুল হাই পল্লব প্রমূখ। ২০ দলীয় জোটের অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গরীবে নেওয়াজ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়াসহ নেতারাও অংশ নেন।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।