ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক:বাংলাদেশকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠেছে ভারত। আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তারা বাংলাদেশের করা ২৬৪ রান তারা ৫৯ বল বাকি থাকতেই ছাড়িয়ে যায়। মাশরাফি মর্তুজা একটি উইকেট নিয়েছিলেন।
রোহিত শর্মার ১২৩ এবং বিরাট কোহলি অপরাজিত ৯৬ তাদের সহজ জয় এনে দেয়। এছাড়া শিখর ধাওয়ান করেছিলেন ৪৬ রান।
এর আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে জয়ের জন্য ২৬৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। বার্মিংহামের এডজবাস্টনে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬৪ রান করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে তামিম ইকবাল ৭০, মুশফিকুর রহিম ৬১, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অপরাজিত ৩০ রান করেন।
সেমিফাইনালের মঞ্চে টস ভাগ্যে হেরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। এতে যে মাশরাফিদের পরিকল্পনায় ছেদ পড়ে, তা টস হারের পর টাইগার দলপতির ভাষ্য সেটি বলে, ‘আমাদের পরিকল্পনায় প্রথমে বোলিং ছিলো।’ কিন্তু টস জিতে প্রথমে বোলিং নেয় ভারত।
ব্যাটিং-এ নেমেই ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে শূন্য হাতে বিদায় নেন বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকার। ভারতের পেসার ভুবেনশ্বর কুমারের ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট ভাঙ্গে সৌম্যর।
এরপর উইকেটে যান তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান। ভারতীয় বোলারদের চাপ সৃষ্টি করতে নিজের প্রথম মুখোমুখি হওয়া বলেই বাউন্ডারি হাকাঁন সাব্বির। এখানেই থেমে যাননি সাব্বির। এরপর দর্শনীয় আরও ৩টি চার মেরেছেন, সাহস যুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। তাই সাব্বিরকে দিয়ে ভারতীয় বোলারদের লাইন-লেন্থহীন করার ছক কষে ফেলেন অন্যপ্রান্তে থাকা আরেক ওপেনার তামিম। এক প্রান্ত আগলে তামিম ছিলেন ধীর।
কিন্তু তামিম-সাব্বিরের সেই পরিকল্পনা নসাৎ করে দেন ভুবেনশ্বর। ১৯ রান করা সাব্বিরকে বিদায় দেন ভুবি। ২১ বল মোকাবেলা করে ৪টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান সাব্বির।
দলীয় ৩৬ রানে সাব্বির ফিরলে, উইকেটে তামিমের সঙ্গী হন উইকেটরক্ষক মুশফিক। উইকেটে সেট হতে শুরুতে দেখেশুনে খেলেছেন তারা। সেটি কাজে লেগেছে, তাই বড় জুটি গড়ার সাহস পেয়ে যান তামিম-মুশফিকুর।
এ উইকেট জুটিতে ভারতীয় বোলার সকল পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিয়েছেন তামিম-মুশফিকুর। তাই তাদের জুটির রান অবলীলায় তিন অংকে পা রাখে। তা করতে গিয়ে নিজের নামের পাশে অর্ধশতকের সংখ্যাও রাখতে পারেন তারা।
এসমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বারবার বোলারদের প্রান্ত পরিবর্তন করেও মুখে চওড়া হাসি হাসতে পারছিলেন না তিনি। তাই ২৬তম ওভারে অকেশনাল বোলার হিসেবে কেদার যাদবকে আক্রমণে নিয়ে আসেন কোহলি। প্রথম ওভারে ৬ রান কেদার। তারপরও তাকে দিয়ে জুয়া খেললেন কোহলি। তাই ২৮তম ওভারেও কেদারের হাতে বল তুলে দিলেন কোহলি।
আর তাই কোহলির জুয়ার কাছেই হার মানেন তামিম। ২৮তম ওভারের চতুর্থ-পঞ্চম বলে রান নিতে না-পারায় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন তামিম। তাই পরের ডেলিভারিটি বুদ্ধিমত্তার সাথে করেছিলেন কেদার। সেটি মিড-উইকেট দিয়ে মারতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হন তামিম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮২ বলে ৭০ রান করেন তামিম। সেই সাথে এবারের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় নিজের নামও তুলে এই বাঁ-হাতি।
মুশফিকুরের সাথে তৃতীয় উইকেটে ১২৭ বলে ১২৩ রান যোগ করেন তামিম। তার বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন মুশফিকুর। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা কারনে। জাদেজা ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে ১৫ রানে থামিয়ে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
১৮২ রানে চতুর্থ উইকেট পতনে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন তামিমকে শিকার করে ভারতকে ব্রেক-থ্রু এনে দেয়া কেদার। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া মুশফিকুর এবার শিকার হন কেদারের। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৮৫ বলে ৬১ রান করেন মুশি। তার ইনিংসে ৪টি চার ছিলো।
৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ১৮৪ রানে উপরের সারির সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান ফিরে যাবার ফলে বাংলাদেশের রান ভালো অবস্থায় নিয়ে যাবার দায়িত্ব লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু নিজেদের দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন। ছোট-ছোট দু’টি ইনিংস খেলে থেমে যান মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক। মাহমুদুল্লাহ ২৫ বলে ২১ ও মোসাদ্দেক ২৬ বলে ১৫ রান করেন।
মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক ফিরে যাওয়ায়, বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশ’ পৌঁছায় কি-না এটি নিয়ে জাগে প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মাশরাফি। আট নম্বর ব্যাট হাতে নেমে ৫টি বাউন্ডারিতে ২৫ বলে অপরাজিত ৩০ রান করে বাংলাদেশের স্কোর ৭ উইকেটে ২৬৪ রানে পৌঁছে দেন ম্যাশ। শেষদিকে মাশরাফিকে সঙ্গ দিয়েছেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। ১টি চারে ১৪ বলে অপরাজিত ১০ রান করেন তাসকিন। ভারতের ভুবেনশ্বর-বুমরাহ-কেদার ২টি করে উইকেট নেন।