প্রকাশ : ২১ জুন ২০১৭,
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা এসব কথা বলেন। এদিন প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলাম, পঙ্কজ দেবনাথ, মোতাহার হোসেন, জিল্লুল হাকিম, মিসেস লুৎফুন্নেছা, শাহজাহান কামাল, একেএম রহমতুল্লাহ, ফরিদুল হক খান, শামসুজ্জামান দুদু, পিনু খান, ইলিয়াছ মোল্লা, জিয়াউল হক মৃধা প্রমুখ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রস্তাবিত বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সমালোচনা করে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি করেন। বাবলু বলেন, জনগণের দেয়া কর থেকে দুই হাজার কোটি টাকা উনি (অর্থমন্ত্রী) ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি পূরণে দিচ্ছেন। মানুষের টাকা দিয়ে লুটপাটের টাকা পূরণ করছেন। এটা কোনো নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। এটা অনৈতিক কাজ। উনি নৈতিকতা ও আইনবিরোধী প্রস্তাব কীভাবে করেন? ‘লুটের টাকার ঘাটতি’ পূরণে করদাতাদের দেয়া অর্থ খরচের অধিকার অর্থমন্ত্রীর নেই মন্তব্য করে বাবলু বলেন, এর জন্য তো উনাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অর্থমন্ত্রীকে এ জন্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অফেন্সের চার্জ (ফৌজদারি অপরাধে বিচার) আনা উচিত বলে আমি মনে করি। মুহিতের উদ্দেশে বিরোধী দলের এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘আপনি বিদায় নিন। পদত্যাগ করুন। সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিন। আপনার অনেক বয়স হয়েছে। আপনাকে সম্মান করি। বিদায় নিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দিন।’ জাতীয় পার্টির সিনিয়র এ নেতা বলেন, এ ধরনের প্রস্তাব কোনোভাবেই উনি (অর্থমন্ত্রী) করতে পারেন না। এই টাকা উনি শিক্ষা-স্বাস্থ্য বা অন্য কোনো খাতে দিতে পারতেন। কেন আপনি দুই হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে দেবেন? অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আগের তিন অর্থবছরও আপনি টাকা দিয়েছেন। সরকার তাদের টাকা দিতে যাবে কেন? অর্থমন্ত্রীর এই টাকা দেয়ার কোনো অধিকার নেই।
জিয়াউদ্দিন বাবলু উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠি নিয়ে আলোচনা করেন। শুধু প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী মিথ্যার বেসাতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে, সত্যকে আলিঙ্গন করার সাহস থাকতে হবে। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সুফল পাবে না।
ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে ‘অক্সিজেন দিয়ে’ রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা হয়েছে। খেলাপি ঋণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে আছে। এর মধ্যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। কার টাকা অবলোপন করছেন? মানুষের টাকা লুট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নেই। এসব টাকা আদায় হলে ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলেও মন্তব্য করেন বাবলু।
তিনি আরও বলেন, এসব লুটপাট কারা করছে? এরা কি আপনাদের চেয়ে, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? কেন তাদের আইনের আওতায় আনবেন না? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দুদক নাকি তার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। সোনালী, রূপালী জনতা সব ব্যাংকের অবস্থা করুণ, এমন মন্তব্য করে বিরোধী দলের এ সংসদ সদস্য বলেন, শেয়ারবাজার লুট হয়েছে, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। অথচ এটা জানার অধিকার সবার আছে। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলব, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন, সবাইকে জানান, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
‘বিচিত্র দেশের বিচিত্র মন্ত্রীর বিচিত্র বাজেট’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বাবলু বলেন, তিনি নিজেকে প্রতারিত করেছেন। দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ বাজেট উন্নয়নের মহাসড়কে, নাকি দুর্গতি-দুর্যোগের মহাসড়কের, সেটা বিবেচনার বিষয়। ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এ সংসদ সদস্য বলেন, ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ভুল বার্তা দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ শুল্কের নাম পরিবর্তন করবেন। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলে কানা ছেলে কানাই থাকে। চালের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে বাবলু বলেন, এক বছরে মোটা চালের দাম ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। মানুষ চাল কিনতে পারছে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে গণতন্ত্র ও সুশাসন থাকলেও, এখন তা নেই বলে দাবি করেন তার দলের এ সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, সুশাসন না থাকলে উন্নয়নের সুফল মানুষ ভোগ করতে পারবে না।
জাতীয় পার্টির আরেক জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি বলেছেন এটা আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। কিন্তু আমি বলি, এটা এ বছরের শ্রেষ্ঠ তামাশা। স্পিকারের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই, মাফ চাই। দয়া করে আমাদের মুক্তি দেন। আমরা আর আপনার কাছে বাজেট চাই না। কি বাজেট আপনি দেবেন? এটা কি ভোটের বাজেট? আগামী বছর তো ভোট। নাকি ভোট নষ্ট করার বাজেট দিয়েছেন। ভোটারদের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করেছেন। ভোটারদের ওপর ভ্যাট ধরেছেন। তার পরও ভোট চান। এ দেশের মানুষ এত পাগল! আপনি এখন মানুষের আমানতের ওপর শুল্ক বসানো শুরু করেছেন। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমানোর প্রস্তাব করেছেন। মানুষ টাকা রাখবে কোথায়? মানুষ কোথায় কার কাছে টাকা রাখবে? ব্যাংকে রাখতে পারবে না। টাকা কি বিদেশে নিয়ে যাবে। বিদেশে তো বড়লোকেরা টাকা নিয়ে যায়। গরিবের টাকা থেকে টাকা কাটবেন। অথচ ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। আর অর্থমন্ত্রী লুটেরাদের প্রটেকশন দিচ্ছেন।
বিরোধী দলের এ সংসদ সদস্য বলেন, বড়লোকেরা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আর আপনি গরিবের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ব্যাংকে ভর্তুকি দেন। জনগণের ওপর ট্যাক্স বসিয়ে লুটেরাদের ভর্তুকি দেবেন, এটা হবে না। এ সময় শেয়ারবাজারের কারসাজির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অর্থমন্ত্রীকে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সৎসাহস থাকলে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন। সেই তদন্ত রিপোর্ট তো আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না। তদন্তে আপনাদের সব লোকের নাম এলো। কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না। আপনি ব্যবস্থা না নিলেও জনগণ সময় এলে ঠিকই ব্যবস্থা নেবে। তারা সময়ের অপেক্ষা করছেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির ওপর কর বাড়ানোর কঠোর সমালোচনা করে ফিরোজ রশীদ বলেন, গ্রামের মানুষ সূর্য ওঠার আগে যখন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে মাঠে হালচাষ করতে যান, তখন শীতের মধ্যে জমে যাওয়া শরীরকে চাঙ্গা করতে বিড়িতে টান দেন। আপনি নিন্ম আয়ের এসব মানুষের এই পণ্যটির ওপর বেশি কর আরোপ করেছেন। অথচ বড়লোকদের দামি দামি অনেক জিনিসের ওপর কর কমিয়েছেন। আমার কৃষকরা যখন মাঠে গিয়ে হালচাষ করে, দেশের খাদ্য উৎপাদন করে, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখে, তখন বড়লোকেরা গায়ে কম্বল দিয়ে ঘুমায়।
কৃষি উপকরণের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবেরও তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন, পাওয়ার টিলার, সেচযন্ত্র, শ্যালো ইঞ্জিনসহ অনেক কিছুর ওপর কর ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি ভুলে গেছেন, আমরা কৃষি প্রধান দেশ। এ সময় সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, শ্যালো ইঞ্জিনে কর ধরছেন। ইঞ্জিন কিন্তু চলবে না। ইঞ্জিন না চললে নৌকা বন্ধ হয়ে যাবে।
সাবেক এই মন্ত্রী বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে থাকা মন্ত্রীদের সমালোচনা করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর অনেক মন্ত্রীকেও সমালোচনা করতে শুনলাম। বাজেট তো আগে মন্ত্রিপরিষদে পাস হয়। আমাদের মন্ত্রীরা কেবিনেটে তা পাস করেছেন। জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার তাদের নেই। এ সময় বাজেট অধিবেশনে না থেকে মন্ত্রিদের ঘন ঘন বিদেশ সফরেরও সমালোচনা করেন তিনি।
ব্যাংক মালিকরা টাকার বস্তা কোথায় পান?
ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকের মালিকদের দেখি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে শত শত কোটি টাকা দিয়ে আসেন। তারা এই টাকার বস্তা কোথায় পান? এসব তো জনগণের টাকা। জনগণের টাকা দিয়ে বস্তায় বস্তায় দান করবেন, আর বড় বড় দাড়ি মুখে নিয়ে পত্রিকায় ছবি ছাপাবেন, এটা কেমন কথা। তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়ীর দুই হাত। একটি হাত প্রধানমন্ত্রীর দিকে আরেকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) দিকে। এরা ব্যাংক গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে গোপন সার্ভিস চার্জ কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে। আর ক্ষমতাসীনদের খুশি রাখার প্রতিযোগিতা করে। বছরে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পত্রিকায় তাদের ছবি আসে।
এবারের বাজেট স্লোগানকে কেন্দ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন- ‘সময় এখন আমাদের।’ সময় তো আপনাদেরই। ক্ষমতায় যখন আছেন সময়তো আপনাদেরই থাকবে। এই ভেবে নিজেদের শক্তিশালী ভাবছেন। প্রকৃতপক্ষে সময় আরও বেশি শক্তিশালী। অপেক্ষা করুন, সময় মতো জবাব পাবেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের মহাসড়ক এখন পানি উঠে ডুবে গেছে। ফিরোজ রশীদ বলেন, দুই চোখ দিয়ে মানুষ সাড়া পৃথিবী দেখে। কিন্তু এই চোখেই যখন ময়লা পড়ে, তখন সে কিছুই দেখতে পারে না। আপনাদের চোখে ক্ষমতা ঢুকে গেছে। এখন কিছুই দেখছেন না।
এ সময় ট্যাক্স ফরমের দীর্ঘসূত্রতার কথা উল্লেখ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, এর আগে ট্যাক্স দেয়ার জন্য আমি দুই পাতার একটি ফরম পেতাম। এবার পেয়েছি চার পাতার একটি ফরম। আমি অর্থমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, তিনি যদি সারা দিনে এই ফরমটি পূরণ করে শেষ করতে পারেন, তাহলে আমি সংসদ থেকে বের হয়ে চলে যাব। তিনি বলেন, এসব ঘোরপ্যাঁচ দেয়া ফরম পূরণের জন্য মানুষকে আইনজীবীর কাছে যেতে হয়। আইনজীবীকে বিল দিতে হয় ৫০ হাজার, সরকারি দফতরে ঘুষ ২০ হাজার এবং সবশেষে সরকারের অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার ট্যাক্স বিল আসে পাঁচ হাজার টাকা। এভাবেই সরকার জনগণের কাছ থেকে প্রকৃত ট্যাক্স পায় না।
বাজেট আলোচনায় ফিরোজ রশীদ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যারা মিছিল করেছেন তাদের ‘শাহবাগী’ অভিহিত করে বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কওমি স্বীকৃতির বিষয়ে তার মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী কঠোর সমালোচনার পরও বহালতবিয়তে মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। সত্যিই বিচিত্র এই দেশ।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকারি দলের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পত্রিকায় দেখলাম মির্জা ফখরুল বলেছেন তিনি না-কি মরেও যেতে পারতেন। এই সংস্কৃতি কারা শুরু করেছে? ১৯৮০ সালে ক্ষমতায় থাকতে তার মন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতান নিউমার্কেট মোড়ে দাঁড়িয়ে ও পুলিশ পাহারা দিয়ে তার (ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ) পায়ের রগ কেটেছিলেন। তার পিঠে ছুরি মেরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েও খালেদা জিয়া অন্যায়ভাবে সেনানিবাসের বাড়িতে ছিলেন। তাকে উচ্ছেদ করার সময় তিনি কেঁদেছিলেন। এটা কী তার পৈতৃক সম্পত্তি? না-কি তার খরিদ করা বাড়ি ছিল। একইভাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অবৈধভাবে ৫০ বছর গুলশানের বাড়ি দখল করেছিলেন। আদালতের নির্দেশে তাকে সেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। এখন খালেদা জিয়া বলছেন, সুযোগ এলে না-কি আমাদের এক কাপড়ে বিদায় করবেন। আমরা বলছি না এক কাপড়ে। তবে মনে হয়, তাকে প্রসাধনী ছাড়াই এ দেশ ছাড়তে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী প্রজেক্টরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের ভিডিওচিত্র তুলে ধরেন। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা এই ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন কিনা জানতে চান। সবাই পারবেন বলে মন্ত্রী জানান। এ ছাড়া ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পের ভিডিওচিত্রও তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্যও ফ্ল্যাট প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সম্পদের অপ্রতুলতা রয়েছে। তার পরও এই বাজেটের মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পৌঁছানো সম্ভব। তিনি বলেন, সংসদের ভেতরে বাইরে প্রস্তাবিত বাজেটের আলোচনা-সমালোচনা করা হচ্ছে। এই বাজেটের জন্য কোনো কোনো জায়গা থেকে অর্থমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু এটাই চূড়ান্ত বাজেট নয়। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গ পিছিয়ে পড়েছে অনেক আগে। সেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে তুলে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের সুষম উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। তাকে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান ভূমিমন্ত্রী।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ প্রস্তাবিত বাজেটে আবগারি শুল্কসহ অন্যান্য কর বাড়ানোয় স্যাবোটাজ হচ্ছে কিনা- এমন মন্তব্য করে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগেও আবগারি শুল্ক ছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনের আগের বছর তা ৩০০ টাকা বাড়ানো হল। অন্যান্য করও বাড়ানো হল। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যারা বাজেটে কাজ করেছেন তারা কোনো স্যাবোটাজ করেছেন কিনা? কেন আমরা বিএনপি, বিরোধী দল এবং মিডিয়ার হাতে অস্ত্র তুলে দিলাম! তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী পরপর দুই অর্থ বছরে মঠ-মন্দিরের জন্য ২০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও দিলেন না। এদিকে অর্পিত সম্পত্তি আইনে হিন্দুরা এখনও কোনো সম্পত্তি ফেরত পাননি। মামলায় জেতার পরও অন্তত পাঁচজন ডিসি আপিলের বিধান না থাকার পরও এজন্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়ার ঔদ্ধত্য দেখান কী করে? তিনি রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজানো নাটক কিনা তা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকারের উদ্দেশে চারটি কবিতা পাঠ করে শোনান ফিরোজ রশীদ।