ক্রাইমবার্তা রিপোট:: স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের সময়ে দেশে মোট ১৩ হাজার ৫৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে গত আট বছরেই উৎপাদন ক্ষমতা আট হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট বেড়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছেন।
অর্থাৎ, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৬১ শতাংশই অর্জিত হয়েছে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।
বুধবার সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে আওয়ামী লীগের এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা বর্তমানে (ক্যাপটিভসহ) ১৫ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। কিছু পুরোনো কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে বাতিল হওয়ায় বর্তমানে ১৩ হাজার ১৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
কখন কত কেন্দ্র স্থাপন
>> ১৯৭২-১৯৮১: মোট ২৮৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
>> ১৯৮২-১৯৯০: এক হাজার ৫৮৮ মেগাওয়াট
ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
>> ১৯৯১ সালের মার্চ-১৯৯৬ সালের মার্চ: ৫৮৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
>> ১৯৯৬ সালের জুন-২০০১ সালের জুলাই: এক হাজার ২০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
>> ২০০১ সালের অক্টোবর-২০০৬ সালের অক্টোবর: এক হাজার ২৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
>> ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে-২০০৮ সালের ডিসেম্বর: ৩৪৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র স্থাপন।
>> ২০০৯ সালের জানুয়ারি- ২০১৭ সালের মে: আট হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
জাতীয় সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতবছর ৩০ জুন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রথমবারের মত নয় হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করে।
আর চলতি বছর ২৭ মে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। তবে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় ওইদিনও ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি ছিল।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন আড়াই গুণ বাড়লেও বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর কাছে নতুন সংযোগ পৌঁছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়ে চলেছে। ফলে গরমের সময় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল, এখন তা বেড়ে ৮০ শতাংশ হয়েছে।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নেওয়া পরিকল্পনার অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বর্তমানে সরকারি খাতে ছয় হাজার ৭০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে চার হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারি খাতে দুই হাজার ৭৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি এবং বেসরকারি খাতে দুই হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সর্বমোট চার হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াধীন।
সরকারি খাতে ছয় হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ১১টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথও প্রধানমন্ত্রী সংসদে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আগামী জুলাইয়ে ভারত থেকে আরও পাঁচশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে আরও এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।