ফুরফুরার পীর মাওলানা তোহা সিদ্দিকী বলেছেন, “আমার সব ভক্তদের বলবো, বাংলার সব মুসলমান ভাইদেরও বলবো, আপনারা কালো ব্যাজ পড়ে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়ুন”।
অনেকদিন ধরে দাবি করা সত্ত্বেও ঈদের সময়ে দুই দিন ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ হিন্দুদের উৎসবগুলোতে ছুটির বহর বেড়েই চলেছে – এমন অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদ জানাতে কালো ব্যাজ পরার কথা বলছেন ফুরফুরা পীর মাওলানা তোহা সিদ্দিকী।
তবে রাজ্যেরই এক মন্ত্রী ও মুসলিম নেতার এই আহ্বানকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে মন্তব্য করছেন বলে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়।
যদিও আরেকটি মুসলিম সংগঠন বলছে, তোহা সিদ্দিকীর দাবির সঙ্গে একমত হলেও খুশির ঈদে কালো ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদ জানানোর পক্ষপাতী নন তারা।
তোহা সিদ্দিকী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছে দাবি করে আসছি যে, ঈদের দিন অন্তত দু’দিন করে ছুটি দেওয়া হোক। তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনন।”
“অথচ হিন্দু ভাইয়েরা না চাইতেই দুর্গাপূজা, কালিপূজা বা ছোটপূজায়ও লম্বা ছুটি পাচ্ছেন। উনাদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে সেটা স্বাগত, আমরা খুশি। কিন্তু মুসলমানদের উৎসবের ছুটি কেন একদিন করে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না?”- প্রশ্ন তোলেন ফুরফুরার পীর।
তিনি আরও বলেন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব রোজার ঈদ আর কোরবানি ঈদ। বহু মুসলমান বাইরে কাজ করেন, তবে ঈদের সময়ে বাড়ি ফেরেন। একদিনের মধ্যেই তাদের উৎসবের ছুটি কাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে হয়।
“মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই বলেন যে, তিনি সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু – উভয়েরই মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সংখ্যালঘু হিসেবে আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না,” বলছিলেন তোহা সিদ্দিকী।
এরই প্রতিবাদ জানাতে তিনি নিজে কালো ব্যাজ পড়ে ঈদের নামাজ পড়বেন বলেও জানান।
তবে তোহা সিদ্দিকীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক রয়েছে, এমনটাই সবাই জানেন। তবুও মমতা ব্যানার্জীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে এরকম একটা প্রতিবাদ কেন তিনি করছেন?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তোহা সিদ্দিকী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক থাক বা না থাক, একজন ধর্মগুরু হিসাবে মুসলমানদের সুবিধা-অসুবিধাটা তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। তার জন্য সত্য কথাটা বলতে আমার কোনও সমস্যা নেই।”
তবে রাজ্যের মন্ত্রী ও জামিয়াত-এ উলামা-এ হিন্দের নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ঈদের দিনে কালো ব্যাজ পড়ার ডাক দেওয়াটা দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
“এতে সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আর শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতেই ঈদে একদিনই ছুটি থাকে।”
“বরং মমতা ব্যানার্জী গত বছর ঈদের দু’দিন ছুটি দিয়েছিলেন। আবেদন করলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে যদি খুশির ঈদের দিন কেউ কালো ব্যাজ পড়ার কথা বলেন, তাহলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া আর কী বলব একে?” – বলছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।
তবে ঈদে একদিন ছুটি পাওয়াটা যে মুসলমানদের সত্যিই অসুবিধার কারণ, সেটা মানছেন অনেকেই।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের প্রধান মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের কথায়, “এটা ঠিকই যেসব মুসলমান বাইরে কাজকর্ম করেন, তাদের পক্ষে একদিনের জন্য বাড়ি গিয়ে উৎসব সেরে আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়া কঠিন”।
“দু’দিন ছুটি তো দেওয়াই উচিত। কিন্তু খুশির ঈদের দিন কোনও রকম প্রতিবাদ বা কালো ব্যাজ পড়াটাও আমরা মানতে পারবো না। খুশির দিনে কেন শোকজ্ঞাপনের প্রতীক কালো ব্যাজ পড়বো? এটা তো শরিয়ত সম্মত নয়।”
শুধু কর্মরত ব্যক্তিরাই নন, যে সব ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন, তাদেরও একদিনের মধ্যে ঈদের উৎসব শেষ করে ফিরে আসা কঠিন হয় বলে মনে করেন কামরুজ্জামান।