শনিবার সকালে নয়, মজনু ফিরেছেন দুপুরের পর। দেখা হয়েছে মায়ের সঙ্গে, কিন্তু মজনু এখন লাশ!
ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাগান কালিবাড়ি এলাকায় ট্রাক উল্টো ১৭ জনের মধ্যে মজনু’র মৃত্যু হয়। নিহত মজনুর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বত্রিশ হাজারী গ্রামে।
তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর বত্রিশ হাজারী গ্রামে। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, মজনুর দেশী মুরগীর মাংস বেশ পছন্দ। তাই ছেলে ছুটি পেয়েছে শুনে বাড়ির বড় মুরগীটা জবাই করে রান্না করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে বাড়ি পৌঁছার কথা ছিল মজনুদের। কিন্তু যানজটের কারণে তাদের ট্রাকটি সেহরি করায় সিরাজগঞ্জে।
বগুড়ায় পৌঁছে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয় বাবা, ছেলে ও মায়ের সাথে। ওই ট্রাকে যাত্রী ছিল মজনুর ৮ বছরের চাচাত বোন বন্যাও। সেও মৃত্যু’র মিছিলে সামিল হয়েছে মজনুর সাথে। আহত রয়েছে মজনুর চাচা ঝন্টু মিয়া, চাচি জামিনাসহ অনেকেই।
সরেজমিনে মজনুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মজনুর মা মাহফুজা বেগম ছেলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। জেগে উঠলেও সাথে সাথে সজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন তিনি।
একই গ্রামের কোহিনুর ইসলাম (৪২) ছয় বছর ধরে ঢাকায় কাজ করতেন। একমাত্র মেয়ে কুলসুমের বিয়ের সময় করা ঋণ পরিশোধ করতেই ঢাকায় কাজ শুরু করেন কোহিনুর। সর্বশেষ রমজানে বাড়ি এসেছিলেন। আবারও চলে যান ঢাকায় ঈদের খরচ যোগাতে।
বাসের টিকেট সোনার হরিন। তাই টিকেট জোগাতে ব্যর্থ হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের অন্যদের সাথে ট্রাকে উঠেন কোহিনুর ইসলামও।
বাড়ি ফেরার সংবাদ একমাত্র ছেলে রুবেলের মোবাইলে জানান তিনি। রংপুরের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে নাম আসে কোহিনুরেরও। ছেলে রুবেলের অপেক্ষা শেষ হয় মায়ের লাশ দেখে।
জানা গেছে, পীরগঞ্জে নিহত ১৭ জনের মধ্যে বেশির ভাগের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। নিহতরা বেশির ভাগই ত্রিশোর্ধ্ব। তাদের মধ্যে অধিকাংশ গার্মেন্টস ও নির্মাণ শ্রমিক।
নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ঈদ এখন তাদের পরিবারে কেবল বেদনার নাম। শুরু পরিবার নয়, পুরো এলাকায় বিরাজ করছে শোকের আবহ।