ক্রাইমবার্তা রিপোট:: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। আসিফ নিজেও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। সেই সাথে রংপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিবও ছিলেন।
সম্প্রতি তিনি নিজেকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেন। অপরদিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার কঠোর সমালোচনা করেন। এ ছাড়া দলের চেয়ারম্যান ও নিজের চাচা এরশাদের সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেন দলের সাবেক এমপি আসিফ। ফলে তাকে পার্টির রংপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিবের পদ হারাতে হয়।
এতে তিনি পার্টি ও চাচা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। সেই ক্ষোভ আর অভিমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা পোস্টারে।
পদ হারিয়ে ক্ষোভ আর অভিমানে তিনি নিজের ‘ঈদ মোবারক’ পোস্টার থেকে চাচা এরশাদ ও জাতীয় পার্টির সকল পদপদবি বাদ দিয়েছেন। ঈদ পোস্টারে শুধু সাবেক এমপি পদবি ব্যবহার করেছেন আফিস।
এর আগে গত ১৪ জুন এরশাদের পৈত্রিক নিবাস রংপুর মহানগরীর সেনপাড়ার স্কাইভিউ লাঙ্গল ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন আসিফ। এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যানের ঘোষণা উপেক্ষা করে নিজেকে দলের প্রার্থী ঘোষণা দেন এরশাদের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালুর পুত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
এসময় তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলীয় ষড়যন্ত্রকারী দাবি করে তার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। রাঙ্গার বক্তব্যে এরশাদের পারিবারিক এবং দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, ওই দিনই সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় এ ধরনের বক্তব্য দেয়ায় আসিফকে ‘অর্বাচিন বালক’ দাবি করে তাকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য পার্টির চেয়ারম্যানে কাছে আহবান জানান প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা। না হয় রংপুরে এরশাদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কথাও বলেন তিনি।
এর পর পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের অপর ছোট ভাই জিএম কাদের বলেন আসিফের এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন অপ্রত্যাশিত।
এ ঘটনার পর গত কয়েকদিন থেকে আসিফকে জাতীয় পার্টির সকল পদ পদবি থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে-এমন আওয়াজ ছিল রংপুরে। তার স্থলে জেলা সদস্য সচিব হিসেবে সাবেক কাউন্সিলর আজমল হোসেন লেবুকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও কেউ কেউ বলে আসছিলেন।
সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত ফাইল তৈরি হলেও এরশাদ তাতে সই করেননি। বরং উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ২০ জুন এরশাদ রংপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক করেন। এর ফলে এই কমিটি থেকে বিদ্রোহকারী আসিফ বাদ পড়ে যান।
এরশাদের পলিটিক্যাল এন্ড প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুযায়ী রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। এর বদলে প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক এবং সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারকে সমন্বয়কারীর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তাদেরকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠন করে পার্টির চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ গণমাধ্যমকে বলেন, আসলে অভিমান তারই সাথে করা যায়, যিনি অভিমান বোঝেন। আমি যখন মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেই সেদিনই আমি বুঝেছি যে আমাকে জাতীয় পার্টি থেকে মাইনাস করা হবে। সেজন্য আমি বড় আব্বা (এরশাদ) ও জাতীয় পার্টির কোনও পদ পদবি ঈদের পোস্টারে ব্যবহার করিনি।
তিনি বলেন, আমি যে ঠিক, আমার বক্তব্য যে ঠিক, তা বড় আব্বা এমন সময় বুঝবেন। যখন তার কিছুই করার থাকবে না। যখন তিনি মেয়র পদটি হারাবেন, তখন আফসোস করেও কোনও কাজে লাগবে না।
ঈদের পর কেরামতিয়া মাজার জেয়ারতের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার কথাও জানিয়েছেন।