জানান, শনিবার জন্ম নিলেও, সে চাঁদটা দেখা যাবে না। কারণ তার আলোকিত অংশ এত কম থাকবে যে তা আমাদের চোখে পড়বে না। আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টা একুশ মিনিটে চাঁদের আলোকিত অংশ অনেক বেশি অর্থাৎ ১৪ শতাংশ থাকবে, তা খালি চোখে দেখা যাবে। তা দেখা গেলে আগামীকাল সোমবার আসবে খুশির ঈদ।
ঈদ যে দিনই হোক, রাজধানীবাসী নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন আরও আগেই। গত বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। ছুটি পেয়ে শিকড়ের কাছে ফিরে গেছেন শহুরে মানুষেরা। গ্রামগঞ্জ সবখানে ঈদের পরিচিত দৃশ্য। সড়কে ভোগান্তিতে, যানজট, টিকিটের হাহাকার কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করার ব্যাকুল ইচ্ছার কাছে সব বাধা তুচ্ছ।
ঈদ দুয়ারে, চলছে নতুন জামা-কাপড় কেনার ধুম। ঈদ মানেই যেন নতুন পোশাক। শুধু নতুন কাপড়ই নয়, চাই ভালো খাবারও। মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) সুন্নত হিসেবে ঈদে সবাই মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন। সবাই সেমাই খাবেন তা যেন অবধারিত। বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে গেছে ঈদের খাবার তৈরির ধুম। গরিব-ধনী সবারই চেষ্টা থাকবে সেরা আয়োজনটুকু করতে।
ঈদের খাবার থেকে বাদ যাবেন না কেউ, রোগীদের জন্য হাসপাতালে, এতিমদের জন্য এতিমখানায়, শিশু সদন, ছোটমনি নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র সবখানেই থাকবে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। জেলখানা ও কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলোতেও থাকবে উন্নত খাবার।
ঈদের আসল আয়োজনই হলো নামাজ। ছেলে-বুড়ো সবাই যাবে ঈদগাহে। নামাজের পর ‘দোস্ত দুশমন’ ভুলে গিয়ে বুকে বুক মেলাবে। এ দৃশ্য চিরন্তন। দেশের প্রতিটি ঈদগাহ এর মধ্যেই প্রস্তুত। জাতীয় ঈদগাহও প্রস্তুত। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, এমপি, সামরিক-বেসমারিক কর্মকর্তা, কূটনীতিকরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। এ ব্যাপারে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢাকা মহানগরের ৯৩ ওয়ার্ডে ৪০৬টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করে দুই সিটি করপোরেশন। নামাজ আদায় হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও।
ঈদে বড় শহরগুলো সেজেছে উৎসবের রূপে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতেও করা হচ্ছে আলোকসজ্জা। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, নভোথিয়েটারের মতো বিনোদনকেন্দ্র খোলা থাকবে ঈদে। নইলে যে শিশুদের ঈদই পূর্ণ হবে না।
এত আয়োজন; কিন্তু অনেক গরিবের দুয়ারে আজ ঈদ আসবে না। ঈদ আসবে না হাওরের বন্যার্তদের ঘরে, পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের মানুষের কাছে। তবে সামর্থ্যবানরা ওয়াজিব জাকাত ফেতরা আদায় করলে, ঈদ আসবে সবার কাছে। নজরুলের কবিতার মতোই ‘যার ঘরে ধনরত্ন জমানো আছে,/ ঈদ আসিয়াছে, জাকাত আদায় করিব তাদের কাছে।/ এসেছি ডাকাত জাকাত লইতে, পেয়েছি তাঁর হুকুম,/ কেন মোরা ক্ষুধা তৃষ্ণায় মরিব, সহিব এই জুলুম।’
ঈদ মানেই একে অপরকে আপন করে নেওয়া। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে। মাত্র দেড় বছর পর জাতীয় নির্বাচন। তাই এবারের ঈদকে প্রচারের জন্য বেছে নেবেন অনেকে। নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। বিতরণ করছেন উপহারসামগ্রী। অনেকের নামে করা হয়েছে ব্যানার-তোড়ন ।