শুভ জন্মদিন মেসি

ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক:আর্জেন্টিনার ছোট্ট, সুন্দর এক শহর, নাম রোজারিও। এই শহরের উত্তর দিকে ব্যারিও লাস হেরাসের ছোট্ট, ছিমছাম এক পরিবারে আজ থেকে ৩০ বছর আগে জন্ম নেয় এক শিশু। ছোটবেলা থেকেই শান্ত ও লাজুক ছেলেটির একটাই শখ আর নেশা- ফুটবল। হঠাৎই আট-দশটা শিশুর মত বেড়ে ওঠায় বাধ সাধে গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি নামের বিরশ এক রোগ। ডাক্তাররা জানিয়েই দিয়েছিল তার পক্ষে ফুটবল খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এরপরই মেসির ফুটবল কেরিয়ারের স্বার্থেই আর্জেন্টিনার রোজারিও থেকে বার্সেলোনায় পারি দেয় তার পরিবার। বার্সেলোনা ক্লাব খুদে মেসির চিকিৎসার খরচ নেয়। অনেক ছোট থেকেই লা-মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে শুরু হয় তার ফুটবল প্রশিক্ষণ।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই কারো বুঝতে বাকি নেই কার কথা হচ্ছে! ঠিকই ধরেছেন, লিওনেল মেসি। তার পর থেকে এক-এক করে কাটিয়ে ফেলেছেন ৩০টি বসন্ত। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের আঙিনায় কাটানো এক যুগেরও বেশি সময়ে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড জন্ম দিয়েছেন একের পর এক বিস্ময়ের, জিতেছেন অগনিত শিরোপা, গড়েছেন একের পর এক ব্যক্তিগত রেকর্ড। গতকাল ২৪ জুন ৩০ বছর পূরণ করলেন বার্সেলোনার এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। শুভ জন্মদিন মেসি!
২০০৪ সালের অক্টোবরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেন মেসি। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এই আর্জেন্টাইন ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে কাতালুনিয়ার দলটিকে দিয়েছেন মুঠোভরে, দিয়ে যাচ্ছেন এখনও। ফুটবল জাদুকরের তিরিশতম জন্মদিনে দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য তার জীবনের অধ্যায় সাজিয়েছেন ইমরান মাহমুদ-
একনজরে
লা লিগার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৩৪৯টি) মেসি। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর চেয়ে (২৮৫টি) ৬৪ গোল বেশি।
 বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এরই মধ্যে ৫০৭ গোল করেছেন।
ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক ম্যাচে পাঁচ গোলের কীর্তি গড়েন মেসি (২০১২ সালে, বায়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে)।
এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলও মেসির-সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৩টি।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন ৫৮৩ ম্যাচ, ক্লাবটির ইতিহাসে স্পেনের বাইরের খেলোয়াড়দের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে বার্সেলোনার হয়ে মেসির গোল ৯৪টি। এক ক্লাবের হয়ে কোনো খেলোয়াড় এত গোল করতে পারেনি।
৩০ বছর বয়সী মেসি লা লিগার একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি গত আট মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রতিবারই ৪০ বা তার বেশি গোল করেছেন।
২০১১-১২ মৌসুমের লা লিগায় ৫০ গোল করেন মেসি; যা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
এ পর্যন্ত রেকর্ড পাঁচবার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন মেসি।
লা লিগার ইতিহাসে টানা ২১ ম্যাচে গোল করার রেকর্ডও মেসির।
৪৬৯৮৫-বার্সেলোনার হয়ে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৯৮৫ মিনিট খেলেছেন।
বার্সেলোনার হয়ে মোট ৪১৩ ম্যাচ জিতেছেন। ড্র করেছেন ১০৩ ম্যাচ, হেরেছেন ৬৭টি।
বার্সেলোনার হয়ে করা ৫০৭ গোলের ৪০৮টিই বাঁ পায়ে করেন মেসি। বাঁ পায়ের জাদুকর তাকে এজন্যই বলে। ৭৫টি ডান পায়ে, ২২টি হেড করে আর ২টি অন্যভাবে।
সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১৯৩ গোল।
বছরের বাঁকে-বাঁকে অর্জন-প্রাপ্তি
১৭-বছর বয়সে বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক। ওই বছরই বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোল পেয়েছিলেন। জিতেছিলেন প্রথম লা লিগা শিরোপাও।
১৮-বছর বয়সে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক ও প্রথম গোল, লা লিগায় দ্বিতীয় শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম শিরোপা জয়।
১৯-বছর বয়সে এল ক্লাসিকোয় ৩-৩ ড্র ম্যাচে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন।
২০-পেপ গার্দিওলা বার্সেলোনার প্রধান কোচ হিসেবে আসার পর লা লিগায় তৃতীয় হয় বার্সেলোনা।
২১-বছর বয়সে লা লিগায় তৃতীয়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় ও কোপা দেল রের প্রথম শিরোপা জিতেন তিনি।
২২-বছর বয়সে প্রথম উয়েফা সুপার কাপ, প্রথম ক্লাব বিশ্বকাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপের তৃতীয়, লা লিগায় চতুর্থ শিরোপা জিতেন। এই বয়সেই বার্সেলোনার হয়ে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও জিতেন; নিজের করে নেন প্রথম ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু-ও।
২৩-বছর বয়সে পঞ্চম লা লিগা, তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চতুর্থ স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতার সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেন।
২৪-বছর বয়সে দ্বিতীয় উয়েফা সুপার কাপ, দ্বিতীয় ক্লাব বিশ্বকাপ ও কোপা দেল রে, পঞ্চম স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়। ওই বয়সেই বার্সেলোনার হয়ে ২০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া মেসির অর্জনের ভান্ডারে যোগ হয় তৃতীয় বর্ষসেরা পুরস্কার ও দ্বিতীয় ইউরোপিয়ান গোল্ডেন সু।
২৫-বছর বয়সে লা লিগার ষষ্ঠ শিরোপা, বার্সেলোনার হয়ে ৩০০ গোল, চতুর্থ ব্যালন ডি’অর ও তৃতীয় ইউরোপিয়ান গোল্ডেন সু জয়।
২৬-বছর বয়সে স্প্যানিশ সুপার কাপের ষষ্ঠ শিরোপা জিতেন এবং বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার চূড়ায় পৌঁছান।
২৭-বছর বয়সে লা লিগার সপ্তম, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চতুর্থ এবং কোপা দেল রের চতুর্থ শিরোপার স্বাদ নেন। বার্সেলোনার হয়ে ৪০০ গোলের মাইলফলকেও পা রাখেন।
২৮-বছরে লা লিগার অষ্টম, কোপা দেল রের চতুর্থ, উয়েফা সুপার কাপের তৃতীয় ও ক্লাব বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা জয়। আর্জেন্টিনার ইতিহাসের গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে উঠেন এবং জিতে নেন পঞ্চম বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার।
২৯- বছরে পঞ্চম কোপা দেল রে ও সপ্তম স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতেন। বার্সেলোনার হয়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার পাশাপাশি জিতে নেন চতুর্থ ইউরোপিয়ান গোল্ডেন সু।
৩০- আরো অনেক প্রাপ্তির অপেক্ষায় কাটুক বছরটিও

 

Check Also

আশাশুনিতে ছাত্র শিবিরের আন্তঃ ইউনিয়ন ফুটবল টুর্ণামেন্ট

আশাশুনি প্রতিনিধি।। আশাশুনিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির আশাশুনি উপজেলা শাখার আয়োজনে আন্তঃ ইউনিয়ন ফুটবল টুর্নামেন্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।