ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: খুলনায় গত একমাসে জোড়া হত্যাকাণ্ডসহ ৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনজন রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন, বিএনপির দু’জন ও ইসলামী আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন। এসব ঘটনায় রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
গত এক মাসের মধ্যে খুলনায় প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত ৩১ মে। এদিন ফুলতলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন মিঠু। সর্বশেষ গত ২৪ জুন হত্যা করা হয় সোনা ব্যবসায়ী কমল কৃষ্ণ পালকে (৪০)। এর আগে, ১৪ জুন রাতে গুলি করে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত মোল্লাকে। ২০ জুন রাতে ছাত্রদল নেতা শিবলু মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
দৌলতপুরে নিহত শিবলুর বাবা ফারুকুজ্জামান বাবু মোল্লা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের আগে শিবলুকে বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে খবর আসে শিবলুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে।’
তবে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মী কোনও প্রকার অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের কোনও প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ আছে। শিবলু হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা অভিযোগ মাত্র, এর কোনও ভিত্তি নেই।’
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা শিবলু মোল্লা ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা ইকবাল হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের ড্রেন থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পূর্ব দেয়ানার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম ও ইমাদুল ইসলাম ইমাকে আটক করা হয়েছে।’
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা শিবলু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ও তার ভাই বিপ্লব জড়িত বলে নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে উদাসীন।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মনিরা সুলতানা বলেন, এ পর্যন্ত নগরীর কয়েকটি স্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন, বিএনপির শিবলু, ইসলামী আন্দোলনের ইকবাল হুজুর হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট এলাকায় অধিপত্য বিস্তার নিয়ে। এ সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করা গেলেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২৫ মে রাতে ফুলতলার দামোদরে নিজ অফিসে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের আলী। এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। ৩১ মে মহানগরীর আড়ংঘাটা থানার বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়ের খাল থেকে অজ্ঞাত (৫৫) পরিচয় এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়। ১ জুন মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ১ নম্বর বয়রা ক্রসরোড এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে শেখ মোস্তাক আলী ওরফে হোন্ডার ফকির (৬৪) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। তিনি ইজিবাইক গ্যারেজের ব্যবসা করতেন। একইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীর একটি ইটভাটার ঘাট থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাথাবিহীন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২ জুন রাত ৮টার দিকে মহানগরীর দৌলতপুর আঞ্জুমান রোডের একটি মসজিদের অদূরে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের দৌলতপুর থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ইকবাল সরোয়ারকে (৪৮) গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।বাংলা ট্রিবিউন