দেশের আট জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন গোপালগঞ্জে ছয়জন, সিরাজগঞ্জে চারজন, রাজশাহীতে তিনজন, পাবনায় দুইজন, টাঙ্গাইলে দুইজন, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা ও মৌলভীবাজারে একজন করে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে এসব দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ক্রাইমবার্তা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয়জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- সৌদি প্রবাসী হালিম আকন, তার স্ত্রী আসমা বানু, ছেলে সিহাব ও সুজন এবং শ্যালক বাদল হাওলাদার ও মাইক্রোবাসের চালক (অজ্ঞাত)। তাদের সবার বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরনখোলায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হালিম আকন সৌদি প্রবাসী। তাকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা থেকে বাগেরহাটে ফিরছিলেন।
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আলী নূর বলেন, ‘ঢাকাগামী সেবা গ্রিন লাইনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস ও মাইক্রোবাসটি মহাসড়কের খাদে পড়ে যায়। বাসের নিচে চাপা পড়ে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ১৫ বাসযাত্রী।’
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার রয়হাটি এলাকায় বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-ছেলে ও দাদাসহ ৪ জন নিহত হন। তারা চারজনই মাইক্রোবাসের যাত্রী। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বগুড়া জেলার কাহালুর বামগারা গ্রামের সলেয়মান মিয়া (৬৫), তার পুত্রবধু লিলি আকতার (৩২) ও নাতি সাগর হোসেন (১৪)। তবে নিহত মাইক্রোবাসচালকের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানি বলেন, ‘বগুড়া থেকে ঢাকাগামী মাইক্রোবাস (চট্ট মেট্রো চ-১১-১৮৮৩) ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিপরীতমুখী ঢাকা থেকে আসা কুড়িগ্রামগামী ধানসিঁড়ি পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১১-৫০২৭ নম্বর বাসের সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের ৩ সদস্যসহ ৪ মাইক্রেবাসযাত্রী নিহত হন। আহত হন ৫ জন।’
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর এলাকার রুবেল হোসেনের ছেলে জুনায়েদ (৪), রাজশাহী মহানগরীর রামচন্দ্রপুর কেদুরমোড় এলাকার তুষার হোসেন (২২) ও শাহিন আলী (২০)।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিফজুর আলম মুন্সী ও পবা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট মনিরুল ইসলাম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইক্ষু খামারের সামনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হন। তারা হলেন- আটঘরিয়া উপজেলার আরজোপাড়া গ্রামের হাসিবুর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৫) ও একই উপজেলার দড়ি নাজিরপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে শিপন হোসেন (২৩)।
পাকশী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই গনেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন আশরাফুল ও শিপন। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় দাশুড়িয়া-মুলাডুলি মহাসড়কের ইক্ষু খামারের সামনে হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে তারা ছিটকে মহাসড়কে পড়ে যান। এতে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।’
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাঠানবাড়ি এলাকায় মাইক্রোবাস চাপায় দুই নারী নিহত হন। নিহতরা হলেন- ধনবাড়ী উপজলার নিজবর্ণী এলাকার বাবুল বকুলের স্ত্রী রেবা বেগম (৩২) এবং বেলুটিয়া এলাকার আব্দুল মজিদের স্ত্রী সাহাতন (৫০)।
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, ‘নিহতরা সকালে হাঁটার জন্য বের হন। জামালপুরগামী একটি মাইক্রোবাস উপজেলার পাঠানবাড়ি এলাকায় তাদেরকে চাপা দেয়। ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বেলা ১২টার দিকে বগুড়ার কাহালুর পোড়াপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেল উল্টে সিহান (২০) নামে চালক নিহত হন। এ সময় তার দুই বন্ধু ও এক পথচারী আহত হন।
বগুড়ার ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই আশুতোষ মিত্র বলেন, ‘আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সিহান একটি মোটরবাইকে বন্ধু সাদেকুল ও তাজকে নিয়ে বগুড়ার দিকে আসছিলেন। বেলা ১২টার দিকে তারা কাহালু উপজেলার পোড়াপাড়া এলাকায় পৌঁছান। সামনে ও পিছনে থাকা দু’টি বাস ট্রাক ওভারট্রেকিং করার চেষ্টা করলে সিহান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারী সিরাজুলকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান। এতে চারজন আহত হন। তাদের উদ্ধা করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথেই সিহানের মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সকালে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বাড়াদি ব্রীজের কাছে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আলমসাধু (শ্যালো ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানবাহন) যাত্রী আজিরন নেছা (৬০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের রমজান আলীর স্ত্রী।
নিহতের পারিবারিক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আজিরন নেছা দর্শনা শহর থেকে আলমসাধুতে করে বাড়ি ফেরার পথে বাড়াদি ব্রিজের কাছে পৌঁছায়। এ সময় একই দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল-আলমসাধুর পিছনের দিক থেকে ধাক্কা দিলে আলমসাধু চালক আজিরন নেছ আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উপজেলার বরমচালের সিঙ্গুর এলাকায় পিকআপভ্যান ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে নুরুন্নেছা (৭০) এক বৃদ্ধা নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ৪ জন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দোহা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।